ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তেঁতুলিয়া নদীতে নির্বিচারে রেণু পোনা শিকার

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

তেঁতুলিয়া নদীতে নির্বিচারে রেণু পোনা শিকার

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ১৪ জানুয়ারি ॥ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাউফলের তেঁতুলিযা নদীতে অবৈধ বাধা ও বেহুন্দি জাল দিয়ে নির্বিচারে রেণু পোন শিকার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কোন তৎপরতা নেই। জানা গেছে, গত ৪ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত উপকূলীয় ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনার বিভিন্ন নদীতে বাঁধা জাল, বেহুন্দি জাল, কারেন্ট জাল, মশারি জাল, চটজাল, টং জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলেও কার্যত তা মানা হচ্ছে না। এক শ্রেণীর অসাধু জেলে তা অমান্য করে নির্বিচারে রেণু পোনা শিকার করছে। বাউফল উপজেলা মৎস্য অফিসের অফিস সহকারী সোহেল রানা জানান, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ শরীফ হাসান সোহাগ গত ডিসেম্বর মাসে প্রশিক্ষণের জন্য সাভার অবস্থান করছেন। তিনি সেখানে ৬ মাস অবস্থান করবেন। তার অবর্তমানে ডেপুটেশনে বরিশালের নেছারাবাদ থেকে সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা জুলফিকার আলী ও বানারীপাড়া থেকে ক্ষেত্র সহকারী বিনয় কুমার এসে মাঝে মধ্যে নদীতে নিষ্ফল অভিযান চালাচ্ছেন। মূলত পুরো সময়টাই নদী থাকছে অরক্ষিত। এ সুযোগে অসাধু জেলেরা তেঁতুলিয়া নদীর চরওয়াডেল, চরব্যারেট, রায়সাহেব, বগী, মমিনপুর, ধুলিয়া, বাদামতলী, তালতলী পয়েন্টে অসাধু জেলেরা ক্ষতিকর বাঁধা জাল, কারেন্ট জাল, টং জাল, মশারি জালে চাপিলা (ইলিশের বাচ্চা), ভেলিগুরা, কাঁচকি, লাল দগরি, জাটকাসহ ছোট মাছ শিকার করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরওয়াডেল ও চরব্যারেটের একাধিক জেলে জানান, অবরোধের সময় যেমন মা ইলিশ শিকার করেছেন এবার চাপিলা, কাঁচকি, ভেলিগুরা, রেণুপোনা, জাটকাসহ ছোটমাছও শিকার করছেন অনেকে। বাঁধা ও বেহুন্দি জালে ছোট মাছ শিকার করা বন্ধে চরের সাধারণ মানুষসহ জেলেরা গত ২৩ ডিসেম্বর চরওয়াডেল এলাকার নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করলেও তা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রভাবশালী আর প্রশাসনের সহযোহিতা না থাকায় কার্যকর হয়নি। চরব্যারেটের বৌ-বাজার এলাকার মাছের আড়ৎদার শহিদুল খলিফা জানান, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে মা ইলিশ শিকার ছাড়াও এ সময়ে কাঁচকি, চাপিলা, জাটকাসহ বিভিন্ন নামে ছোট মাছ শিকারের কারণে দিনদিন তেঁতুলিয়া মাছশূন্য হচ্ছে। পটুয়াখালী সরকার কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক পীযূষ কান্তি হরি বলেন, ‘বৈষয়িক আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে জলে ও স্থলে। এ সময় ক্ষতিকর জালের ব্যবহার বন্ধ করে মৎস্য ভা-ার সংরক্ষণে ব্যাপক গণসচেতনতা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পূর্ণ সহযোগিতাসহ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। ইলিশ শিকার ছাড়াও কাঁকড়া, কাঁচকি, চাপিলা, লাল দগ্রীসহ ছোট মাছ ও রেণু পোনা নিধনের কারণে মাছশূন্য হচ্ছে তেঁতুলিয়া-লোহালিয়া এই দুই নদী।’ উপজেলা মৎস্য অফিসের লোকবল সঙ্কটের কথা তুলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রশিক্ষণে আছেন। আমাদের বিশাল জলরাশি। আমিও নিজেও অভিযানে বের হই। গত ৭ জানুয়ারি থেকে চার দিনে তেঁতুলিয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান পরিচালনা করে ১৮ লাখ ১২ হাজার ৫শ’ টাকা মূল্যের ৫৫হাজার ৪শ’, ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে মোট ৮৪টি কারেন্ট ও বেহুন্দি জাল আটক করেছি।’
×