ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জীবন রক্ষার উপায়

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬

জীবন রক্ষার উপায়

মীর্জা শামীম হাসান বিল্ডিংকোড প্রকৌশলী এবং স্থপতিদের মানতে বাধ্য করা হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার রয়েছে। যেমন পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রণ, রিয়েল স্টেট/ ডেভেলপার, ঠিকাদার, নির্মাণ মালামাল প্রস্তুতকারক, ট্যানারি এবং এ ধরনের অনেক কিছু। বিভিন্ন দেশের পরিবেশ, ভূমি প্রকৃতি ভিত্তিতে দিনে দিনে নানা উন্নত গবেষণাধর্মী কোড প্রদান করা হয়েছে। এখন আশানুরূপ নিরাপত্তার জন্য একজন স্থপতি কি কি বিবেচনা করে কাজে হাত দেবে? কিছু কিছু ধারা নকশা তৈরিতে আগে থেকে শতভাগ নিশ্চিত হতে হয়, সেগুলো হলো : ১. ফাউন্ডেশন স্ট্যাবল হতে হবে, ২. বলের সহনশীলতা গ্রহণের ক্ষমতা, ৩. প্রচুর নমনীয় এবং সহনশীল নকশা, ৪. ভঙ্গুর এং স্থিরতা ধর্মীয় মালামাল, ৫. এবড়ো থেবড়ো হয়ে যাওয়ার ব্যাপারগুলো। এ রিসার্চগুলো বের হয়ে এসেছে এনইএইচআরপি কর্তৃক গবেষণার ফলে। যেখানে ভূমিকম্পের প্রকটতা বেশি সেখানে বিষয়গুলো ছাড়া আরও কিছু বিবেচনায় আনতে হয়। আবার কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে কিছুটা শিথিলযোগ্য। আমরা স্থপতির ভাষায় স্ট্যাবল ফাউন্ডেশন বলতে বুঝি দালানের ভার নিয়ে ভূমির ভেতরে ফাউন্ডেশনের নড়াচড়া না করা। ভাল মানের ফাউন্ডেশন দালানের ভর এবং মাটির সঙ্গে তার দাঁড়িয়ে থাকা ভূমিকম্পের সময় টিকিয়ে রাখে। আর অনেক ধরনের ফাউন্ডেশন আছে। কোন্টা কোথায় ব্যবহৃত হবে তা নির্ধারণ হবে মাটির প্রকৃতি বিবেচনা করে। ফাউন্ডেশন, বিম, কলাম এবং ছাদ- একের সঙ্গে আরেকটা বিশেষ নিয়মে যুক্ত করা থাকে যেন সমগ্র ভর মাটিতে দিয়ে দেয়। তাই অধিক কম্পনের সহনশীলতার জন্য নকশাগুলো তেমনভাবে করতে হয়। তার অর্থ এই নয় যে, কোন কলামে দুটো রডের জায়গাতে তিনটি দিয়ে ঢালাই করা। কোথায় কি ভাবে রড বাড়িয়ে দিতে হবে তা সে এলাকা এবং দালানের প্রকৃতির ওপর এনালাইসিস করে নিতে হবে। আর দেয়ালের সঙ্গে এর সংযুক্তি ভাল না হলে সামান্য কম্পনেই ফাটল আসতে পারে যা ভয়ের ব্যাপার। নির্মাণের সময় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে দু’ধরনের বিম-কলামের কথা বলা আছে। একটি হলো ফ্ল্যাটপ্লেট এবং অপরটি বিম-কলাম নকশা। তবে অধিক উঁচু তলার দালানের জন্য দ্বিতীয় নিয়মটি যুক্তিযুক্ত। অবশ্য এতে নির্মাণসামগ্রী বেশি লাগে বলে অনেক ক্ষেত্রে ঠিকাদার প্রথমটি করে দায় মুক্ত হতে চায়। বিমের সংখ্যা, কলামের সংখ্যা এবং সঠিকভাবে কাস্টিং না করলে বিপদ যে কোন সময় আসতে পারে। আমাদের দেশে গেজেটে আধুনিক নির্মাণের নীতি ও ধারা বলা আছে। সেখানে পাওয়া যাবে রিসার্চভিত্তিক মান। যেমন, বিভিন্ন এলাকার বাতাসের গতি, টেকটোনিক জোনাল প্রকৃতি, সেটব্যাক ইত্যাদি। আমাদের দেশে অনেক সময় দেখা যায় একটি কোদাল দিয়ে খোয়া, বালু আর সিমেন্ট মিশিয়ে নেয়। কোন সময় না বুঝে তা দিয়ে ঢালাই করা হয়। কিন্তু প্রতিটা একটা আলাদা আলাদা মিনিমাম শক্ত হওয়ার সময় থাকে। আর আগে সেগুলো ব্যবহার করা হয়। আর অবশ্যই ঢালাইয়ের কাজে যান্ত্রিক মোটরের ব্যবহার ভাল। এবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটা সুন্দর নির্মাণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে সব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে বা আমাদের দেশে মানা হয় না বললেই চলে। সেগুলো এমন : ক. কর্মীদের মজুরিতে অনিয়ম চলে, খ. সঠিকভাবে সাইট ইঞ্জিনিয়ার না থাকা, সাইট নির্বাচন এবং ভুল নকশা, গ. কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়া হুটহাট করে নির্মাণ শুরু করা, ঘ. আবহাওয়া সম্পর্কে জ্ঞান সীমিত। ফলে নির্মাণে মনোযোগ থাকে না। সকলের পক্ষে নির্মাণের সমগ্র জ্ঞান রাখা সম্ভব নয়। তবে সাধারণ ব্যাপারে জ্ঞান জমির মালিকদের অবশ্যই রাখা দরকার। তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে টিকে আছে আমাদের দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা কনস্ট্র্রাকশন অফিস। গড়ছে দালান- বানাচ্ছে টাকা। ঢাকা থেকে
×