ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মানিক সাহা হত্যা মামলার ফের তদন্ত হবে

সাংবাদিক হত্যা মামলার শ্বেতপত্র প্রকাশের প্রতিশ্রুতি তথ্যমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

সাংবাদিক হত্যা মামলার শ্বেতপত্র প্রকাশের প্রতিশ্রুতি তথ্যমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাংবাদিক মানিক সাহা ও সাগর-রুনি হত্যাসহ সাংবাদিক হত্যার সব মামলার অবস্থা উল্লেখ করে শ্বেতপত্রও প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যা মামলার ফের তদন্ত করবে সরকার এ কথাও জানান মন্ত্রী। শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ইনু। ‘বিশিষ্ট সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক সাহার ১২তম হত্যাবার্ষিকীতে এ সভার আয়োজন করে ‘মানিক সাহা হত্যার বিচারপ্রার্থী সাংবাদিক সমাজ’ নামে একটি সংগঠন। জাসদ সভাপতি বলেন, মানিক সাহা হত্যা মামলার আবার তদন্ত চাচ্ছেন আপনারা। তার অর্থ হলো, মামলাটি যথাযথভাবে সাজানো হয়নি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করব, যাতে আবার তদন্ত হয়। মানিক সাহা, সাগর-রুনিসহ যারা নিহত হয়েছেন, তাদের মামলাগুলোর এখন কী অবস্থা, সেসব উল্লেখ করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করার বিষয়ে উদ্যোগ নেব। তিনি বলেন, নির্বিঘœ সাংবাদিকতার স্বার্থে জঙ্গীবাদমুক্ত রাষ্ট্র গড়তে চায় সরকার। কোন অন্যায়ের বিচার না হওয়া অন্যায়কে উৎসাহিত করে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদল হয়েছে, কিন্তু উত্তারাধিকার সূত্রে সাম্প্রদায়িকতার জঞ্জালে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হচ্ছে আমাদের। সাংবাদিক রাহুল রাহার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক সাংবাদিক শাহ আলমগীর, ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ প্রমুখ। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এসব হত্যাকা-ের বিচার চাই আমরা। রাষ্ট্রকেই এ দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলেই মৌলবাদী, জঙ্গীবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তাদের এ দেশ থেকে দূর করতে পারব। মানিককে হত্যা করা হয়েছিল, সবাইকে সাবধান করতে। এটা বোঝাতে, বাড়াবাড়ি করলে তোমাদেরও এ অবস্থা করা হবে। বামপন্থীদের ওপরই এ ধরনের আক্রমণ প্রথম ও বেশি হয়েছিল বলে বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরেন সিপিবির সভাপতি। তিনি বলেন, ভুলে যাওয়ার খেসারত সবাইকে দিতে হয়। ইতিহাস আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়। সাংবাদিকতার আদর্শিক কারণেই মানিক সাহাকে হত্যা করা হয়েছিল অভিযোগ করেন কলামিস্ট আবুল মকসুদ। তিনি বলেন, দেখা গেছে, গত ১০-১৫ বছরে যেসব সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই সীমান্ত এলাকার। মানিক যদি জমিজমা, টাকা-পয়সা নিয়ে নিহত হতেন, তাহলে কিছুই বলার ছিল না। কিন্তু তিনি নিহত হয়েছেন আদর্শের কারণে। মানিক লড়াই করেছেন- চিংড়ির ঘের নিয়ে, মৌলবাদিতা প্রসঙ্গে, সুন্দরবন রক্ষায়। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র তার পাশে ছিল না। বিচার-বিবেচনা করে দেখেছি, মানিকের অন্যতম হত্যাকারী রাষ্ট্রব্যবস্থা। পেশাগত কারণে গত ২০-২৫ বছরে নিহত সাংবাদিকদের তালিকা করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে তথ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। ৪-৫ জনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে এ কাজ করার পরামর্শও দেন তিনি। মকসুদ বলেন, রাষ্ট্রকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। কেউ কেউ হত্যাকা- ঘটায়নি, কিন্তু হত্যাকারীকে বাঁচাতে তৎপর ছিল। ব্যবস্থা নিতে হবে তাদের বিরুদ্ধেও। মানিক সাহার সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠতার কথা উল্লেখ করে সাংবাদিক রাহুল রাহা বলেন, আজ সুন্দরবনে যে পর্যটন ব্যবস্থা চালু রয়েছে তা মানিক সাহার অবদান। মানিক সাহা বলতেন, নিপীড়িত মানুষ কোথাও যখন সুবিচার পায় না, তখন তারা গণমাধ্যমের কাছে যায়। শেষ পর্যন্তও মানুষ রাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িত থাকে কেবল গণমাধ্যমের কারণে। গণমাধ্যমের গুরুত্ব তাই অনেক। এসব বলেই তিনি আমাকে সাংবাদিকতায় আনেন। বক্তারা বলেন, খুনি এরশাদ শিকদার আওয়ামী লীগে যোগ দিলে মানিক সাহা সেই সত্য প্রকাশ করেন বলিষ্ঠ সাহসিকতায়। যার ভিত্তিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরশাদ শিকদারকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। সাংবাদিক হত্যাকা-ে সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় অনুষ্ঠানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বক্তারা।
×