ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘এ অবস্থার জন্য বায়াররাও কম দায়ী নয়, তবে শতাধিক উদ্যোগ নেয়ায় এ খাতে ৬০ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে’

গার্মেন্টস শিল্পে ১৬ ধাপে ঘুষ-দুর্নীতি হয় ॥ টিআইবি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

গার্মেন্টস শিল্পে ১৬ ধাপে ঘুষ-দুর্নীতি হয় ॥ টিআইবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তৈরি পোশাক শিল্পের সরবরাহ চক্রের (সাপ্লাই চেন) তিনটি পর্যায়ে অন্তত ১৬টি ধাপে ঘুষ লেনদেন ও দুর্নীতির চিত্র পেয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, সাপ্লাই চেনের কার্যাদেশ, উৎপাদন ও সরবরাহ- এই তিনটি পর্যায়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। পণ্যের মান, পরিমাণ ও কমপ্লায়েন্সের ঘাটতি ধামাচাপা দেয়া হয় ঘুষের মাধ্যমে। বিভিন্ন পর্যায়ে তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের উপরি দিলেই নিয়ম ভঙ্গের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যায়। এ খাতের অংশীজনের সুশাসন ও জবাবদিহিতাহীন এ ধরনের পরিবেশে সর্বোচ্চ মুনাফার জন্য চাঁদাবাজি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ‘তৈরি পোশাক খাতের সাপ্লাই চেনে অনিয়ম ও দুর্নীতি মোকাবেলায় অংশীজনের করণীয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ধানম-িতে নিজ কার্যালয়ে এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে টিআইবি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জার্মানি ও টিআইবি যৌথভাবে এ গবেষণাটি করেছে। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন টিআইবির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের, কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল হাসান, নাজমুল হুদা মিনা প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এ খাতের ৭০ জন বায়ার, কারখানার মালিক-শ্রমিক, কমপ্লায়েন্স অডিটর, পরিদর্শক, বিশেষজ্ঞ, মার্চেন্ডাইজার, শিপিং এজেন্ট ও ব্যাংকার থেকে সংগৃহীত তথ্যের সমন্বয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। সাপ্লাই চেনের ১৬টি ধাপে বিদ্যমান দুর্নীতি চিহ্নিত করে তা মোকাবেলায় সুপারিশ করাই গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্র্যান্ড/আমদানিকারকের সঙ্গে স্থানীয় এজেন্ট/বায়িং হাউজের সঙ্গে যোগাযোগ, কমপ্লায়েন্স কারখানার সঙ্গে যোগাযোগ, কার্যাদেশ প্রদান, মূল্য নির্ধারণ/দরকষাকষি, স্যাম্পল করার নির্দেশ, মাস্টার এলসি-ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা, উৎপাদনের কাঁচামাল/দ্রব্য ক্রয়/আমদানি, পণ্যের মান ও কমপ্লায়েন্স পরিদর্শন, প্রাক জাহাজীকরণ পর্যায়ের মান পরিদর্শন ও জাহাজীকরণ (এফওবি/ সিএ্যান্ডএফ) ধাপে দুর্নীতি হয়ে থাকে। দুর্নীতির পরিসংখ্যানগত চিত্রের ব্যাপারে বলা হয়, গবেষণায় গুণগত তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। যে জন্য পরিসংখ্যানগত কোন অনিয়মের সুনির্দিষ্ট তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তৈরি পোশাক খাতে গত দুই বছরে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। ৯০ শতাংশেরও বেশি কারখানা কর্তৃপক্ষ সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করেছে। কর্মপরিবেশও আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। তবে এ খাতে আরও ইতিবাচক পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজন; বিশেষ করে সরকার, পশ্চিমা ক্রেতাদের ও বিজিএমইএর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, ২০১৩ সালে এ খাতের ৬৩টি বিষয়ে সুশাসনের ঘাটতি চিহ্নিত করা হয়েছিল। এসব ঘাটতির মধ্যে সরকার, মালিক ও বায়ারদের ১০২টি উদ্যোগ নেয়ার ফলে তৈরি পোশাক খাতে ৬০ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সব সময় অনিয়ম দুর্নীতির জন্য বাংলাদেশের সরকার, উৎপাদকদের দায় দেয়া হলেও, দুর্নীতির জন্য বায়াররাও কম দায়ী নয়। অনিয়মের সঙ্গে কম-বেশি সবাই জড়িত। এককভাবে সরকারী কর্মকর্তাদের দায়ী করা ঠিক হবে না। বায়ার, এজেন্ট- যারা এ খাতে সংশ্লিষ্ট তাদের দায়ও এড়ানো যাবে না।’ এ খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে প্রতিবেদনে বায়ার, বিজিএমইএ, সরকার, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের করণীয় হিসেবে মোট ২৭ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি। এর মধ্যে সরবরাহকারী কারখানার পক্ষ থেকে যে কোন ঘুষের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, পূর্ব ঘোষণা ছাড়া আকস্মিক কারখানা নিরীক্ষণ ও পরিদর্শন এবং প্রয়োজনে ক্রেতাদের কার্যাদেশ বাতিল ও কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ক্রেতাদের জন্য নৈতিকতা ও ব্যবসায়িক আচরণবিধি করারও সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কারখানাগুলোর জন্য আলাদা শনাক্তকরণ নম্বর চালু, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পরিশোধে সরকারের তদারকি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং এক্ষেত্রে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয়কে আরও কঠোর হওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
×