ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জিম্বাবুইয়ের ‘যম’ সাকিব

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

জিম্বাবুইয়ের ‘যম’ সাকিব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একটা সময় ছিল, যখন জিম্বাবুইয়ের ‘যম’ বলতে শাহরিয়ার নাফীসকে মনে করা হত। ওয়ানডেতে চার সেঞ্চুরির তিনটিই যে ২০০৬ সালে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তিনি করেছেন। শাহরিয়ারের সেই সময় এখন শুধু কল্পনাই যেন। তবে এখনও জিম্বাবুইয়ের ‘যম’ আছেন। তিনি সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা টি২০ অলরাউন্ডার। সাকিব কিভাবে জিম্বাবুইয়ের ‘যম’ হল? প্রশ্ন উঠতেই পারে। পরিসংখ্যানের দিকে একটু খেয়াল করলেই তা বোঝা যাবে। পরিসংখ্যান ঘেঁটে যতদূর জানা গেল, এখন বাংলাদেশ জাতীয় দলে যেসব খেলোয়ার খেলছেন, তাদের মধ্যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্টে সবচেয়ে বেশি (৬ ম্যাচে ১২ ইনিংসে ৩৯.৫০ গড়ে একটি শতকসহ ৪৭৪) রান করেছেন সাকিব। বল হাতে নিয়েছেন সবচেয়ে বেশি ২৬ উইকেট। ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে (৪৩ ম্যাচে ৩৯.৮৭ গড়ে তিনটি শতকসহ ১৩১৬) সবচেয়ে বেশি রান করেছেন। বল হাতে সবচেয়ে বেশি ৬৮ উইকেট নিয়েছেন। টি২০তে ব্যাট হাতে মাত্র ৩ ম্যাচ খেলেই (৪৩.৬৬ গড়ে ১৩১ রান) সবচেয়ে বেশি রান করেছেন। আর বল হাতে সবচেয়ে বেশি ৭ উইকেট নিয়েছেন। সবদিকেই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে শীর্ষে শুধু সাকিবই। তাহলে জিম্বাবুইয়ের ‘যম’ না হয়ে যান কোথায় সাকিব। ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন ৪২টি। রান করেছেন ৩৯.৭৬ গড়ে ২৮২৩। শতক আছে তিনটি। এরমধ্যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০০, ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসে ১৪৪, ২০১৪ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে খুলনায় প্রথম ইনিংসে ১৩৭ রানের ইনিংস খেলেন। সর্বশেষ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্টে শতক করেন সাকিব। সেই ম্যাচটি আবার হয় খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামেই। এবার যেখানে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে চার ম্যাচের টি২০ সিরিজ হবে। ১৫, ১৭, ২০ ও ২২ জানুয়ারি যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। এ স্টেডিয়ামে ইতিহাস গড়েন সাকিব। সেটি জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্টে। এক টেস্টে শতক ও ১০ উইকেট নেয়ার ক্ষমতা দেখান। এমন দাপটই দেখান যা টেস্ট ক্রিকেটের প্রায় ১৩৯ বছরের ইতিহাসে মাত্র তিনবার ঘটেছে। একবার ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথাম ও আরেকবার ১৯৮৩ সালে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ইমরান খান ঘটিয়েছেন। শেষবার সাকিব ঘটান। টেস্ট ক্রিকেটের শতবর্ষী এমন ইতিহাসে সাকিবও যুক্ত হন। সেটি জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দাপটে খেলেই। বল হাতে ১৪৭ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। এরমধ্যে ২৬ উইকেট জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৫৭ ম্যাচে ৬টি শতকসহ ৩৫.১৮ গড়ে ৪৩৯৮ রান করেছেন সাকিব। এরমধ্যে তিনটিই করেছেন জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। ২০০৭ সালে কানাডার বিপক্ষে অপরাজিত ১৩৪, ২০০৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০৮, ২০০৯ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ১০৪ ও অপরাজিত ১০৫, ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৬, ২০১৪ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ১০১ রান করেছেন। এতেই বোঝা যাচ্ছে জিম্বাবুইয়েকে পেলে সাকিব কতটা বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। বল হাতে যে ২০৬ উইকেট নিয়েছেন, এরমধ্যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেই ৬৮ উইকেট শিকার করেছেন। টি২০ ক্যারিয়ারে যেখানে ৩৮ ম্যাচে ২৪.০৮ গড়ে ৮৪৩ রান করেছেন, সেখানে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ১৩১ রান আসে। এর কারণ খেলেছেন মাত্র ৩টি ম্যাচ। বল হাতে ৪৫ উইকেট নেয়ার মধ্যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৭ উইকেট তুলে নিয়েছেন। এক ইনিংসে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্টে গত বছর যে ১৩৭ রান করেছিলেন সাকিব, সেটি জিম্বাবুইয়ানদের বিপক্ষে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ইনিংস। টি২০তে ২০১৩ সালে যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৬৫ রান করেছেন, সেটি এক ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ইনিংস হয়ে আছে এখনও। বল হাতে এক ইনিংসে টেস্টে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৬ উইকেট নেয়া ও ওয়ানডেতে ৫ উইকেট নেয়াদের কাতারে আছেন সাকিব। টি২০তে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেয়া বোলার সাকিবই। এখন বিশ্বসেরা টি২০ অলরাউন্ডার সাকিব। তার সামনে আরেকটি ইতিহাস গড়ার হাতছানি দিচ্ছে। বিশ্বে টি২০ ক্রিকেটে দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে পাকিস্তানের অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদির পর এক হাজার রান ও ৫০ উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়ার সামনে সাকিব। এ জন্য প্রয়োজন ১৫৭ রান ও ৫ উইকেট। এই রান করতে পারলে টি২০তে এখন সবচেয়ে বেশি ২৪.০৮ গড়ে ৮৪৩ রান করা সাকিব প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে টি২০তে এক হাজার রান করার রেকর্ডও গড়বেন। সেই সঙ্গে বল হাতে ৫ উইকেট নিতে পারলে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে টি২০তে ৫০ উইকেট শিকারের রেকর্ডও হয়ে যাবে। ‘বাংলাদেশের জান, বাংলাদেশের প্রাণ সাকিব আল হাসান’ যেভাবে জিম্বাবুইয়ে শিবিরে আতঙ্ক তৈরি করে ‘যম’ হয়ে উঠেছেন তাতে এমন রেকর্ডগুলো হওয়াটা স্বাভাবিকই। সাকিব তাই বলেছেন, ‘লক্ষ্য ভাল পারফর্ম করা। দলকে জেতাতে সাহায্য করা। জয়ে অবদান রাখা। একইসঙ্গে উন্নতি করতে থাকা।’ এবারও কী জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ‘যম’ হয়ে উঠতে পারবেন সাকিব?
×