ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফুঁসে উঠছে শিল্প সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষ, শাস্তি দাবি

মৌলবাদের আগুনে ছারখার বি’বাড়িয়া ১১ মামলা দায়ের

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

মৌলবাদের আগুনে ছারখার বি’বাড়িয়া ১১ মামলা দায়ের

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ মৌলবাদী অপশক্তির সশস্ত্র হামলার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখনও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়ে গেছে। চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে সংস্কৃতিসেবী মানুষের মধ্যে। মৌলবাদের অনুসারী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মঙ্গলবার দিনভর তা-ব চালায় শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম সূতিকাগার ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। তাদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সরকারী-বেসরকারী স্থাপনাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর বসতভিটা-যেখানে ‘দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন’ প্রতিষ্ঠিত- এটি এখন রীতিমতো ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে। মৌলবাদীদের দেয়া আগুনে পুড়ে প্রায় সবকিছু হয়ে গেছে ছাড়খার। বিশ্বখ্যাত এ সঙ্গীত প্রতিষ্ঠানটির হারমোনিয়াম, গিটার, বাদ্যযন্ত্র থেকে শুরু করে বলা যায় কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই! হামলাকারীরা সেদিন দল বেঁধে এই সঙ্গীতাঙ্গনে প্রবেশ করে প্রথমে ভাংচুর এবং পরে অগ্নিসংযোগ করে। প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসছে ধ্বংসপ্রাপ্ত এই সঙ্গীত বিদ্যাপীঠটি দেখতে। প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেছেন, এটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সপ্তাহে তিন দিন ক্লাস হতো। এখন সব ক্লাস বন্ধ। জাদুঘর পুড়ে ছারখার। বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বের সঙ্গীত জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মৌলবাদী তা-বের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানায় ১০টি মামলা রুজু হয়েছে। জিআরপি পুলিশ বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করেছে। একটি মামলায় জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এতে দলের সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকনসহ ৪৪ জন এবং অজ্ঞাত আরও ২৫০ জনকে অসামি করা হয়। এদিকে জেলা পুলিশ এএসপি শফিকুল ইসলামকে প্রধান করে ৩ সদস্যের আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সরজমিন পরিদর্শনকালে পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, যারা বিজ্ঞান বিরোধী, তারাই সংস্কৃতিবিরোধী, এমন একটি পরিবেশ দেখতে হবে আমি ভাবতে পারেনি। উন্মাদ শ্রেণীর লোকজন এ কাজ করেছে। আমি এর নিন্দা জানাই, বিচার চাই। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠানসহ সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে মাদ্রাসা ছাত্রদের তা-বে সংস্কৃতি কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ হামলার প্রতিবাদে ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে বুধবার রাতে প্রতিবাদ সভা করার পর বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সংস্কৃতিকর্মীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যানারে জেলার সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মী ও মুক্তবুদ্ধির মানুষ শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় প্রেসক্লাব চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক আবদুন নূরের সভাপতিত্বে ও তিতাস আবৃত্তি সংগঠনের পরিচালক মোঃ মনির হোসেনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন জেলা নাগরিক সমাজ আহ্বায়ক তাজ মোঃ ইয়াছিন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার হারুন অর রশিদ, সাহিত্য একাডেমির আহ্বাায়ক কবি জয়দুল হোসেন, কবি আবদুল মান্নান সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাট্য সংস্থার সম্পাদক মনজুরুল আলম, কমিনিস্ট লীগ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মতি লাল বণিক, জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এ্যাডভোকেট কাজী মাসুদ আহমেদ, রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ সাধারণ সম্পাদক ডাঃ অরুনাভ পোদ্দার, নাগরিক ফোরাম সভাপতি পীযূষ কান্তি আচার্য, নারী মুক্তি সংসদ সভাপতি ফজিুলাতুন্নাহার, আবরণী নির্বাহী পরিচালক হাবিবুর রহমান পারভেজ, মহিলা পরিষদ সাংগঠনিক সম্পাদক আসমা খানম, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম। সভায় বক্তাগণ ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের দাবি জানান। তদন্ত কমিটির সাক্ষ্য গ্রহণের কাজ শেষ পর্যায়ে ॥ মঙ্গলবারের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সাক্ষ্য গ্রহণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গত ২ দিনে ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে। মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্র, পুলিশ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীসহসহ আরও কয়েক জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। কমিটি ঘটনা সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ভিডিও সহায়ক হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের অতিরিক্ত ডি আইজি মাহবুবুর রহমান জানান, কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। রবিবারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার চেষ্টা করব। না পারলে সময় চাইব। এদিকে আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন ভূইয়া বলেন, এখন পর্যন্ত ১০টি মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে পরবর্তী কার্যক্রম চালাবে।
×