ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ট্যানারি কারখানার মালিকদের উকিল নোটিস;###;নোটিস পাঠিয়েও কাজ না হলে লাইসেন্স, প্লট বাতিল ॥ শিল্পমন্ত্রী

৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে ব্যর্থ হলে গ্যাস-বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬

৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে ব্যর্থ হলে গ্যাস-বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বার বার তাগিদ দেয়ার পরও কেন সাভার শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তরের কাজ শুরু করা হয়নি, তা জানতে চেয়ে হাজারীবাগে অবস্থিত ট্যানারি কারখানার মালিকদের উকিল নোটিস দিয়েছে সরকার। আগামী তিন কার্যদিবসের (৭২ ঘণ্টা) মধ্যে নোটিসের জবাব দিতে ব্যর্থ হলে বা সাভারে ট্যানারির কাজ শুরু না করলে তাদের গ্যাস-বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও নোটিসে জানানো হয়। উকিল নোটিসটি পাঠিয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোটেক শহীদুল ইসলাম। বুধবার বেলা ১২টায় এ নোটিস পাঠানো হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালক মোঃ আবদুল কাইউম। এদিকে বুধবার সকালে এক অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নোটিস পাঠিয়েও কাজ না হলে নির্দেশ অমান্যকারী ট্যানারির লাইসেন্স বাতিল এবং সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে তাদের প্লটও বাতিল করা হবে। চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালক মোঃ আবদুল কাইউম বলেন, একাধিকবার তাগিদ দেয়ার পরও ট্যানারি মালিকরা সাভারে স্থানান্তর কাজ শুরু করেননি। তাই তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তা জানতে উকিল নোটিস পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নোটিস প্রাপ্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব না পেলে কারখানাগুলোর গ্যাস বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলেও নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে। চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালক মোঃ আবদুল কাইউম বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ২৭ বার তাগিদ দিয়েছি হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি কারখানা স্থাপন কাজ ত্বরান্বিত করতে। তাই তাদের বরাদ্দ দেয়া প্লট কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে নোটিসে। তিনি বলেন, ২৮ ট্যানারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণের ২০ শতাংশ অর্থ নিয়েছে। কিন্তু তারা দৃশ্যমান কোন ধরনের কাজ সাভারে করেনি। তাই তাদের নোটিস দেয়া হযেছে। নোটিস পাওয়ার পর তারা কার্যক্রম শুরু করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে না। আর যদি কোন ধরনের স্থানান্তরের কাজ না করে তাহলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা গেছে, শিল্প মালিকদের কাছে সরাসরি এবং ডাকযোগে দুই উপায়েই নোটিস পাঠানো হয়েছে। যদি কোন কারখানা মালিককে না পাওয়া যায় তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের গেটে নোটিস টানিয়ে দিয়ে আসা হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানকে নোটিস প্রদান করা হয়েছে সেগুলো হলোÑ মেসার্স কাদের লেদার কমপ্লেক্স, ঢাকা ট্যানারি, ইউসূফ লেদার কর্পোরেশন, ইব্রাহিম লেদার, চাঁদপুর ট্যানারি, সিটি লেদার ট্যানারি, ক্যাপিটাল ট্যানারি, ইন্টারন্যাশনাল ট্যানারি, ভূঁইয়া ট্যানারি, রুবি লেদার কমপ্লেক্স, হোসেন ব্রাদার্স ট্যানারি, ইউসূফ ট্যানারি, চৌধুরী লেদার এ্যান্ড কোং, হেলেনা এন্টারপ্রাইজ, আলেয়া ট্যানারি, শাহী ট্যানারি, নজরুল ট্যানারি, রোশনী কমপ্লেক্স, কমলা ট্যানারি, জিন্দাবাদ ট্যানারি, পাইওনিয়র ট্যানারি, আজিজ ট্যানারি, মুক্তি ট্যানারি, লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ, ডেল্টা লেদার কমপ্লেক্স, গোন্ডেন লেদার এবং এইচএস ট্যানারি। এর আগে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সকালে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জানান, যেসব ট্যানারি মালিক নির্দেশনা মানবে না, তাদের ক্ষেত্রে সরকার আইনী পথেই হাঁটবে। নোটিস পাঠিয়েও কাজ না হলে নির্দেশ অমান্যকারী ট্যানারির লাইসেন্স বাতিল এবং সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে তাদের প্লটও বাতিল করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। গত রবিবার ‘শিল্প খাতের উন্নয়নে চলতি অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম মূল্যায়ন’ সভায় শিল্পমন্ত্রী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হাজারীবাগ না ছাড়লে ট্যানারিগুলো বন্ধের নির্দেশ দেন। নির্ধারিত সেই সময় শেষ হচ্ছে বুধবার। এ পরিস্থিতিতে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি উচ্ছেদ করা হবে কিনাÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আমু বলেন, তাদের নোটিস পাঠানো হবে। যেহেতু এটা আইনী প্রক্রিয়ার ব্যাপার, সেহেতু নোটিসের মাধ্যমেই তা করতে হবে। হুট করে করা যাবে না। নির্দেশ অমান্যকারী ট্যানারি মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই ট্যানারিগুলোর কারণে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা সমস্ত নদী শেষ হয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ ট্যানারি মালিকের সাভারে প্লট আছে, নির্দেশ না মানলে তা বাতিল করা হবে। প্লট বরাদ্দ পাওয়ার জন্য বহু ব্যবসায়ী অপেক্ষা করছেন, প্রয়োজনে তাদের দিয়ে দেব। রাজধানীর পরিবেশ রক্ষায় হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলো সরিয়ে নিতে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলা হলেও ব্যবসায়ীরা তাদের আগের স্থান ছাড়তে অনাগ্রহী। বিসিক সূত্রে জানা গেছে, এসব ট্যানারি কারখানা আগামী ৭২ ঘণ্টার (তিন কার্যদিবস) মধ্যে হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থাপনের কাজ শুরু না করলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্যাস বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে।
×