ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ময়মনসিংহে পুষ্পমেলা

ডালিয়া গাঁদা বাগানবিলাস বাহারি ফুলের স্টল উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬

ডালিয়া গাঁদা বাগানবিলাস বাহারি ফুলের স্টল উপচেপড়া ভিড়

বাবুল হোসেন ॥ শহরের টাউনহল প্রাঙ্গণের পুষ্পমেলায় ডালিয়া কসমস চন্দ্রমল্লিকা বাগানবিলাস গাঁদা গোলাপ ও জারবেরাসহ দেশী-বিদেশী হাজারো রঙিন ও বর্ণাঢ্য ফুলের সমাহার মেলে বসেছেন বিভিন্ন নার্সারির স্টল মালিকেরা। এসবের বাইরে বিভিন্ন দেশের ফলদ ও ওষুধি বৃক্ষরাজিও রাখা হয়েছে মেলার বিভিন্ন স্টলে। দর্শনার্থীদের জন্য আরও বাড়তি পণ্যের মধ্যে রাখা হয়েছে সরিষা ও কালো জিরা ফুল থেকে সংগৃহীত খাঁটি মধুসহ সব ধরনের খেলনা ও কসমেটিক্স আইটেমও। ময়মনসিংহ পৌরসভার উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত ২০ দিনব্যাপী এ পুষ্প মেলায় প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভিড় জমাচ্ছে নানা বয়সী প্রকৃতি প্রেমিক অসংখ্য মানুষ। এর মধ্যে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ তরুণ-তরুণীদের ভিড় উপচে পড়া। চলতি সালের গত ১ জানুয়ারি শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। পুষ্প মেলার মাধ্যমে নগরবাসীর মধ্যে সৌন্দর্যবোধের চর্চা এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য স্থাপনসহ শহরের বাসা বাড়ির বারান্দায় ও ছাদে সখের বাগান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করতেই এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন বলে জানান ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু। মেলাকে ঘিরে ময়মনসিংহ শহরের ঐতিহ্যবাহী টাউন হল প্রাঙ্গণ এখন নানাবয়সী পুষ্পপ্রেমিকদের পদচারণায় উৎসবমুখর ও জমজমাট। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তিন প্রজন্মের ভিড়ে এ পুষ্পমেলা প্রাণবন্ত থাকছে। মেলার বেশির ভাগ স্টলজুড়ে রাখা হয়েছে বাহারি প্রজাতির রঙিন গোলাপ ও গাদাসহ দেশী-বিদেশী হাজারো ফুলের প্রদর্শনী। শহরের খাকডহর এলাকা থেকে আসা আয়নল হকের ফাইভ স্টার স্টলে কেবল গোলাপ ফুলের জাতই প্রদর্শন করা হয়েছে অর্ধশত। এর বাইরে ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, হানিকল গাঁদা, বাগানবিলাস, গাঁদা, কসমস, স্টার, ক্রিসমাস, পাতাবাহার তো আছেই। রয়েছে বিদেশী ফুলের জাত-বাসরলতা, জারবেরা, কারিপাতা, ক্যাকটাস, সেলবিয়া, ক্যালোনডোরা, এন্টার হেনা, গেজুডিয়া, পয়েনসুটিয়া, পিটুনিয়াসহ শত প্রজাতি। আছে বামনজাতের আম, জলপাই, বরই, মাল্টা, ছফেদা, লেবু, করমচাসহ নানাজাতের ফলদ বৃক্ষরাজির সমাহার। ফলদ বৃক্ষরাজি ও বাহারি সব ফুলের এ রাজ্যে দর্শনার্থীদের চাহিদা মাথায় রেখে স্টল মালিকদের কেউ কেউ বাড়তি পণ্য হিসেবে মেলায় তুলেছেন শিশুদের জন্য খেলনা সামগ্রী। আছে সরিষা ও কালো জিরার ফুল থেকে সংগৃহীত খাঁটি মধু পর্যন্ত। এসব কিছুই রাখা হয়েছে মেলায় আসা সৌখিন ও প্রকৃতিপ্রেমিক দর্শনার্থীদের জন্য। মেলায় এবার জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা নার্সারির ২২টি স্টল বসেছে। এর আগে ২০১৫ সালে প্রথমবার শুরু হওয়া মেলায় স্টল এসেছিল মাত্র ১৩টি। এ প্রসঙ্গে খানে মোহাম্মদ আলী নার্সারির মালিক সুরুজ আলী জানান, প্রতিদিন মেলায় ব্যাপক লোক সমাগম হচ্ছে। এর মধ্যে শিশুসহ স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। ২২টি নার্সারিতে গড়পড়তায় দৈনিক এক লাখ টাকার ফুল ও ফল ফুলের চারা বেচা বিক্রি হচ্ছে। শহরের সানকিপাড়া এলাকার গৃহবধূূ নার্গিস আক্তার জানান, প্রতিটি স্টলে চাহিদার সব চারাই রাখা হয়েছে। দামও নাগালের মধ্যে। তবে বামনজাতের ফলদ বৃক্ষের দাম কিছুটা বেশি বলে অনুযোগ এ সৌখিন গৃহবধূর। তারপরও দরদাম নিয়ে কারও কোন অভিযোগ নেই। প্রতিদিন মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। তবে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে এ ভিড় থাকছে উপচে পড়া। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ নগরের ব্যস্ত গৃহবধূরা একটু প্রশান্তি পেতে ভিড় জমাচ্ছেন এ পুষ্পমেলায়। স্টল মালিকরা জানান, সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বেচা বিক্রির পাশাপাশি চলছে মেলা প্রাঙ্গণে জমজমাট আড্ডা। মেলা উপলক্ষে টাউনহল প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। বসানো হয়েছে পুলিশী পাহারা। এসব কারণে প্রকৃতিপ্রেমিক ও বিনোদন প্রত্যাশীরা মেলা প্রাঙ্গণে স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা সারতে পারছেন। শহরের কাচিঝুলি এলাকার বৃক্ষপ্রেমিক এএইচএম মোতালেব জানান, যারা ফুল ভালবাসেনা, তারা মানুষ খুন করতে পারে। আর তাই প্রতিদিন অসংখ্য প্রকৃতিপ্রেমিক মানুষ ফুলের প্রতি ভালবাসার জানান দিতেই এ মেলায় ভিড় জমাচ্ছেন, কিনে নিচ্ছেন বাহারি ফুলের ও ফলদ চারা। প্রশান্তির প্রতীক ফুলের রাজ্যে ঢু মারছেন ময়মনসিংহে বেড়াতে আসা অনেকে।
×