ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নূর কামরুন নাহার

নিভৃতচারী এক সাধক

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

নিভৃতচারী এক সাধক

ড. সোনিয়া নিশাত আমিন বাংলাদেশের গবেষণা অঙ্গনে এক বিশিষ্ট নাম। তার গবেষণাকর্মগুলো শুধু সামাজিক ইতিহাস নয়; জীবন, সংস্কৃতি ও বির্বতনের ইতিহাস। দীর্ঘ সময় ধরে তার এ গবেষণা এবং বিশেষ করে বাঙালী নারীর ইতিহাস নিয়ে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি তিনি অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। তার কর্ম, ব্যক্তি জীবন ও জীবনভাবনা নিয়ে এ আয়োজন। জন্ম ও শৈশব প্রগতিশীল পরিবারে জন্ম সোনিয়ার। পৈত্রিক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বাবা বন বিভাগে কর্মরত ছিলেন। মা ছিলেন শৌখিন নৃত্যশিল্পী। মায়ের আধুনিক মনন সোনিয়ার বেড়ে ওঠায় ব্যাপক প্রভাব রেখেছে। মার কারণেই ইংরেজী শিক্ষা মাধ্যমে পড়াশোনা। শৈশব কেটেছে ঢাকা, চট্টগাম আর খুলনা মিলে। মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ জীবনের একটা বড় অধ্যায়। বাবা রাজনীতি সচেতন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন। বাবার হাতেই প্রথম দেখেছিলেন ছয় দফা আন্দোলনের একটা লিফলেট। ওটাই কোমল মনে স্বাধীনতার দাবির বীজ বুনে দিয়েছিল। ’৭১ সালে হলিক্রসের ছাত্রী ছিলেন। বড় বোন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বড় বোনও ছিলেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত। সেই সঙ্গে রাজনীতি সচেতন। ’৭১-এ সংস্কৃতি সংসদ করতে পালিয়ে গেলেন ভারতে। পরে তিনিও গেলেন। সেখানে তারা ছিলেন প্রায় সাত মাস। বোন সংস্কৃতি স্কোয়াডে মুক্তির গানের সঙ্গে জড়িত হলেন। সেখানে তারা কিছু সংবাদপত্রের আর্কাইভের কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। খান সরোয়ার মুর্শিদের মেয়ে, মুনীর চৌধুরীর ছেলে এবং আরও বেশ কয়েকজন তাদের সঙ্গে এ কাজ করেছিলেন। এটা জীবনের পরম প্রাপ্তি বলে মনে করেন তিনি। পড়াশোনা ও বৃহৎ বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় ভারত থেকে ফিরে আবার পড়াশোনায় মনোনিবেশ। ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। ছোটবেলা থেকেই মানব সভ্যতা সম্পর্কে ছিল ব্যাপক আগ্রহ। মানব সমাজের সঙ্গে আগ্রহ বোধ করতেন সাহিত্যেও। সাহিত্যের সঙ্গে ইতিহাসের একটা সুন্দর যোগসূত্র খুঁজে পান তিনি। ‘ইতিহাসে আমি অনেক কাব্যময়তা দেখি। ছোটবেলা থেকেই ইতিহাস আমার কাছে শুধু সন, তারিখ, রাজা, যুদ্ধ-বিগ্রহ, সন্ধিÑ এসব ছিল না।’ তার কাছে ইতিহাস হচ্ছে মানব-মানবীর জীবনযাত্রার আখ্যান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় বিষয় নির্ণয়ের সময় তাই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, হয় সমাজবিজ্ঞান নয় ইতিহাসই হবে তার জন্য যথার্থ বিষয়। ইতিহাস পড়তে গিয়ে মানুষের জীবনের বিচিত্র আর জীবনাচরণের সেই জীবন্ত বিষয়গুলোকেই দেখতে পেলেন। তাই ইতিহাস হয়ে উঠল তার আনন্দের পাঠ, সেই সঙ্গে চিন্তার খোরাক। ১৯৭৭ সালে পড়াশোনার জন্য পা রাখলেন বিদেশে। জ্ঞানের বৃহত্তর ক্ষেত্রে জীবনকে অনুভব করলেন আরও নিবিড় ও অন্যভাবে। বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে তার মনে হয়েছিল বিশ্বের সেরা একটি বিদ্যাপ্রতিষ্ঠানে তার পড়া উচিত। তখন বিদেশে যাওয়া এখনকার মতো সহজ ছিল না। কিন্তু ইচ্ছার প্রতি দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাস তাকে সফল করেছিল। ক্যামব্রিজে আবেদন করেছিলেন। আংশিক স্কলারশিপও পেয়েছিলেন। ক্যামব্রিজে পড়াশোনাও নানাভাবে তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনবোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। পরিবার থেকে তখন একা হয়ে পড়েছিলেন। তার পরের সময়টা তার জন্য একটা উল্লেখযোগ্য সময়। ক্যামব্রিজ খুব অহঙ্কারী জায়গা। ছোটবেলা থেকেই ইংরেজী সাহিত্য পড়েছেন আগ্রহ নিয়ে। তাই ক্যামব্রিজে এসে মনে হলো এটা তার জন্য সঠিক জায়গা। এখানেই এক সময় শেলি, কিটস, বায়রন, মিল্টন সবাই বিচরণ করেছেন। এখানকার পরিবেশই তাই মনের দুয়ার খুলে বৃহত্তর এক পৃথিবীর দিকে আহ্বান করে। ক্যামব্রিজে পড়াকালীন যেখানে তিনি থাকতেন সেখানে একটি রাস্তার নাম ছিল মিল্টন ওয়াক। এই রাস্তায় কবি জন মিল্টন হাঁটতেন। সকালে যখন তিনি ডরমেটরি থেকে ক্লাসে যেতেন তখন দেখতেন স্টিফেন হকিংকে হুইলচেয়ারে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব তাকে আলোড়িত করত। সেখানে তিনি নাটক দেখতেন। ঘুরতে যেতেন। সময়টা নানাভাবেই তার কাছে তাই ভাল লাগার এবং গ্রহণ করার। পেশাজীবন প্রবাস থেকে ফিরে আসেন ১৯৮৩ সালে। ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে যোগদান করেন। বর্তমানে ওই বিভাগেরই অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষকতাকেই বেছে নেবেন এমন কোন সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত ছিল না তাঁর। তবে চাকরি করবেন, গৃহের চার দেয়ালের মধ্যেই জগত সীমাবদ্ধ করবেন না- এমন একটা দৃঢ় সিদ্ধান্ত ছিল রবাবরই। নাগালের মধ্যেই মনঃপুত পেশা ছিল শিক্ষকতা। সেভাবেই এ পেশায় আগমন। তবে তার গভীর আগ্রহ ছিল পরবর্তী প্রজন্মকে বোঝা ও তাদের কাছ থেকে শেখা। নিজের অর্জিত জ্ঞান তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার একটা আকাক্সক্ষাও ছিল। তাই শিক্ষকতা পেশাটাকে বেশ উপভোগ করেছেন তিনি। গবেষণা ও প্রকাশনা দীর্ঘকাল ধরে উনিশ এবং বিশ শতকের বাংলার সামাজিক ইতিহাস বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। এই বিষয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে তাঁর ত্রিশটিরও বেশি প্রবন্ধ দেশ-বিদেশে প্রকাশিত হয়েছে। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড অব মুসলিম উইমেন ইন কলোনিয়াল বেঙ্গল : ১৮৭৬-১৯৩৯’ বিষয়ে গবেষণার জন্য ১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। তাঁর পিএইচডিতে অভিসন্দর্ভ তিনটি প্রজন্ম বা ৬০ বছরজুড়ে বাংলার ১৯-২০ শতকে (মুসলিম) নারীর আধুনিক ও স্বাধীন হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াকে তুলে ধরেছেন তিনি।। নবাব ফয়জুন্নেচ্ছার পরের আধুনিক নামটি বেগম রোকেয়ার। আর তারপর থেকে মুসলিম নারীর আধুনিক হয়ে ওঠার বিবর্তন বা ইতিহাসকে বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের সঙ্গে জেন্ডারের ইতিহাসকে যোগ করেছেন তিনি। ইতিহাসের সঙ্গে জেন্ডার ইতিহাসের এই যোগ তার দীর্ঘদিনের গভীর ভাবনার ফসল। নারীর জন্য একটা কিছু করার উদগ্র বাসনা অনেক আগে থেকেই মনে পোষণ করেছেন তিনি। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোন দিকনির্দেশনা ছিল না। পরবর্তী সময় কলকাতার পার্থ চ্যাটার্জীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। তাঁর উৎসাহ এবং দিকনির্দেশনায় ‘মুসলিম নারীর আধুনিকায়ন’ গবেষণাকাজে হাত দেন তিনি। কাজটি খুব পরিশ্রম আর সময় নিয়ে করেছেন তিনি। ’৯০-৯১ সালে শুরু করে ’৯৫ সালে শেষ করেন এই গবেষণাকাজটি। তাঁর এই পিএইচডি গবেষণা গ্রন্থ চার শ’ বছর পুরনো প্রকাশনা সংস্থা ঊঔইজওঈক থেকে প্রকাশিত (১৯৯৬ : নিউইর্য়ক, লেইডেন)। পরে সেটি বাংলায় অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয় বাংলা একাডেমি থেকে। ২০০২ প্রকাশকাল। নারী বিষয়ক উল্লেখযোগ্য গবেষণা ও প্রকাশনার জন্য তিনি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ কর্তৃক আতোয়ার হোসেন স্বর্ণপদক পান। রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছরপূর্তি উপলক্ষে যে বহুমাত্রিক কর্মসূচী এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ নিয়েছিল তার একটি ছিল ঢাকা বিষয়ক ১৯টি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশনা। এই সিরিজের নবম গ্রন্থ অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন সম্পাদিত ‘ঢাকা নগর জীবন নারী’। ঢাকার চার শ’ বছরের ইতিহাসে রয়েছে নারীর নানামুখী ভূমিকা। ঢাকার জীবনের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে নারীর জীবনের ইতিহাস। এই বইটি সম্পাদনা তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য কাজ। এই বইয়ের লেখকরা প্রত্যেকেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রাজ্ঞ, ধীমান, গবেষক ও সুচিন্তিত বিশ্লেষক। বিষয়ভিত্তিক প্রতিটি লেখায় আরও গবেষণা ও পৃথক বই লেখার জন্য প্রচুর রসদ রয়েছে। প্রধান সম্পাদক ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ আলোচ্য বইটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘১৬০৮ সালে মুঘল রাজধানী হিসেবে ঢাকার আত্মপ্রকাশ এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করে। সৃষ্টির প্রথম থেকেই সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশে নর ও নারী উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। ঢাকার ইতিহাসও এর কোনো ব্যতিক্রম নয়। অথচ এই ঢাকা শহরে বিগত ৪০০ বছরে নারীর জীবন কেমন ছিল, তা যথার্থ অর্থে বলতে গেলে আমরা কিছুই জানি না। বিষয়টি আমাদের পীড়া দেয় এবং রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছর উদযাপনের এই সন্ধিক্ষণে আমরা অতীতের এই উদাসীনতা বা শূন্যতা পূরণে আগ্রহী হই। আমরা সিদ্ধান্ত নেই, আমাদের গ্রন্থে যেসব প্রবন্ধ প্রকাশিত হবে তাদের মধ্যে একটি হবে সম্পূর্ণভাবেই নারীবিষয়ক।’ গবেষণার পাশাপাশি সৃজনশীল সাহিত্যচর্চাও তিনি অব্যাহত রেখেছেন। বাংলায় তিনি একটি নন-ফিকশনধর্মী উপন্যাস লিখেছেন। দুটি বাংলা গ্রন্থ ইংরেজীতে অনুবাদ করেছেন। ওয়ার্ল্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অব উইমেন’স হিস্টোরি এবং অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব ন্যাশনাল বায়োগ্রাফিতে প্রকাশিত রোকেয়ার জীবনীটা তিনিই লিখেছেন। নারী ভাবনা নারী ভাবনা তার লেখা ও গবেষণাকর্মেও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তিনি বাংলা ও ইংরেজী উভয় ভাষাতেই লেখালেখি করেন । ইংরেজী মাধ্যমে কাজ করার পেছনে তাঁর উদ্দেশ্য হলো, উপমহাদেশের নারী আন্দোলনের সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করা। উপমহাদেশের ঔপনিবেশকালও তাঁর আগ্রহের জায়গা। এ উপমহাদেশের ইতিহাস তথা আমাদের সামাজিক ইতিহাস এবং আমাদের বির্বতনকাল ভালভাবে বুঝতে হলে ঔপনিবেশিক কালটা ভালভাবে জানা এবং বোঝা প্রয়োজন। আধুনিকতার উৎস হচ্ছে ঔপনিবেশিক আমল। তাই এই সময়টাকে তিনি তাঁর গবেষণায় গুরুত্বের সঙ্গে তুলে এনেছেন। এই কালটি গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণে তিনি আবার মুসলিম নারী, গ্রাম্য নারী আন্দোলন এবং উনিশ শতকের বাংলার রেনেসাঁসে মুসলিম নারী সমাজে একটা রেনেসাঁস হয় এবং বলা যায় নারী সমাজের একটা সংস্কার হয় এবং সেই সংস্কারে যে নারীর মনোগত একটা পরিবর্তন এবং জাগরণ সূচিত হয় তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে নারীর বিবর্তনকে এনেছেন। মুসলিম নারীর এই আধুনিকায়নে লেডি বেব্রোন কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং শুধু শিক্ষা নয়, পরিবারিক ক্ষেত্রে নারীর পরিবর্তন, পরিবারের পরিবর্তন, নারীর সৃজনশীলতার উন্মেষ এবং কিভাবে নারীর এই পরিবর্তন এবং সৃজনশীলতার সৃষ্টি হলো রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর নারী ভাবনা মুসলিম নারী সম্প্রদায় ও তাঁর পাশের সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এবং এর সঙ্গে সমাজের নানা অনুষঙ্গের যোগসূত্রগুলোকেও তিনি সুন্দরভাবে গাঁথতে চেয়েছেন। এই বিবর্তনকে বোঝার জন্য তিনি মুসলিম প্রগতিশীল লেখকদের লেখাকে সমভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। নওশের আলী খান, ইউসুফ জাই, মীর মশাররফ হোসেন, ইসমাইল হেসেন সিরাজী এবং প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁÑ এদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় এনছেন। মূলত তার স্বাধীনচেতা বৈশিষ্ট্যটি নারী ভাবনায় ব্যাপক প্রভাব রেখেছে। নারীর নিজস্ব সত্তায় তার বিশ্বাস আবাল্য। নারী তার এই সত্তার বিকাশ ঘটাতে পারে। শুধু গৃহস্থালি কাজের নারীর জন্ম নয়। এই বিশ্বাসই তাঁকে যেমন তাঁর কাজের প্রেরণা ও শক্তি দিয়েছে তেমনি এই বোধই নারীর জন্যও কিছু করার এবং তাঁর গবেষণায় নারীরা প্রাধান্য পেয়েছে। নারী ও ইতিহাস নিয়ে কাজ করতে করতেই জেন্ডারের ইতিহাস নিয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এবং যতই নিজের জীবন ও জগতের সীমানা বেড়েছে ততই তিনি নারীর অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছেন। আর ততই নারী এবং জেন্ডার নিয়ে কাজে তিনি সম্পৃক্ত হয়েছেন। এই আগ্রহ ও নারীর জন্য আরও কিছু করার তাগিদ বোধ থেকেই অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন ও তাঁর সহকর্মী মিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে বছর তিনেক পূর্বে জেন্ডার এ্যান্ড হিস্টোরি কোর্সটি প্রবর্তন করেছে। নারীদের বিষয়ে তার মতামত হচ্ছে, ‘সংখ্যার দিক দিয়ে নারীরা এখন অনেক এগিয়েছে। বিভিন্ন পেশায় নারীদের দেখছি। রাষ্ট্র পরিচালনায়ও নারীরা আছেন। আমাদের ওয়াসফিয়া নাজনীন পর্বত জয় করে চলেছেন। এটি আমাদের জন্য অনেক গর্বের। কিন্তু শ্রেণী হিসেবে নারীরা কতটুকু এগিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতে পারে। নারী শিক্ষার হার বেড়েছে। কিন্তু সচেতন হয়েছেন কতজন। আগে নারীরা দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ত। এখন হয়ত অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ছে। তবে যৌতুক এখনও আছে। তবে আমি হতাশ নই। সামনের দিনে নারীরা এগিয়ে যাবেই।’ হবে। প্রগতিশীল মনের অধিকারী তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পোস্ট-ডক ফেলো ছিলেন। পাশাপাশি বাংলা একাডেমির ফেলো এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। এছাড়া নানা ধরনের আন্দোলন, নারী আন্দোলন, সমন্বিত নারী সমাজ এবং সংস্কৃতি জোটের আন্দোলনে একাত্ম হয়ে কাজ করেছেন। অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন এভাবেই রোকেয়া, প্রীতিলতা থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী সেলিনা পারভীনের মতো বঙ্গদেশের সাহসী নারীদের নিয়ে কাজ করে চলেছেন। নিভৃতে তিনি কাজ করে চলেছেন নারী তথা উপমহাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণে।
×