ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ে চার ম্যাচের টি২০ সিরিজ শুরু আজ

সামনে আবার সেই জিম্বাবুইয়ে

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

সামনে আবার সেই জিম্বাবুইয়ে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দুই বছর আগে ২০১৪ সালটি বাংলাদেশের ক্রিকেটে যেন অন্ধকার নেমে আসে। সেই বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধুই ‘কালো ধোয়া’ দেখা যায়। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধুই হার হয় নিয়তি। এরপর একমাস বিরতি মিলে। অক্টোবরের শেষদিকে যেই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ শুরু হয় তখন বাংলাদেশ দল যেন বদলে যায়। বদলে যাওয়া বাংলাদেশকেই মিলে যায়। সেই যে বদল মিলে তা এখনও চলছে। সেই বদলের হাওয়া ক্রিকেটারদের গায়ে এমনভাবে লাগে ২০১৫ সালটি ‘সোনালি বছরে’ই পরিণত হয়। শুধুই জয় আর জয় মিলে। ক্রিকেটপ্রেমীরাও বছর জুড়ে শুধু আনন্দই পেয়ে যান। নতুন বছরে সেই জিম্বাবুইয়ে দলের বিপক্ষেই আবারও সিরিজ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। চার ম্যাচের টি২০ সিরিজ হবে এবার। আজ প্রথম টি২০ দিয়ে সিরিজ শুরু হবে। এরপর রবিবার দ্বিতীয়, ২০ ও ২২ জানুয়ারি যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ ম্যাচে জিম্বাবুইয়ের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সব খেলা খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে দুপুর ৩টায় শুরু হবে। এবার কী ঘটবে? স্বাভাবিকভাবেই ফেবারিট দল বাংলাদেশ। এখন জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে খেলা মানেই হলো বাংলাদেশের জয়। সেটি সবারই জানা আছে। অথচ একটা সময় ছিল ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জিম্বাবুইয়ের কাছে শুধু হেরেছেই বাংলাদেশ। এরপর দৃশ্য পাল্টে যেতে থাকে। ২০০৫ সালে গিয়ে জিম্বাবুইয়েকে প্রথমবারের মতো টেস্টে হারায় বাংলাদেশ। যেটি বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট জয় ছিল। পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও জয় পায় বাংলাদেশ। সেই যে জয় পাওয়া শুরু হয় হার-জিত, হার-জিতের মধ্য দিয়েই সময় যেতে থাকে। ২০০৬ সালে গিয়ে তো একবার টানা ৯টি ম্যাচে জিতে বাংলাদেশ। এরমধ্যে একটি টি২০ ম্যাচও ছিল। যেটি খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে হওয়া ইতিহাসের প্রথম টি২০ ম্যাচ। ২০০৯ সাল থেকে জয়ের সংখ্যা বাংলাদেশেরই বেশি। ২০১৩ সালের শেষদিক থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০ মিলিয়ে টানা ১৩টি ম্যাচে জিতে বাংলাদেশ। তাতেই বোঝা যায় কী পরিমাণ আধিপত্য বিস্তার করে খেলে বাংলাদেশ। গত বছর যে স্বর্ণময় সময় কাটিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট, শেষটায় অবশ্য জিম্বাবুইয়ের কাছে গিয়ে টি২০তে হার হয়। অথচ এই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২০১৪ সালের অক্টোবরে ম্যাচ দিয়েই জয়ের ধারায় ফিরে বাংলাদেশ। যা এখনও বজায় আছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলা দিয়ে বছরটি শুরু হয়। প্রথম টেস্টে হারের পর দ্বিতীয় টেস্ট ড্র করে বাংলাদেশ। এরপর টানা দুটি টি২০ সিরিজে হারে। যদিও ম্যাচ দুটিতে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। কিন্তু হার ঠিকই হয়। যে হারগুলো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মানসিক ভিতও দুর্বল করে দেয়। এরপর মাঝখানে টি২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে আফগানিস্তান ও নেপালের বিপক্ষে জয় ছাড়া সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আর কোন জয়ই মিলেনি। বছরটিতে চার টেস্টের তিনটিতে হারে। একটিতে ড্র হয়। ১০টির মধ্যে ৮টিতেই হারে বাংলাদেশ। আর ১২ ওয়ানডের সবকটিতে হারে। বছরটিতে মোট ২৬টি ম্যাচের মধ্যে ২৪টিতেই হার হয়। এমন করুণ অবস্থার মধ্য দিয়ে যায় বাংলাদেশ। এমন যখন অবস্থা তখন অক্টোবরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ সিরিজে খেলতে নামে বাংলাদেশ। শুরুতে তিন টেস্টের সিরিজ হয়। তাতে সবকটি ম্যাচে জিতে বাংলাদেশ। এই যে জয় মিলে এরপর শুধু জয়ই মিলতে থাকে। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররাও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। হারের গোলকধাঁধা থেকে দল বের হয়ে যায়। মুশফিকের নেতৃত্বে টেস্ট জিতে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়েকে পাত্তাই দেয় না। এই যে মানসিকভাবে সবল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ সেই মানসিকতা এখনও বিরাজমান। এ বছরটিতে নির্ধারিত ওভারে বাজে নৈপুণ্য দেখানোয় মুশফিকুর রহীমকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে ওয়ানডে ও টি২০’র নেতৃত্ব দেয়া হয়। মাশরাফির নেতৃত্বগুণে এরপর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে পাঁচ ওয়ানডের সবকটিতে জিতে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে। জিম্বাবুইয়েকে টেস্ট ও ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করায় বছরের শেষদিকের সাফল্যে একটু হলেও বছর জুড়ে ব্যর্থতায় প্রলেপ দেয়া যায়। এরপর তো বাংলাদেশ শুধু জিতেই যাচ্ছে। ২০১৫ সালে টানা জয় হয়। বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে দল। পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজে হারিয়ে দেয়। বছরের শেষদিকে গিয়ে আবার জিম্বাবুইয়েকেও হারায় বাংলাদেশ। বছরটিতে ৫ টেস্ট খেলে একটিতে হার, ৫ টি২০ খেলে দুটিতে জয় ও ১৮টি ওয়ানডে খেলে ১৩টিতেই জিতে বাংলাদেশ। দুর্দান্ত বছর কাটে। এরচেয়ে বেশি জয় অন্য বছরে আছে। তবে কোন বছরেই পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে সিরিজে হারানোর কৃতিত্ব যুক্ত হয়নি। ২০১৫ সালে তা হয়েছে। এই যে দুর্দান্ত বছর মিলেছে সেটি জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২০১৪ সালের শেষদিকে যে বাংলাদেশ জয়ে ফিরেছে, তার জন্যই হয়েছে। এমনই ধারণা। এবার যখন নতুন বছরে খেলতে নামবে বাংলাদেশ, আবারও জিম্বাবুইয়েই প্রতিপক্ষ। এবার চারটি টি২০ খেলা দিয়ে বছর শুরু করবে বাংলাদেশ। যে ফরমেটে বাংলাদেশ দুর্বল দল। ৪৬টি টি২০ খেলে এখন পর্যন্ত ১৩টিতে জয় পেয়েছে। ৩২টিতেই হেরেছে। একটি ম্যাচে রেজাল্ট হয়নি। খুবই খারাপ অবস্থা। আবার নতুন বছরটিতেই টানা টি২০ খেলবে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজের পর এশিয়া কাপ টি২০ ও টি২০ বিশ্বকাপ রয়েছে। টানা টি২০ খেলার মধ্যেই থাকতে হবে মাশরাফির দলকে। তবে এ ফরমেটে জিম্বাবুইয়ের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশই। দুইদলের মধ্যকার ৫টি টি২০ ম্যাচ হয়েছে। তিনটিতে বাংলাদেশ জিতেছে। দুটিতে জিতেছে জিম্বাবুইয়ে। সম্প্রতি জিম্বাবুইয়ের যে অবস্থা, আফগানিস্তানের কাছেই নাকানি-চুবানি খায়। সেই দলটি এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামবে। আফগানদের কাছে একের পর এক ম্যাচে হেরেই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামবে। এবার বাংলাদেশও জিতে গেলে হয়। তাহলে বছরটা জয় দিয়েই শুরু হবে। সেই জয় বাংলাদেশকে আবারও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ২০১৪ সালের সেই জিম্বাবুইয়ে নাজেহাল হয়েছে। এই জিম্বাবুইয়ের হালও সেই রকম হলেই হয়। তাতে আবারও বাংলাদেশের নতুন বছরটিও রাঙিয়ে উঠতে পারে।
×