ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে বিপুল সংবর্ধনা

শিবির-বিএনপিকে নির্মূল করতে হবে ॥ মুনতাসীর মামুন

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

শিবির-বিএনপিকে নির্মূল করতে হবে ॥ মুনতাসীর মামুন

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী/রাবি সংবাদদাতা ॥ রাজশাহীতে বিপুল সংবর্ধনায় সিক্ত হয়েছেন যুদ্ধাপরাধী বিচার আন্দোলনের পথিকৃৎ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী কলেজ চত্বরে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য এ শিক্ষাবিদকে সম্মাননা জানায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজশাহীর বিভিন্ন সংগঠন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, ইতিহাস প-িত কয়েকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখার বিষয় নয়। ইতিহাসের জ্ঞানকে ছড়িয়ে দিতে হবে। ইতিহাসবিদকেও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করতে হবে। আজকে ইতিহাসের শিক্ষকদের এত সংগঠন আছে অথচ তারা দেশের জাতীয় তিন দিবস ২৬ মার্চ, ১৫ আগস্ট ও ১৬ ডিসেম্বর পালন করেন না। এগুলো দেশের জনমানুষের অনুষ্ঠান। এগুলো পালন না করলে আমরা মানুষ থাকি না। তিনি বলেন, রাজশাহীতে আসতে অনেকে ভয় পান। অথচ এ সুন্দর শহরটিতে আমি বারবার ছুটে এসেছি। রাজশাহীতে অনেক বধ্যভূমি আছে, যা একসময় শিবির-বিএনপি দখল করে নিয়েছিল। আপনারা আন্দোলন করে তা দখলমুক্ত করেছেন। আজকেও দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শিবির-বিএনপিকে নির্মূল করতে হবে। শিবির-বিএনপি বাংলাদেশে রাজশাহীতে পাকিস্তানী ছিটমহল তৈরি করেছে, আপনাদের সেগুলো মুক্ত করতে হবে। বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকে বলেন তারা গণতান্ত্রিক দল কিন্তু আমি বলি পাকিস্তানী দল। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দল হতে পারে না। তারা জামায়াত নেতা নিজামীর যুদ্ধাপরাধকে সমর্থন করে সমান অপরাধ করেছে। আমাদের ফৌজদারি আইনেও এ কথা বলা আছে। জামায়াতের সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও এদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপি-জামায়াত কী করে এদেশে রাজনীতি করে? খালেদা-গয়েশ্বর কী করে মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করে কথা বলে। সেদিন এর প্রতিবাদে রাজপথ ভরে যাওয়ার কথা ছিল। এ বোধটা থাকতে হবে। আপনাদেরও এর প্রতিবাদ জানানো শুরু করতে হবে। নেতার নির্দেশের অপেক্ষায় থাকলে হবে না। সত্যাশ্রয়ী সাহিত্যিক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন আরও বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াফত করে কল্যাণ ট্রাস্টে দিতে বলেছি। মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছি। এসবের দরকার আছে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের পর গত ৪৪ বছরে ৩০ লাখ শহীদের পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়েছে। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে জমি দেয়া হয়েছে। কী লজ্জার কথা! তবে তরুণ প্রজন্ম যদি চায় তাহলেই এটা সম্ভব। তিনি বলেন, ৩০ লাখ শহীদের ঋণ আমরা শোধ করতে পারব না। তবে দেশের জন্য কাজ করে তা স্বীকার করতে পারব। নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। ’৭১-এর জেনারেশন হিসেবে আমরা যা করতে চেয়েছিলাম সেটা করতে পেরেছি। বর্তমান প্রজন্মকেও তাই করতে হবে। রাজশাহী কলেজে ড. মুনতাসীর মামুনের সংবর্ধনা ও দুই দিনব্যাপী ইতিহাসের বইমেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী রাজশাহী মহানগর শাখা। অনুষ্ঠানে ভাষাসৈনিক আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে ও উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেনÑ রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, কবিকুঞ্জের সাধারণ সম্পাদক কবি আরিফুল হক কুমার ও বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আক্তার রেনী। ড. মুনতাসীর মামুনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান। আলোচকরা বলেন, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন শুধু ইতিহাস লেখেনই না, সৃষ্টিও করতে জানেন। শত নির্যাতনেও তিনি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কলম ধরতে ছাড়েননি। তিনি যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে বলয় তৈরি করেছেন সেভাবে রাজশাহীতেও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাহলেই অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের প্রতি ভক্তিবোধ প্রকাশিত হবে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুনকে ক্রেস্ট ও উত্তরীয় প্রদান করা হয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ, রাজশাহী জেলা উদীচী শিল্পগোষ্ঠী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, আবৃত্তি চর্চাকেন্দ্র, রাজশাহী থিয়েটার, কবিকুঞ্জ, রাজশাহী কলেজ, মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি, চলচ্চিত্র পরিষদ, রাবি মুক্তিযোদ্ধা পরিচালক, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আইবিএসের পরিচালক, জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট, রাজশাহী কারিগরি শিক্ষক সমিতি, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগ, ভিশন-২০২১ রাজশাহী ফাউন্ডেশন, খেলাঘর ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু ডিগ্রী কলেজ, শাহ মখদুম ডিগ্রী কলেজ, ইসলামীয়া কলেজ প্রভৃতি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও কলেজের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়। এর আগে সকাল ১০টায় অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন কলেজ চত্বরে দুই দিনব্যাপী ইতিহাসের বইমেলার উদ্বোধন করেন।
×