ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আল্টিমেটাম শেষে নোটিস

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬

আল্টিমেটাম শেষে নোটিস

সরকারের সর্বশেষ বেঁধে দেয়া ৭২ ঘণ্টা আল্টিমেটামের পরও হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তর করা হয়নি ট্যানারি শিল্প। মালিকপক্ষ তাদের অবস্থানে এখনও অনড়। দফায় দফায় আল্টিমেটাম ও নোটিস প্রদানের মধ্যেই সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর আটকে আছে। এর আগে গত বছরে তিন দফা তা স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়া হলেও কার্যকর হয়নি। এরপর চলতি সপ্তাহে শিল্পমন্ত্রী ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, স্থানান্তর করা না হলে কারখানাগুলো বন্ধ শুধু নয়, সাভারে বরাদ্দ প্লটও বাতিল করা হবে। কিন্তু এ ঘোষণায়ও কাজ হয়নি। মালিকরা সরানোর কোন উদ্যোগও নেননি। ফলে প্লট বাতিল করা হবে না কেন তা জানতে চেয়ে মালিকদের বরাবর উকিল নোটিস পাঠানো হয়েছে। এমনিতেই সরকার বার বার সময় বেঁধে দিলেও মালিকদের দাবির মুখে তা পেছাতে হয়েছে। বিসিক ও ট্যানারি মালিকদের দুই সংগঠনের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী মালিকদের ২০১৪-এর ডিসেম্বরের মধ্যে সব ট্যানারি স্থানান্তর এবং উৎপাদন শুরুর কথা। কিন্তু তা হয়নি। পরে ২০১৫’র জুনের মধ্যে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হলেও কাজ আর হয়নি। অথচ তারা ক্ষতিপূরণের অর্থও নিয়েছেন। ২০০১ সালে উচ্চ আদালত ট্যানারি কারখানাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল বর্জ্য পরিশোধক ব্যবহারে। কিন্তু কেউ তার ধারেকাছেও যায়নি। হাজারীবাগ ট্যানারির ক্ষতিকর বর্জ্য চারপাশের পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, ভয়ঙ্করও। যা প্রত্যক্ষভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বুড়িগঙ্গা নদীসহ হাজারীবাগের বিস্তীর্ণ এলাকার মাটি, পানি ও বাতাসেও। অথচ এসব স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বহুদিন ধরেই। স্থানান্তর প্রক্রিয়া ধীর হওয়ার অর্থই হচ্ছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর প্রবহমান ক্ষতি আরও বৃদ্ধি পাওয়া। ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ায় পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আশপাশের পরিবেশ দূষিত হয়েই আছে। বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে জটিল রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছে। এ কারণেই শুধু নয়, পাশ্চাত্যরা পরিবেশবান্ধব কারখানা না হলে পণ্য না নেয়ার হুমকিও দিয়েছে। রাজধানীকে দূষণমুক্ত ও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হলে এক সঙ্গে আবাসিক ও শিল্পাঞ্চল থাকতে পারে না। স্থানান্তরিত হলে এ শিল্পের যেমন উন্নয়ন হবে, তেমনি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানিও বাড়বে। তাই সময়ক্ষেপণের সংস্কৃতি থেকে অনেক আগেই বেরিয়ে আসা উচিত ছিল। সম্ভাবনাময় একটি শিল্পের উন্নয়ন ঘেরাটোপে আটকে যাওয়াও গ্রহণযোগ্য নয়। এটা তো বাস্তব যে, দেশের চামড়া শিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি শিল্প। রফতানি খাতে আয়ও এক শ’ কোটি ডলারের মতো। এই খাতে কর্মসংস্থান রয়েছে কয়েক লাখ মানুষের। ফলে ট্যানারি স্থানান্তর সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা গেলে একদিকে যেমন অগ্রগতি বেগবান হবে এই শিল্পের, তেমনিভাবে নদীসহ চারপাশের পরিবেশ হবে আশঙ্কামুক্ত। আর চামড়া শিল্পের যে সম্ভাবনা তার যথার্থ অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে এই ট্যানারিগুলো স্থানান্তরসহ সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাও জরুরী। বিদেশী ক্রেতারা জানিয়ে দিয়েছে যে, পরিবেশের উন্নতি না হলে বাংলাদেশ থেকে চামড়া কিনবে না তারা। সাভারে ২০০ একর জায়গায় ট্যানারি শিল্পনগরীর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০০৫ সালে। নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটি সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১০ সাল পর্যন্ত। ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকায়। তাতেও কাজ শেষ হয়নি। ব্যয় না বাড়িয়ে আবারও ২০১২ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হলেও কাজ শেষ হয়নি। সর্বশেষ ২০১৩ সালের আগস্টে দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন হয় একনেকে। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকায়। ২০৫টি প্লটে ১৫৫টি কারখানা হচ্ছে। বিদ্যুত ও গ্যাস ব্যবস্থাপনা এবং অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার ও ডাম্পিংইয়ার্ড নির্মাণের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ট্যানারি মালিকদের মধ্যে নানা বিষয়ে দ্বন্দ্বের জেরে স্থানান্তরে বিলম্ব ঘটছিল। তাছাড়া সম্পূর্ণরূপে কারখানা নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে, এমন একটি কারখানাও নেই। ৬০-৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্নের পর নানা দাবি-দাওয়া করে কাজ বন্ধ রেখেছে। এত সুযোগ-সুবিধার পরও মালিকদের সময়ক্ষেপণ জনউদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া জরুরী।
×