ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম টঙ্গী থেকে ॥ এবারের বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব আজ শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আম বয়ানের মাধ্যমে টঙ্গীর কহর দরিয়াখ্যাত তুরাগ নদীর তীরে শুরু হয়েছে। প্রথম পর্বের পর চারদিন বিরতি দিয়ে শুরু এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। তবে বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর ময়দানের ছামিয়ানার নিচে জমায়েত হওয়া মুসল্লিদের উদ্দেশে অনানুষ্ঠানিক বয়ান শুরু হয়। রবিবার জোহরের নামাজের আগে আখেরি মুনাজাতের মধ্য দিয়ে এবছরের এজতেমা শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্বের এজতেমায় যোগ দিতে ঢাকা জেলার একাংশ এবং ১৫টি জেলার মুসল্লিদের এজতেমা স্থলে আসা অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে এজতেমামুখী মানুষের ঢল নামে টঙ্গীর দিকে। বাস, ট্রাক, ট্রেন, ট্রলারসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে মুসল্লিরা যোগ দিচ্ছেন এজতেমায়। এবার ১৬টি জেলার মুসল্লিদের জন্য এজতেমার পুরো ময়দানকে ২৯টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। আগামী ১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে ৫১তম বিশ্ব এজতেমা। আজ শুক্রবার হওয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে এজতেমা ময়দানে। গাজীপুর, ঢাকার উত্তরা ও আশপাশের এলাকা থেকে লাখ লাখ মুসল্লি যোগ দেবেন এই জু’মার নামাজে। এজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, দ্বিতীয় পর্বের এজতেমায় যোগ দিতে ইতোমধ্যে কয়েক লাখ মুসল্লি এজতেমা মাঠে সমবেত হয়েছেন। তারা নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন। প্রথম পর্বে অংশ নেয়া বেশ কিছু বিদেশী মুসল্লি দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেয়ার জন্য ময়দানের বিদেশী নিবাসে রয়ে গেছেন। দ্বিতীয়পর্বে ১৬ জেলার মুসল্লি অংশ নেবেন ॥ দ্বিতীয় পর্বের এজতেমায় মুসল্লিদের অংশ নেয়ার জন্য জেলাওয়ারি পুরো প্যান্ডেলকে ২৯টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এতে ১৬টি জেলার মুসল্লি অংশ নেবেন। খিত্তা অনুয়ায়ী এসব জেলা হচ্ছে, ১নং থেকে ৭ নং খিত্তায় ঢাকা জেলার বাকি এলাকা, ৮নং খিত্তায় ঝিনাইদহ, ৯ ও ১১ নং খিত্তায় জামালপুর, ১০ নং খিত্তায় ফরিদপুর, ১২ ও ১৩ নং খিত্তায় নেত্রকানা, ১৪ ও ১৫ নং খিত্তায় নরসিংদী, ১৬ ও ১৮ নং খিত্তায় কুমিল্লা, ১৭ নং খিত্তায় কুড়িগ্রাম, ১৯ ও ২০ নং খিত্তায় রাজশাহী, ২১ নং খিত্তায় ফেনী, ২২ নং খিত্তায় ঠাকুরগাঁও, ২৩ নং খিত্তায় সুনামগঞ্জ, ২৪ ও ২৫ নং খিত্তায় বগুড়া, ২৬ ও ২৭ নং খিত্তায় খুলনা, ২৮ নং খিত্তায় চুয়াডাঙ্গা এবং ২৯ নং খিত্তায় পিরোজপুর জেলা। এদিকে এজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়, টঙ্গী সরকারী হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এজতেমা ময়দানের উত্তর নিউ মন্নু কটন মিলের অভ্যন্তরে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যা¤েপ চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি’র ব্রিফিং ॥ বৃহস্পতিবার শহীদ আহসান উল্যাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে বিশ্ব এজতেমায় দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যের উদ্দেশে ব্রিফিং অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মইনুর রহমান চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন ঢাকা রেঞ্জর ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান, গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ প্রমুখ। গাজীপুরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ পিপিএম জানান, পুলিশের প্রায় ৫ সহস্রাধিক সদস্য এজতেমার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে। বৃহ¯পতিবার থেকেই আবার পূর্ণোদ্যমে র‌্যাব ও পুলিশের সদস্যরা স্বস্ব দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। তিনি আরও জানান, বিশ্ব এজতেমার দুই পর্বে মুসল্লিদের নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ ও র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম থেকে তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বের জন্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যেন ঘটতে না পারে সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে নিরাপদ যাতায়াত ও সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকছে ঢাকা মহানগর পুলিশ, ঢাকা ও গাজীপুর জেলা পুলিশ। জানা গেছে, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ৫টি করে স্তরে বিভক্ত হয়ে পোশাকে ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া বাইনোকুলার, মেটাল ডিটেক্টর, নৌ-টহল, চেকপোস্ট ও র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল দিবে বলে জানা গেছে। এদিকে এজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি) বিশেষ ট্রেন সার্ভিস ও বাস চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চিকিৎসা সেবা ॥ গাজীপুরের সিভিল সার্জন জানান, প্রথম ধাপের ন্যায় দ্বিতীয় ধাপেও তাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিক্যাল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করা হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মন্নু গেট, এটলাস গেট, বাটা কারখানার গেটে অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। টঙ্গী হাসপাতালে হৃদরোগ, এ্যাজমা, ট্রমা, বার্ন, চক্ষু এবং ওআরটি কর্নারসহ বিভিন্ন ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চিকিৎসা দেবেন। এ ছাড়াও বেসরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ওষুধ কারখানা প্রতিবছরের ন্যায় এ পর্বেও এজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের ফ্রি চিকিৎসা ও ওষুধপত্র বিতরণ শুরু করেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত ॥ গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে এজতেমা মাঠ ও এর আশপাশ এলাকাকে ২০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রতিদিন ২টি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে। বুধবার বিকেল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের কার্যত্রম শুরু করেছেন। গাড়ি পার্কিং ॥ প্রথম পর্বের ন্যায় দ্বিতীয় পর্বেও বিশ্ব এজতেমায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে টঙ্গী পাইলট স্কুল এ্যান্ড কলেজ মাঠ, টঙ্গী সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি এ্যান্ড কলেজ মাঠ, উত্তরার আজমপুর স্কুল মাঠ, কামারপাড়ায় রানাভোলা মাঠে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
×