ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিজানুর রহমান বেলাল

‘ঈক্ষণ’ সময়ের বেজে ওঠা মনব্যঞ্জনা

প্রকাশিত: ০৭:০২, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

‘ঈক্ষণ’ সময়ের বেজে ওঠা মনব্যঞ্জনা

সাহিত্য-শিল্প চিন্তা প্রকাশের রুচিশীল ছোটকাগজ ‘ঈক্ষণ’। রুচিশীল চিন্তা প্রকাশ বিষয়ক মতাদর্শের ছোটকাগজ ‘ঈক্ষণ’। ছোটকাগজের পথপরিক্রমা যদি উদ্দেশ্যহীন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য হয়, সেই ক্ষেত্রে ছোটকাগজের মনস্তাত্ত্বিক প্রকাশ প্রশ্নের কাঠগড়ায় দাঁড়ায়। বিজ্ঞাপনের প্রতি সম্পাদকের আত্মসমর্পণ ছোটকাগজের নৈতিকতা নিষ্পেষিত হয়। প্রাচীন প্রথাতত্ত্বে কলঙ্কের কালিমা লাগে। বর্তমানে বাজারি ছোটকাগজের প্রকাশস্রোতে প্রতিনিয়ত বাজারি লেখক সৃষ্টির প্রবণতা চোখে পড়ে। আবার উল্টাপাশে প্রকৃত জাতকাগজের স্বীকারোক্তি বরাবরই স্বচ্ছ হয়। মূলমন্ত্র তাদের, জাত তরুণ লেখক আবিষ্কার। ‘ঈক্ষণ’ অক্টোবর-২০১৫তে ২৭তম সংখ্যার প্রকাশ। এই সংখ্যা দীর্ঘ সময়ের ফসল। এই সংখ্যা দেখলেই এটাই প্রমাণ করে, ‘ঈক্ষণ’ বিজ্ঞাপনের তীক্ষè বল্লমে বিদ্ধ না হয়ে, প্রকৃত মানপূর্ণ লেখক এবং বিষয়তান্ত্রিক চিন্তা নিয়ে পথ চলছে। বলা বাহুল্য, মুক্ত সাহিত্যচর্চার জন্য, সৎ উদ্দেশ্যে যে কাগজ নির্মাণবিলাসী। সেই কাগজ সব সময় ভাল লেখার প্রতি উদারতা ধারণ করে প্রতি পৃষ্ঠায়। নিরীক্ষামূলক লেখার পাশাপাশি নতুন লেখক সৃষ্টিতে নিঃশর্ত স্বাক্ষর রাখে যে কাগজ, সেই কাগজ প্রকৃতজাত ছোটকাগজ। এমন মনোবৃত্তির পরিচর্যা করতে মুক্ত সাহিত্যচর্চার জন্য, সৎ উদ্দেশ্যে ‘ঈক্ষণ’-এর প্রকাশ সচল থাকে সাহিত্যাঙ্গনে। তাহলে বাংলা সাহিত্যের চরণভূমিতে ‘ঈক্ষণ’ স্বাক্ষর রেখে যেতে পারবে নিঃসন্দেহে। এ সংখ্যায় প্রবন্ধ লিখেছেন- ‘গোলাপ ও ভাত এর বিনির্মিত কাব্যভাষা’, বজলুল করিম বাহার। ‘সমালোচিত রবীন্দ্রনাথ’,মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। ‘লিটল ম্যাগাজিন : কখনো বীজতলা কখনো বনস্পতি’, মাহমুদ কামাল। ‘কবিতাকেন্দ্রিক কবিতা’, শোয়েব শাহরিয়ার। ‘মালপড়া’, জ্যাকি ইসলাম। প্রবন্ধের শর্তসাপেক্ষে বিষয় বৈচিত্র্য অনন্য। মননের প্রাখর্যে প্রবন্ধগুলো ঋদ্ধ। চিন্তার ও বিশেষণের গভীরতা, যুক্তির শৃঙ্খলাও নিটোল। পাঠকদের ভাল লাগবে। এ সংখ্যায় তিন পর্বে কবিতা লিখেছেন- মুহম্মদ নুরুল হুদা, মাকিদ হায়দার, মুহম্মদ রহমতুল বারী, রেজাউল করিম চৌধুরী, মাহমুদ হাসান, জাহাঙ্গীর ফিরোজ, গোলাম কিবরিয়া পিনু, মনজু রহমান, ওয়ালী কিরণ, আরিফুল হক কুমার, আহমেদ স্বপন মাহমুদ, শিবলী মোকতাদির, মমিুন মুস্তাফা, কামরুল বাহার আরিফ, ইসলাম রফিক, মিজানুর রহমান বেলাল, নাহিদ হাসান রবিন, শাহানা সিরাজী, অদ্বৈত মারুত, মোহাম্মদ নূরুল হক, চন্দন চৌধুরী, আনিফ রুবেদ, শামীম হোসেন, বিধান সাহা, সানাউলাহ সাগর, রফিকুজ্জামান রনি, নিখিল নওশাদ, থেকে শুরু করে উপল বড়ুয়া পর্যন্ত। উপরের কবির নামের বাইরেও পরিচিত, অল্প পরিচিত অনেক কবি রয়ে গেলেন। এত কবির লাইন দেখে আমার অসংবিধান ভাষ্য- কবিতা নিয়ে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। কেননা সবার কবিতা ঢালাওভাবে মানোত্তীর্ণ, এটা বলার দুঃসাহস আমার নেই। তবে উপরোল্লিখিত অধিকাংশ কবিরই কবিতা স্বতন্ত্র ফরমেটে। কিছু কবিতা সাবলীল এবং সপ্রাণ শব্দ চয়নে, ভাষাশৈলীতে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। আবার কিছু কবিতায়, ভাষাস্তরগত দিক থেকে গতি-সুষমা উজ্জ্বল আত্মিক চৈতন্য- জগত সৃষ্টি করেছেন। কিছু কবিতায় আধুনিকতা, পোস্ট মর্ডানিজম প্রয়োগে বদলে গেছে সনাতন কবিতাচিন্তার রূপ ও রং। তবে যে সব কবির নাম এখানে নেই, তাঁদের কবিতা আমার মন যোগাতে পারেনি। তবুও সব মিলে, সম্পাদক কবিতা বাছাইয়ে মেধার পরিচয় দিয়েছেন। এ সংখ্যায় গল্প লিখেছেন- ‘অদৃশ্য অস্তিত্ব’, হানিফ রাশেদীন, ‘আকাশের চাঁদ’, সজল আহমেদ, ‘একটি অমীমাংসিত কল্পনার খসড়া’, মাসুক হেলাল, ‘নুনের গল্প’, পিন্টু রহমান, ‘হাওড় পাড়ের কইন্যা’, সুজন আহমেদ, ‘দাপ্পা’। সব গল্পেই ছোটগল্পের শর্তসাপেক্ষকে শ্রদ্ধা করেছেন তা নয়, সব গল্পই সমান অর্থপূর্ণ তাও নয়। তবে যে যার নামের প্রতি সুবিচার করার চেষ্টা করেছেন। সব গল্পের মানগতদিক ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও সম্পাদক গল্প বাছাইয়ে যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। ভিন্ন ভিন্ন বিষয় পুঁজি করে গল্প সব রচিত। পাঠক গল্পগুলো পাঠ্যকালে আনন্দ পাবেন। শেষাংশে, স্যুভেনির, একুশে বইমেলা ২০১৫ প্রকাশিত বইয়ের পরিচিতি ও আলোকচিত্রে বগুড়া লেখক চত্র“ পর্বগুলো ‘ঈক্ষণ’-এর জমিনে পরিপূর্ণতা দিয়েছে। মেকআপ-গেটআপ, পৃষ্ঠাসজ্জা রুচিশীল। প্রচ্ছদ রুচিসম্মত। সব মিলে পাঠকরা এ সংখ্যা সংগ্রহশালায় সংরক্ষণ করলে নিশ্চয় উপকৃত হবেন।
×