ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচনেও দলীয় একক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

ইউপি নির্বাচনেও দলীয় একক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌরসভার মতো ইউনিয়ন পরিষদেও দলগুলোর একক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে। এর বাইরে কোন দলের পক্ষে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন দেয়া হলে সে দলের প্রার্থিতাও বাতিল করা হতে পারে। এমনি বিধান রেখে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করা হচ্ছে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী হতে হলে পৌরসভার মতো সংশ্লিষ্ট দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রত্যয়ন থাকতে হবে। প্রত্যয়ন ছাড়া কোন প্রার্থীই দলীয় প্রার্থী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন না। আর রাজনৈতিক দলগুলোও এ ক্ষেত্রে একজনের বেশি মনোনয়ন দিতে পারবে না। পৌর নির্বাচনের মতো এ নির্বাচনেও কোন বিদ্রোহী প্রার্থী অংশ নিতে পারছেন না। তবে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত কেউ নির্বাচন করতে চাইলে তার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিধান রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আগামী মার্চের শেষে শুরু হচ্ছে সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে প্রথম দফায় নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণার আভাস দিয়েছে কমিশন। এ নির্বাচনের জন্য এখন বিধিমালা সংশোধনের কাজ চলছে। বিধিমালা সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যে কমিশনের বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের প্রতীকও চূড়ান্ত করেছেন। জানা গেছে, খসড়া বিধিমালা চূড়ান্ত করার পর তা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। ভেটিং শেষে তা গেজেট আকারের প্রকাশের পর তফসিল ঘোষণার উদ্যোগ নেবে কমিশন। এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনেও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একক প্রার্থীর মনোনয়নের বিধান রাখা হয়। তবে ওই সময় কমিশনের এ বিধানের সমালোচনা করা হয় বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে। তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, একক প্রার্থী মনোনয়নের বিধানে কোন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হলে দলের বিকল্প কোন প্রার্থীর নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ থাকে না। এ কারণে তারা একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নের দাবি জানালেও তখন কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের দাবি নাকচ করে দেয়া হয়। একক প্রার্থী এই বিধানের কারণে পৌর নির্বাচনে বিএনপির ১০ পৌরসভায় মেয়র পদে কোন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। যাচাই বাছাইয়ে তাদের মনোনয়ন বাতিল করা হলে ওইসব পৌরসভায় বিকল্প কোন প্রার্থী দেয়া সম্ভব হয়নি। জানা গেছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কমিশন একই বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে। তবে খসড়া বিধিমালায় চেয়ারম্যান পদে দল মনোনীত একক প্রার্থী রাখার বিধান রাখা হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ভোটারদের সমর্থনের তালিকার বিধান বাতিল করা হতে পারে। এছাড়া নির্বাচনী প্রচারের মন্ত্রী এমপিসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অংশ নেয়া নিষিদ্ধ হলেও উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রদের বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে কমিশনে। এমপিদের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রদের প্রচারে না রাখা উভয় পক্ষে কমিশনারদের মত রয়েছে। জানা গেছে, নির্বাচনী আচরণবিধিতে ইউপি প্রার্থীর পক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রচারের সুযোগ না দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক। প্রস্তাবে তিনি বলেন, সরকারী সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে তাতে মেয়র শব্দের পরে উপজেলা চেয়ারম্যান শব্দগুলো সন্নিবেশ করতে হবে। আর এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন মোঃ শাহনেওয়াজ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় পর্যায়ের একজন নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান। তাকে প্রচারে বাধা দেয়ার কথা চিন্তা করছি না আমরা। তবে ইসির আইন শাখার যুগ্ম সচিব মোঃ শাহজাহান জানিয়েছেন ইউপিতে প্রচারে মন্ত্রী-সাংসদরা যাবেন না। তবে পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান সরকারী সুবিধা ছেড়ে প্রচারে গেলে বাধা থাকবে না এমন প্রস্তাবই রাখা হচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটারদের সমর্থনযুক্ত তালিকার বিষয়ে বলেন, প্রস্তাবিত বিধিতে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার জন্য কোন সমর্থনযুক্ত তালিকা না রাখার প্রস্তাব দেয়া হলেও আলোচনা সাপেক্ষে পৌরসভার চেয়ে কম সংখ্যক ভোটারের সমর্থনযুক্ত তালিকা রাখা হতে পারে। এদিকে খসড়া বিধিমালায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের ক্ষেত্রে দলের অনুদান রাখার বিধান থাকছে। জানা গেছে, দল মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর জন্য ইউনিয়ন প্রতি দলের ব্যয় ৩০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিধি লঙ্ঘন করলে দলকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া খসড়া বিধিমালায় চেয়ারম্যান পদে ৪০টি নিবন্ধিত দলের প্রতীক, স্বতন্ত্র প্রার্থী, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদের প্রার্থীর জন্য নতুন প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে। বিদ্যমান বিধিমালা অনুযায়ী ভোটের আগে প্রতিদ্বন্দ্বী কোন প্রার্থীর হঠাৎ মৃত্যু হলে ভোট বন্ধ না করার বিধান থাকলেও এ বিধানে সংশোধনী আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। কমিশনের বৈঠকে ইসি আবদুল মোবারক তার মতামতে উল্লেখ করেছেন ভোটের আগে কোন প্রার্থীর মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট পদে নির্বাচন স্থগিত করে পুনর্তফসিল করতে হবে। কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ জানিয়েছেন, সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মারা গেলে বাকিদের মধ্যে ভোট হবে। তবে চেয়ারম্যান পদে কেউ মারা গেলে নির্বাচন স্থগিত করে পুনর্তফসিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মার্চের শেষদিকে শুরু হচ্ছে সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। প্রথম ধাপে ৬শ’ ইউপির নির্বাচন করা হলেও মে থেকে জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে পর্যায়ক্রমে বাকি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে এ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে কমিশন। পৌরসভার ন্যায় ইউপিতে এবারই প্রথম দলীয় ভিত্তিতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে দলীয় ভিত্তিতে হলেও সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্দলীয় নির্বাচন হবে। আইন অনুযায়ী চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন রাজনৈতিক দলগুলো। সারাদেশে সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। ২০১১ সালে হুদা কমিশনের অধীনে সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিধান অনুযায়ী মেয়াদ শেষের ছয় মাসের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। নির্বাচনের পর প্রথম বৈঠক থেকে এ পরিষদের কার্যকারিতা রয়েছে ৫ বছর। এদিকে কমিশন জানিয়েছে মার্চ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পাশাপাশি দ্বিতীয় ধাপে মেয়াদ উত্তীর্ণ পৌরসভার নির্বাচনও করতে চায় ইসি। জানা গেছে, মার্চ মাসেই ১৫টি পৌরসভায় নির্বাচনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কমিশন সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের জন্য ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখা নির্বাচন উপযোগী ৪৮টি পৌরসভার একটি তালিকা করেছে। কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্চের শেষে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আয়োজনের আগেই এসব পৌরসভায় ভোটের আয়োজনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কারণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়ে গেলে পৌরসভা নির্বাচনের সুযোগ থাকবে না। কারণ প্রথম দফায় ইউপি নির্বাচনের পর রয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। এরপরই আবার দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচন শুরু করতে হবে। এ কারণে ইউপি নির্বাচনের আগেই দ্বিতীয় ধাপে পৌরসভা নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে কমিশন।
×