ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের একক বক্তৃতা

বাংলাদেশের জন্মকে অপমান করেছেন খালেদা-গয়েশ্বর

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশের জন্মকে অপমান করেছেন খালেদা-গয়েশ্বর

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী/রাবি সংবাদদাতা ॥ প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক তুলে ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা নিয়ে কটূক্তি করে খালেদা জিয়া এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশের জন্মকে অপমান করেছেন। তরুণ প্রজন্মকে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। ইতিহাস বিকৃতিকারী হেফাজত-জামায়াত-বিএনপিকে কোন ছাড় দেয়া চলবে না। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের আমীর উদ্দীন গ্যালারিতে আয়োজিত একক বক্তব্যের অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের এই একক বক্তব্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুনের ভক্তবৃন্দ’। এতে রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও মুক্তিযোদ্ধাসহ সহস্রাধিক তরুণ-তরুণী অংশ নেন। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ মানুষের মৃত্যুতে ত্রিশ লাখ পরিবার ছারখার হয়ে গেছে। ছয় লাখ নির্যাতিত নারীর সঙ্গে তাদের পরিবারের স্বপ্নও ছারখার হয়েছে। অথচ বিএনপি নেত্রী খালেদা শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসবে মেতেছেন। তিনি বলেন, হেজাবিরা (হেফাজত-জামায়াত-বিএনপি) প্রথম বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতি শুরু করে। এরপর মানুষের চিন্তা-চেতনাকে নষ্ট করেছে। তারপর যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর পাঁয়তারা করেছে। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বাঁচাতে চায়, তারা আর যাই হোক মানুষের বাচ্চা না। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, রাজনীতি মানে হলো মানুষের মনোজগতে আধিপত্য বিস্তার করা। বঙ্গবন্ধু এটা পেরেছিলেন। তাই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। কিন্তু ’৭৫ পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান সেটা ধ্বংস করে দেন। সংবিধানের চার মূলনীতিতে পরিবর্তন এনে ধর্মনিরপেক্ষতাকে তুলে দেন। আলবদর-বিএনপিকে ক্ষমতায় আনেন। জিয়াউর রহমান অস্ত্রের সাহায্যে মনোজগতে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। তারা আধিপত্য বিস্তারে সফল হয়েছে। তাই আজও এদেশের ৩০-৪০ ভাগ মানুষ বিএনপি-জামায়াত করে। আমরা তাদের মনোজগতে পরিবর্তন আনতে পারিনি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মনোজগতে আধিপত্য বিস্তারের চেয়ে উন্নয়নে বেশি মনোযোগ দিয়েছে। পদ্মা সেতু হবে কিন্তু বাংলাদেশ রাজাকার-আলবদরদের দখলে চলে যাবে। তাই উন্নয়নের পাশাপাশি মনোজগতে আধিপত্য বিস্তারেও মন দিতে হবে। বিএনপি-জামায়াত পাকিস্তানের রাজনীতি করছে। তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে পারলেই সেটা সম্ভব। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের রাজনীতি প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধীদের ছাত্র সংগঠন শিবির কী করে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করে! কেউ মদদ না দিলে সেটা সম্ভব হতো না। এছাড়া আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলেছিলাম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সেখানে কিছু কাজ করব। দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালাকে সমৃদ্ধ করার বিষয়ে চার বছর ধরে প্রস্তাব দিয়ে আসছি। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। তিনি বলেন, এদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানো হয় না। সরকারী-বেসরকারী কলেজে ইসলামের ইতিহাস পড়ানো হয় কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানো হয় না। আমি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে গিয়ে স্কুল-কলেজে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানোর জন্য বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। ফলে হেজাবিরা (হেফাজত, জামায়াত, বিএনপি) মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির সুযোগ পাচ্ছে। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জীবনে প্রশ্ন করতে পারা হলো বড় কাজ। প্রশ্ন করা মানে এগিয়ে যাওয়া। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রশ্ন করেছেন, তাই তিনি সফল হয়েছেন। এখনকার রাজনীতিবিদরা প্রশ্ন করতে বা শুনতে চান না। নেতা যা বলেন তারা সেটাই করেন। তিনি বলেন, প্রথম কথা হলো ভালবাসা। আমাদের এদেশের প্রতি ভালবাসা থাকতে হবে। এটা ধর্মেও আছে। শিক্ষকদের বেতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষকরা এ দেশের অগ্রযাত্রায় নানা ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আজকে সরকার শিক্ষকদের বলে আমরা যেন বিসিএস পরীক্ষা দেই। শিক্ষকদের অপমান করা হয়। শিক্ষকদের অপমান করলে নির্বাচনে পার পাওয়া যাবে না। আমলাদের মাপকাঠি ধরে শিক্ষকদের বেতন হতে পারে না। বরং শিক্ষকদের মাপকাঠি ধরেই অন্য পেশাজীবীদের বেতন নির্ধারিত হওয়া দরকার। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, জাতীয় অধ্যাপকদের সিনিয়র সচিবদের স্কেলে বেতন দেয়া হয়েছে। আমলাদের সঙ্গে তুলনা পাকিস্তানীদের দৃষ্টিভঙ্গি। স্বাধীন বাংলাদেশে এটা হতে পারে না। অনুষ্ঠান শেষে অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুনকে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তিনি বক্তৃতা করেন।
×