ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ চলে গেলেন জ্যাকব। ৯২ বছর বয়সে চিরবিদায়। এই সুহৃদের জন্য শোক করছে কৃতজ্ঞ বাঙালী। সারা দেশের মতো রাজধানী শহর ঢাকাতেও তাঁর কথাই হচ্ছে শুধু। তাঁর মৃত্যুতে ইতিহাস যেন ফের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের যুদ্ধ জয়ের ইতিহাসের সঙ্গে বিপুলভাবে জড়িয়ে আছেন জ্যাকব। পাকিস্তান বাহিনীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিলেন মিত্র বাহিনীর এই জেনারেল। স্বাধীনতার সংগ্রাম পূর্ণতা পেয়েছিল যে প্রক্রিয়ায়, জ্যাকব তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁর মতো সাহসী চৌকস সর্বোপরি মগজের খেলায় ওস্তাদ সেনা কর্মকর্তা না হলে হয়ত যুদ্ধবিরতিতে হতো বাংলাদেশকে। বিজয় বিলম্বিত হতো। ক্ষয়ক্ষতি বাড়ত। সবই বুদ্ধিমত্তা ও সাহসের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন বাংলাদেশের এই সুহৃদ। তখনও ঢাকায় পাকিস্তান আর্মি সংখ্যায় অনেক বেশি। এ অবস্থায় মাত্র আধা ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে নিয়াজীকে কুপোকাত করেন জ্যাকব। ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে প্রকাশ্যে আত্মসমর্পণ দলিলের সই করে পরাজয় মেনে নেন পাকিস্তান বাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজী। আত্মসমর্পণ দলিলের খসড়াটিও তাঁর নিজের হাতের লেখা। সব মিলিয়ে, এই দেশের জন্মের যুদ্ধে বিরাট অবদান তাঁর। এমন বন্ধুর জন্য রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণার দাবি জানানো হয় গত দুই দিন। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ দাবির পক্ষে বিভিন্ন পোস্ট দেয়া হয়। গত বছর সৌদি বাদশার মৃত্যুতে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেছে বাংলাদেশ। বিষয়টি উল্লেখ করে অনেকেই লিখেছেন- সেটা ছিল কূটনীতি। আর জ্যাকবের জন্য শোক করা হতো আন্তরিক প্রয়াস। বাংলাদেশ রাষ্ট্র এই কৃতজ্ঞতা কেন জানাল না? প্রশ্ন তুলেন অনেকেই। পৌষ মাস গত হয়েছে। বাংলা মাসের শেষ দিন বুধবার ছিল পৌষ সংক্রান্তি। ঐতিহ্যবাহী উৎসবটি অল্প বিস্তর হলেও উদ্যাপিত হয়েছে রাজধানী শহর ঢাকায়। বুধবার পৌষ বিদায়ী উৎসবের আয়োজন করা হয় লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুল এ্যান্ড কলেজ মাঠে। নাচ গান ছিল। ছিল যাত্রাপালার মতো বিশেষ আয়োজন। গ্রামীণ জীবনের সবটুকু আনন্দ নিয়ে হাজির হয় ‘রূপবান’। দেখে যারপরনাই মুগ্ধ ঢাকার দর্শক। লোকপণ্যের প্রদর্শনীও দারুণ আকৃষ্ট করে সকলকে। এদিকে, শুরু হয়ে গেছে নতুন মাস। আজ ২ মাঘ। মাঘের শীতে নাকি বাঘ পালায়। কিন্তু এবার তা হবে কি? মনে হচ্ছে না। শহর ঢাকায় শীত হয়ত বাড়বে। তীব্র শীত অনুভূত হবে না। আর তাহলে উপভোগ্যই থাকবে শীত। পুরনো ঢাকায় শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসব। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দারুণ সরব বিভিন্ন পাড়া মহল্লা। সাকরাইন সংস্কৃত শব্দ সংক্রন থেকে এসেছে। সংক্রনের আভিধানিক অর্থ বিশেষ মুহূর্ত। আর এ বিশেষ মুহূর্তটি পৌষ সংক্রান্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। সাধারণত পৌষ সংক্রান্তির পর দিন ১ মাঘ সাকরাইন উৎসব আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার ঘুড়ি ওড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এবারের উৎসব। প্রথম দিন বিশেষ মুখরিত ছিল পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, বংশাল, সূত্রাপুর, বাংলাবাজার, সদরঘাট এলাকা। সকাল থেকে অধিকাংশ মানুষ ছিলেন বাড়ির ছাদে। ছেলে বুড়ো সবাই মিলে ঘুড়ি উড়িয়েছেন। সাধারণ পথিকও খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে গোটা দিন হরেক রকমের ঘুড়ি দেখেছেন। সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় আগুন নিয়ে খেলা। ফুলের মতো ফুটতে থাকে আতশবাজি। অনেক রাত পর্যন্ত আকাশ আলোকিত করে রাখে আতশবাজির খেলা। প্রতিটি বাড়িতেই বিপুল সাউন্ডে বাজছিল গান। বাদ যায় না পুরান ঢাকার নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজন। বিকেলে গে-ারিয়ার একটি বাড়ির ছাদে উঠে উৎসবে যোগ দিতেই মন ভাল হয়ে যায়। যেদিকে চোখ যায় হাসিরাশি আনন্দ। জাহির আহমেদ আসিফ নামের এক তরুণ জনকণ্ঠকে বলেন, তাঁরা সারা বছর উৎসবটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। এবারও আগে ভাগেই আতশবাজি ও ঘুড়ি কিনে রেখেছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঘুড়ি ওড়ানো শুরু হয়। সন্ধ্যায় চলে আতশবাজি। আজ শুক্রবারও বিভিন্ন এলাকায় উৎসবটি চলবে বলে জানা গেছে। চলচ্চিত্র উৎসবের কথাটিও স্মরণ করিয়ে দেয়া যেতে পারে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৬। আয়োজক- রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ। মূল ভেন্যু করা হয়েছে গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনকে। উৎসবে ৫৮ দেশের ১৭৮টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। বহুদিন পর চলচ্চিত্র উৎসব। ৯ দিনব্যাপী উৎসব শেষ হবে ২২ জানুয়ারি। দারুণ সব ছবি দেখার সুযোগ নিশ্চয়ই কাজে লাগাবেন ঢাকাবাসী।
×