ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সঙ্কট নিরসনের দিক নির্দেশনা নেই

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সঙ্কট নিরসনের দিক নির্দেশনা নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমান সরকারের দুই বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে জাতি হতাশ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের দিকনির্দেশনা ছিল না। বুধবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি অবিলম্বে সকল দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, জাতির প্রত্যাশা ছিল, দেশে যে রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তার একটি দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য প্রধানমন্ত্রী একটি রুটিন বক্তব্য রেখেছেন। তাঁর ভাষণে নির্বাচন ব্যবস্থাকে দলীয় প্রভাব মুক্ত করা এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার কোন দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি। গত দু’বছর ধরে সরকার গণতন্ত্রের মুখোশ পরে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। ফখরুল বলেন, গত দুই বছর ছিল গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করার সময়। এ সময়ে গণতন্ত্রের মুখোশ পরে একদলীয় শাসন কাজ এগিয়ে নেয়া হয়েছে। এ ২ বছর নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি দলীয়করণ করে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষাকে ভূলুণ্ঠিত করার সময়কাল। দুই বছর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে অদ্ভুত নির্বাচন অভিহিত করে তিনি বলেন, ওই নির্বাচন ছিল প্রহসন। রাবার স্ট্যাম্প সংসদ ও অদ্ভুত সরকার গঠন করে প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং ২০১৫ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। ওইসব নির্বাচনে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন দেখা যায়নি। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে কারচুপি, জাল ভোটের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণে সরকার তার দলকে ক্ষমতায় রাখার ব্যবস্থা করেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, গত ২ বছর ছিল বিরোধী দল ও মতের ব্যক্তিদের ওপরে সীমাহীন নির্যাতন ও দমনপীড়নের নজিরবিহীন উদাহরণ। এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, বিএনপি অবৈধ ও জিয়াউর রহমান অবৈধ রাষ্ট্রপতি বলে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য অপ্রাসঙ্গিক। বিএনপি যদি অবৈধ হয় তাহলে আওয়ামী লীগও অবৈধ। কারণ ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করা হয়েছিল। পরে জিয়াউর রহমান শাসনামলে আওয়ামী লীগ নিবন্ধিত হয়। ওই সরকারের অধীনেই তারা সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। দেশের মূল সমস্যা থেকে জনদৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু হয়। বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগে বেশি মুক্তিযোদ্ধা আছে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র, আজ সেই গণতন্ত্রকে সরকার নির্বাসিত করেছে। আমরা সেই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে যাচ্ছি। মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জোর দিয়ে বলেছেন, গণমাধ্যম এখন স্বাধীন। এই বক্তব্য কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যম এই সময়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনকিছুই বলতে পারছে না। সরকার সুপরিকল্পিতভাবে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে। ভিন্নমতের পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নেয়ার দাবি করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। উন্নয়ন নয়, দেশকে লুটপাটের মহাসড়কে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি শেষ অর্থবছরে দেশে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশে রেখে গিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার গত সাত বছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশে নিতে পারেনি। মঈন খান বলেন, ২০০৬ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত সরকার কোটি কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট দিয়ে রাজধানীর প্রসাধনীর লেপন দেয়ার প্রয়াসে গ্রামীণ অর্থনৈতিক কাঠামোকে লুটপাট করেছে। তিনি বলেন, শুধু বিদেশী বিনিয়োগ নয়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাবে কোন দেশীয় বিনিয়োগকারী কয়েক বছরে একটি টাকাও বিনিয়োগ করেনি। ফলে সেই টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে, সুইস ব্যাংকে রাখা হয়েছে। দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিজ অর্থায়নে করার নামে দরিদ্র মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে।
×