ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জুঁইয়ের ‘একটা শালিক’...

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬

জুঁইয়ের ‘একটা শালিক’...

রোবেনা রেজা জুঁই। অভিনেত্রী। আরেকটা পরিচয়ও আছে তাঁর। মোশারফ করিমের ঘরণী। অর্ধ-শতাধিক নাটকে অভিনয় করে ফেলেছেন ইতোমধ্যেই। সিনেমাতেও নাম লিখিয়েছেন। নতুন একটি খবর আছে। প্রথমবারের মতো কোন মিউজিক্যাল ফিল্মেও অংশগ্রহণ করে ফেলেছেন জুঁই। বিস্তারিত লিখেছেন- মাহবুবুর রহমান সজীব যতই দিন গড়াচ্ছে, ততই মানুষ অডিওর চেয়ে ভিডিওতে বেশি মনোনিবেশ করছে। এটার পেছনে অনেক রকম কারণ থাকতে পারে। সেসব নিয়ে আলোচনা করারও সুযোগ আছে যথেষ্ট। আপাতত মূল প্রসঙ্গেই থাকা যাক। নতুন বছরের প্রথম মিউজিক্যাল ফিল্ম হিসেবে ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে তো বটেই, টিভি চ্যানেলগুলোতেও প্রকাশ পেয়েছে মানিক-মুনাইমের গান ‘একটা শালিক’। ‘একটা শালিক বেড়ায় ঘুরে সারাজীবনময়/কখনো মেঘ কখনো রোদ-বৃষ্টির অপচয়..’- এমনই কথার গানটি এসেছে মাহবুবুর রহমান সজীবের লেখনী থেকে। সুর করেছেন মানিক নিজেই সঙ্গীতায়োজনে জিএস তুহিন। মানিকের গল্প ভাবনাকে সামনে রেখে চিত্রনাট্য তৈরি ও ভিডিও পরিচালনা করেছেন সীমান্ত সজল। ব্রিটিশ শাসনামলের একজন জমিদারের অত্যাচার ও নিপীড়নের ঘটনাকে তুলে ধরা হয়েছে এ কাহিনীচিত্রে। জমিদারের পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ফিল্মটি। গল্পচিত্রের পাশাপাশি গানটিতে লিপসিং করেছেন মানিক ও মুনাইম। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন মাহমুদুল ইসলাম মিঠু, রোবেনা রেজা জুঁই, চিত্রনায়ক সুমিত, মুকুল সিরাজসহ একডজন অভিনেতা-অভিনেত্রী। ‘একটা শালিক’ প্রসঙ্গে জুঁই করিম বললেন, ‘প্রথমবারের মতো কোন মিউজিক ভিডিওতে অংশ নিলাম। এটাকে আসলে মিউজিক ভিডিও না বলে বলতে হবে মিউজিক্যাল ফিল্ম। একজন কৃষকের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করে আমি পরিতৃপ্ত। আসলে, গানের গল্পটাই চমৎকার।’ জনপ্রিয় অভিনেতা মাহমুদুল ইসলাম মিঠু বললেন, ‘একটা শালিকের মতো নান্দনিক ভিডিও হলে আমাদের মতো শিল্পীরা অভিনয় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এ ধরনের ব্যতিক্রমী ভিডিও বেশি বেশি হওয়া উচিত।’ অভিনেতা মুকুল সিরাজ মনে করেন, ‘একটা শালিকের মতো কাহিনীনির্ভর ভিডিও দিয়ে দর্শকদের আবারও বাংলা গানমুখী করা সম্ভব।’ গানটির শিল্পী, সুরকার ও ভিডিও’র গল্পকার আমিরুল মোমেনীন মানিক জানালেন, ‘ভাল মানের গান হলে অবশ্যই শ্রোতা-দর্শকদের বিদেশী গান থেকে ফিরিয়ে আনা যাবে। একটা শালিকে নিরন্তরভাবে সেই চেষ্টাই করা হয়েছে।’ একটা শালিকের চিত্রনাট্যকার ও ভিডিও নির্মাতা সীমান্ত সজল বললেন, ‘প্রচলিত মিউজিক ভিডিওর ধারণাকে ভেঙে দিতেই এই প্রয়াস।’ কাজ তো অনেক করেছেন জুঁই। অভিনয়টা কেমন করেন? ‘আমি ওর সঙ্গে কয়েকটা নাটকে কাজ করেছি। আমার চোখে ওর খুঁত বেশি ধরা পড়ে। তবে ওর মেধা আছে, চেষ্টা করলে আরও ভাল করবে। ওর ভাল একটা গুণ হচ্ছে, কোন বিষয় ধরিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যায়।’- বছর দু’য়েক আগে রোবেনা রেজা জুঁইয়ের অভিনয় সম্পর্কে এমনই মতামত ছিল জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিমের। মেঘে মেঘে বেলা পেরিয়েছে অনেক। ব্যস্ততাও বেড়েছে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। দিনকে দিন নিজেকে আরও বেশি মেলে ধরছেন জুঁই। তাঁর শুরুর গল্পটা চমৎকার। ‘তখন ২০০১। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রথমবর্ষের ছাত্রী। পড়াশোনার ফাঁকে অফুরন্ত সময়। ইচ্ছে হলো, মঞ্চনাটকে কাজ করব। নাটক আর গানের প্রতি আমার ঝোঁক ছিল প্রবল। কিন্তু বাবার ইচ্ছে, সবকিছুর আগে পড়াশোনা। সঙ্গীতচর্চার ব্যাপারে তার তেমন আপত্তি ছিল না। ভর্তি হই হিন্দোল সঙ্গীত একাডেমিতে। নাটক আর করা হলো না।’ বলছিলেন জুঁই। ২০০৫ এল। স্নাতকোত্তর শেষবর্ষের ছাত্রী তিনি। থিসিস লিখছেন। বিষয় ‘টেলিভিশন নাটকে নারী অভিনয় শিল্পীদের অবস্থান’। তাই তাকে ছুটতে হয়েছে দেশের নারী অভিনয় শিল্পীদের কাছে। কখনো তাঁদের বাসায়, কখনো শূটিং স্পটে। নাটকের বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে চলছিল তাঁর নিবিড় গবেষণা। চরিত্রগুলোর সঙ্গে মেলামেশা করতে গিয়ে মনের অজান্তে অভিনয়ের অন্যরকম স্বাদ পান জুঁই। মনে বাসা বাঁধে পরিপূর্ণ অভিনয়শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে কঠিন আত্মবিশ্বাস। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে ২০১০ সালের অক্টোবরে জুঁই প্রথম অভিনয় করেন ‘সিমিলার টু’ নাটকে। সেই থেকে পথচলা শুরু। সময়ের পাখায় ভর করে নিরন্তর এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ‘একটা শালিক’ মিউজিক্যাল ফিল্মে এসেছেন গরিব কৃষকের স্ত্রী হিসেবে। জমিদারের অত্যাচারের যাঁতাকলে পিষ্ট প্রান্তিক শ্রেণী। রেহাই পায় না তার স্বামীও। অবশেষে জুঁইকেও সম্ভ্রমহানির শিকার হতে হয়। কিন্তু তাতে কী! সবকিছুরই পতন অনিবার্য। সৃষ্টির বৈশিষ্টই এটা। ‘গলে গলে যায় বরফঘেরা মন, পিছু ফিরে ডাকে একটাই জীবন। ফুরালে প্রেম দেহের হেম, ব্যথাই সঞ্চয়..।’ এই তো নিয়ম। জমিদারেরও পতন হয়েছে একটা শালিকের গল্পে। তবুও কেউ বোঝেনা সময় থাকতে। সবাই এত অবুঝ কেন! অথচ সবাই-ই জানে, ‘ভীষণ মায়ায় মধ্যদুপুর শেষে, সব হাহাকার ধুলোর সঙ্গে মেশে। উচ্ছ্বাসে তার সন্ধে এলেও দুঃখ পড়ে রয়..।’ একটা শালিক কতদিন বাঁচে? মেঘ, রোদ আর বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হঠাৎই একদিন হাওয়া হয়ে যায়, মিশে যায় মাটির শরীরে। সব শালিকের গল্পই এক। ভীষণ মায়ায় কাটে যৌবনকাল। অতঃপর শুধুই হাহাকার.. কখনো কখনো বাইরে খুব উচ্ছ্বাস দেখালেও ভেতরের কোথাও একটা কষ্ট কষ্ট অনুভূতি কিন্তু রয়েই যায়। হায়.. জীবন তো একটাই। হোক শালিকের, হোক মানুষের...
×