ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

-বিবি রাসেল

আমার শিকড় বাংলাদেশেই...

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

আমার শিকড় বাংলাদেশেই...

অফিসটাতে ঢুকেই মনে হলো এখানে শৈল্পিকতা এবং মৌলিকতার ছোঁয়া আছে। গতানুগতিক কোন রং নয়, শিল্পী নিজের মতো করে যা ভেবেছেন তারই প্রতিফলন যেন ঘটেছে অফিসের প্রতিটি কর্নারে। ধার করা কোন বা ফেক কোন আবরণ মনে হলো না। অন্যরকম এক ভাললাগা তৈরি হয়ে গেল। এর পর পরই সাক্ষাত পেলাম সেই গুণধর শিল্পীর। তিনি আর কেউ নন, আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা মডেল এবং ডিজাইনার বিবি রাসেল। বিবি জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায়। স্কুলজীবন কাটে মুখলেছুর রহমান ও শামসুন নাহার এবং কামরুন্নেসা হাই স্কুলে। বড় হওয়া ঢাকায়। পরে গার্হস্থ্য অর্থনীতি, আজিমপুর কলেজে ইন্টারমিডিয়েট। এর পর পরই তিনি স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছেন ফ্যাশন লন্ডন কলেজে ১৯৭৫ সালে। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি ঝুঁকে পড়েন মডেলিংয়ের প্রতি। বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ভোগসহ বিভিন্ন পত্রিকার জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও কসমোপলিটন এবং হারপার বাজারেরও প্রচ্ছদ হয়েছেন। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ফ্যাশন মডেল কোরিওগ্রাফার এবং ডিজাইনার হিসেবে একটানা কাজ করেছেন। পৃথিবীখ্যাত প্রতিষ্ঠান জর্জ আরমানি, কার্ল লেজারফেল্ড, কেনজোর মতো ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। ১১৯৪ সালে বিবি দেশে এসে তার শপ ‘বিবি প্রোডাকশন’ চালু করেন। ১৯৯৬ সালে ইউনেস্কোর উদ্যোগে তিনি প্রথম প্যারিসে ইউরোপিয়ান ফ্যাশন শোর আয়োজন করেন। দেশ-বিদেশের নানাবিধ পুরস্কার বিবি রাসেলের জীবনকে আরও অর্থবহ করার পাশাপাশি আমাদের দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করেছে। এরমধ্যে লন্ডন ইনস্টিটিউটের অনারারি ফেলোশিপ, ইউনেস্কোর শান্তি শিল্পী খেতাব, ডিজাইনার অব ডেভেলপমেন্ট, বাংলা একাডেমির পুরুস্কারসহ অনেক পুরস্কার রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন এ দেশের তাঁত এবং খাদি শিল্প নিয়ে। যে কাজ এ দেশের জনপ্রতিনিধিদের করা উচিত ছিল তা তিনি নিঃস্বার্থভাবে করে যাচ্ছেন। অর্থাৎ তাঁতীদের অধিকার আদায়, কর্মসংস্থান এবং কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি করা, যাতে করে দু’বেলা দু’মুঠো করে খেয়ে বাঁচতে পারে। এদের বাচ্চাদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে নির্মাণ করেছেন স্কুল। প্রতিনিয়ত চষে বেড়াচ্ছেন গ্রামবাংলার প্রতিটি প্রান্ত। এ দেশের সিস্টেমের ওপর অনেক বিরক্তি আছে, যা তার কথায় ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে ফ্যাশন ট্রেন্ডের সিস্টেমের ওপর। কিছুদিন আগে ঢাকায় একটা খাদি উৎসব হয়েছে অথচ খাদি নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাওয়া প্রথিতজশা এই ডিজাইনার নাকি দাওয়াতই পাননি। এসব নিয়ে এখন নাকি তিনি ভাবনা-চিন্তা ছেড়ে দিয়েছেন। আর তাই নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছেন কে কী করল আর কে কী ভাবল তা নিয়ে বসে থাকার সময় নেই। তার দৃঢ় বিশ্বাস, ‘আমার জন্ম বাংলাদেশে, এ দেশে আমার শিকড় পোঁতা রয়েছে, বীরের জাতি আমরা, কেন ভয় পাব...। যদি ডাক শুনে কেউ নাই বা আসে, তাহলে একলাই চলব...।’
×