ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেতন বৈষম্য নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ পর্যালোচনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

বেতন বৈষম্য নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ পর্যালোচনা হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিভিন্ন পেশাজীবীর বেতন বৈষম্য নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বেতন-ভাতা নিয়ে সৃষ্ট বৈষম্য দূর করতে ইতোমধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। এ টাস্কফোর্স প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ বের করতে কাজ শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে অষ্টম পে স্কেলে বেতন-ভাতা নিয়ে যে বৈষম্য ও সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা সমাধান হয়ে যাবে। শিক্ষকদের সম্মানের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া কোন কোন সেক্টরে ক্যাডার-ননক্যাডার বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে তার তালিকা তৈরি করবে প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি। তালিকা তৈরির পর সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবে সরকার। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের বিকল্প সুবিধা হিসেবে সরকারী চাকরিজীবীদের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করে চারটি প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল- নির্ধারিত একটি সময় অন্তর নবম থেকে তদুর্ধ চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তাদের বেতন স্কেল স্বয়ংক্রিয়ভাবে একধাপ ওপরে উঠার বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি কর্মচারীদের চাকরি জীবনে দুটি পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ কর্মচারীদের চাকরির মেয়াদ ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার পরপরই বেতন গ্রেড স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপরে উঠবে একধাপ। এর ছয় বছর পর অর্থাৎ চাকরির মেয়াদ ১৬ বছর পূর্ণ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর গ্রেড আরেকবার একধাপ উপরে উঠবে। এছাড়া সিনিয়র সচিবদের সমান বেতন নির্ধারণ করা হতে পারে জাতীয় অধ্যাপকদের জন্য। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী একটি প্রস্তাবের পক্ষে অনুমোদন দিয়ে বাকিগুলো পর্যালোচনা করে সমাধানের নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসাপেক্ষে অষ্টম পে স্কেলের গেজেটে বলা হয়- কোন স্থায়ী কর্মচারী তার চাকরির ১০ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্তির পর পরবর্তী ছয় বছর পদোন্নতি প্রাপ্ত না হলে ৭ম বছরে চাকরি সন্তোষজনক হওয়াসাপেক্ষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবেন। নতুন বেতন কাঠামোতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের বিকল্প হিসেবে উল্লেখিত সুবিধা সংবলিত ওই সারসংক্ষেপ গত ২২ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠান অর্থমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে অষ্টম পে স্কেলের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সারসংক্ষেপে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী একটির অনুমোদন দিয়ে বাকিগুলো পর্যালোচনা করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন সেসব বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত সব ধরনের ডকুমেন্টস ও তথ্যাবলী অর্থ মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত আছে। এটি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোন সুযোগ নেই। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে, চাকরির মেয়াদ তিন বছর পূর্ণ হওয়ার পর অষ্টম গ্রেডের একজন কর্মকর্তার বেতন স্কেল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সপ্তম গ্রেডে চলে যাবে। চার বছর পূর্ণ হলে সেখান থেকে উন্নীত হবেন ৬ষ্ঠ গ্রেডে। পাঁচ বছর পূর্ণ হলে তিনি ৬ষ্ঠ থেকে উন্নীত হবেন ৫ম গ্রেডে। ১০ বছর চাকরির পর ওই কর্মকর্তা পঞ্চম থেকে ৪র্থ গ্রেডে উন্নীত হবেন। একইভাবে চর্তুথ গ্রেডে চাকরির মেয়াদ ১২ বছর পূর্ণ হওয়ার পর তার গ্রেড পরিবর্তন হয়ে ৩য় গ্রেডে উঠবে। আবার তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় গ্রেডে যেতে পূর্ণ করতে হবে ১৪ বছর। একইভাবে ১৭ বছর পূর্ণ হওয়ার পর ওই কর্মকর্তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রথম গ্রেডে উন্নীত হবেন। তবে চতুর্থ গ্রেডের পর থেকে পদোন্নতি হবে পদশূন্যতার বিবেচনায়। সারসংক্ষেপে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেয়ার পর অনেকেই শুধু পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হবেন না বরং উচ্চতর বেতন থেকেও বঞ্চিত হবেন। এটি মোটেও কাম্য নয়। সেজন্য আমি একটি বিকল্প প্রস্তাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়েছি। তদানুযায়ী সন্তোষজনক চাকরি করার বিভিন্ন শর্তপূর্ণ করলে যে কোন কর্মচারী এ ব্যবস্থায় অন্তত দুটি পদোন্নতি সমন্ধে নিশ্চিত হবেন। এতে মনে হয়, নবম গ্রেডের নিচে যারা চাকরি করেন তাদের আর কোন ক্ষোভের কারণ থাকবে না।’ এছাড়া বিদ্যমান যেসব ক্যাডারে এক শ’র বেশি সদস্য আছে সেগুলোতে প্রথম গ্রেডের একটি পদ সৃষ্টির সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থাৎ পরিবার পরিকল্পনা, কারিগরি শিক্ষা, সমবায়, ইকোনমিক, পরিসংখ্যান ও টেলিকমে একটি করে ৬টি প্রথম গ্রেডের পদ সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়, অতিরিক্ত এই ৬টি পদ সৃষ্টি করা হলে প্রথম গ্রেডের পদের সংখ্যা ৩৮টি হবে। একইভাবে আনসার, সড়ক ও জনপথ, সাধারণ শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, ডাক, গণপূর্ত, খাদ্য ও বন এগুলোতে দ্বিতীয় গ্রেডের একটি করে পদ সৃষ্টির সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। দ্বিতীয় গ্রেডের নতুন ১০টি পদ সৃষ্টি করা হলে এ গ্রেডে মোট পদের সংখ্যা হবে ১০১টি। এছাড়া সমবায় ও পরিসংখ্যান ক্যাডারে তৃতীয় গ্রেডের পদ একটি করে মোট দুটি সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়- ২৪টি পদ রয়েছে তৃতীয় গ্রেডের। অর্থমন্ত্রী সারসংক্ষেপে তার বক্তব্যে বলেন, চতুর্থ গ্রেডে বিভিন্ন ক্যাডারে ২ হাজার ২৫২ জন কর্মরত রয়েছেন। এর সঙ্গে ১৭৬টি নতুন পদ সৃষ্টির ফলে মোট পদের সংখ্যা দাঁড়াবে ২ হাজার ৪২৭টি। এই পদের তিন শতাংশ চতুর্থ গ্রেডে পদোন্নতি পাবেন। এতে প্রশাসন ক্যাডারে ৫ম থেকে ৪৫টি পদ চর্তুথ গ্রেডে আসবে। এছাড়া কৃষি ক্যাডারে ৩৬টি পদ চর্তুথ গ্রেডে থাকবে। কারিগরি শিক্ষায় চর্তুথ গ্রেডের পদ সংখ্যা পরিবর্তন না করে ৩০টি পদ হবে। প্রাণিসম্পদে মোট পদসংখ্যা থেকে ৪০টি পদ চর্তুথ গ্রেডে থাকবে। মৎস্য ক্যাডারেও একই শর্তে ২৫টি পদ চতুর্থ গ্রেডে থাকবে। সেখানে আরও বলা হয়, এসব ক্যাডারে নিযুক্ত ও পদায়ন নীতিমালাকে ছয় মাসের মধ্যে সংশোধন করে উল্লেখিত পদগুলো ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রসঙ্গত, গত ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল অনুমোদন করা হয়। আর গত ১৫ ডিসেম্বর মধ্য রাতে এ বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
×