ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বনানী কবরস্থানে ড. আর এ গণির দাফন সম্পন্ন

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

বনানী কবরস্থানে  ড. আর এ গণির  দাফন সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে ৩ দফা জানাজা শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. আর এ গণির লাশ বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে বিএনপির নেতাকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে স্ত্রীর কবরের পাশে তার দাফন সম্পন্ন হয়। ড. আর এ গণি স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তিনি তিন মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। এদিকে আর এ গণির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা। শুক্রবার সকালে স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘর থেকে আর এ গণির লাশ ধানম-ির বাসায় নেয়া হয়। এরপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, বিশিষ্ট চিকিৎসক এমআর খান, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এবং আত্মীয়স্বজন সেখানে তার লাশ শেষবারের মতো দেখতে যান। এ সময় তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত¡না দেন। বাদ জুমা সাত মসজিদ রোডের ধানম-ি ঈদগাহ মসজিদে ড. আর এ গণির প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ। বেলা আড়াইটায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ড. আর এ গণির দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজ পড়ান ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আব্দুল মালেক। এতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, অন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, নাজিম উদ্দীন আলম, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ-দফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি, জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য ইজ্জত আলী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ। বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ড. আর এ গণির তৃতীয় জানাজা শেষে বিকেল সোয়া ৪টায় তার লাশ বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। দাফন শেষে তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুকসহ বিএনপি নেতাকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জানাজা শেষে দলের নেতাকর্মীরা তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে তার আত্মার শান্তি কামনায় মোনাজাতে অংশ নেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ড. আর এ গনি এ দেশের একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি যখন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ডাকে বিএনপিতে যোগ দেন, তখন থেকে এই দলের আদর্শ অনুসরণ করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই আদর্শকে সমুন্নত রেখেছেন। তিনি আজীবন জনগণের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। উল্লেখ্য, ধানম-ির নিজ বাসায় ৬ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হন বিএনপির প্রবীণ এ নেতা। ওই দিনই তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। আর ১৩ জানুয়ারি রাত সোয়া ১১টার দিকে তার লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। আর এ গণি জিয়াউর রহমানের সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধানম-ির বাসায় ড. আর এ গণির কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে। শোক প্রকাশ করেছেন খালেদা ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, বর্তমান দুঃসময়ে ড. আর এ গণির পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া দেশ ও দলের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। গণতন্ত্র চর্চার চরম সঙ্কটকালে তার মতো একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের পরামর্শ ও উপস্থিতি ছিল খুবই জরুরী। তিনি বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং বিজ্ঞানী ড. আর এ গণি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে আপোসহীনভাবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন। শুক্রবার এক শোক বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। খালেদা জিয়া বলেন, সুহৃদ এই মানুষটি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিএনপি প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই নিরলসভাবে দেশ ও দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে গেছেন। তিনি জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও বহুদলীয় গণতন্ত্রকে দৃঢ়ভাবে বুকে ধারণ করতেন। খালেদা জিয়া বলেন, কখনই তিনি নীতি ও আদর্শ থেকে কিঞ্চিত পরিমাণও বিচ্যুত হননি। জিয়াউর রহমান ও আমার অকৃত্রিম সহকর্মী হিসেবে ড. গণি কোনরকম দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই একাগ্রচিত্তে কাজ করে গেছেন। তার সুচিন্তিত পরামর্শ ছিল অতীব মূল্যবান। সুসময় ও দুঃসময় উভয়কালেই তিনি নিজেকে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। খালেদা জিয়া বলেন, দলের সঙ্কটকালে তিনি পিছিয়ে থাকেননি, বরং দুঃসাহসের ওপর ভর করে সঙ্কট মোকাবেলায় এগিয়ে এসেছিলেন। স্বাতন্ত্র্যধর্মী এই মানুষটি দেশের গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে একজন ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ধৈর্য, বাক সংযম ও স্পষ্টবাদিতা ছিল তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তিনি ছিলেন এক অনন্য মেধাবী ব্যক্তি। তার শিক্ষাজীবন ছিল অসংখ্য সফলতায় পরিপূর্ণ। একজন কীর্তিমান শিক্ষাবিদ হিসেবে নানামুখী কর্মকা-ে তার মেধা ও মননের প্রতিফলন ঘটত। জ্ঞানদীপ্ত এই মানুষটি সবসময় রাজনীতির সঙ্গে শিক্ষাকে সম্পৃক্ত করতে চাইতেন। খালেদা জিয়া মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকার্ত পরিবারের সদস্য এবং গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
×