ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটন জরুরী

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬

ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটন জরুরী

পিলখানার সেই নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কালো দিনের নির্মম দৃশ্যাবলী ভুলে যাওয়ার নয়। বাঙালী জাতির জীবনে এই এক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা, যা কোনভাবেই মেনে নেয়ার নয়। সে দিনের সেই ট্র্যাজেডি জাতি হিসেবে বাঙালীর জন্য বেদনাদায়ক এবং কলঙ্কময় অবশ্যই। সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েকদিনের মধ্যে বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রধান কার্যালয়ে যা ঘটেছে, তার নেপথ্যে বিশাল ষড়যন্ত্র যে বিদ্যমান ছিল তা স্পষ্ট। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর কার্যালয়ে বিদ্রোহ ঘটে। দিনটি ছিল বিডিআর সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন। এর আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন। ঘটনার দিন সকাল ৯টা ২৭ মিনিট। দরবার হলে চলমান বার্ষিক দরবারে একদল বিদ্রোহী বিডিআর সৈনিক ঢুকে পড়ে। এদের একজন বিডিআর মহাপরিচালকের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। এরপরই ঘটে যায় ইতিহাসের সেই নৃশংস হত্যাকা-। উচ্ছৃঙ্খল বিডিআর সদস্যরা বিডিআরে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের জিম্মি করে বাহিনীর মহাপরিচালকসহ অফিসারদের হত্যা করে। তারা ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। বিদ্রোহের দ্বিতীয় দিনে ২৬ ফেব্রুয়ারি গোলযোগ দেশের আরও ১২টি শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা সদস্যসহ ৭৪ জন নিহত হন, অধিকাংশই সেনাবাহিনীর অফিসার। নিহতদের মধ্যে দু’জন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীও রয়েছেন। বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পর বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিডিআর বিদ্রোহীদের তখনকার পরিস্থিতির কারণে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তবে যারা সেনা অফিসারদের হত্যা করেছে, লুটপাট করেছে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ করেছে, তাদের এ সাধারণ ক্ষমার বাইরে রাখা হয়। পিলখানার এ ঘটনায় বিডিআরের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে যায়। আবার শুরু হয় বিডিআর পুনর্গঠনের কাজ। নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি। পরিবর্তন করা হয় বিডিআর বিদ্রোহের আইন। এই আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা রাখা হয় মৃত্যুদণ্ড। সরকার এই ঘটনাটিকে পিলখানা হত্যা দিবস হিসেবে প্রতিবছর পালন করে আসছে। এ ঘটনায় সারাদেশে ৫৭টি মামলা হয়। ১৫২ বিডিআর জওয়ানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বিশেষ আদালত। খুনের উদ্যোগ, লাশ গুম, গণকবর, অপরাধের আলামত নষ্টসহ অন্যান্য অভিযোগে ২৬২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদ- ও জরিমানা করা হয়েছে। বর্তমানে উচ্চ আদালতে আপীল শুনানি চলছে। কিন্তু ঘটনার মূল হোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। ন্যক্কারজনক এই হত্যাকা-ের পেছনে সুদূরপ্রসারী কোন গভীর ষড়যন্ত্র থাকা অমূলক নয়। নিছক কিছু দাবি-দাওয়ার জন্য এতবড় হত্যাকা- ঘটতে পারে বলে মনে হয় না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিদ্রোহের আগের রাতে বেগম জিয়াকে সেনানিবাসের বাসা থেকে পালিয়ে যেতে লন্ডন হতে তার পুত্র তারেক ৪৫ বার ফোন করেছিল। ঘটনার দিন সকাল ৮টার মধ্যে বেগম জিয়া আত্মগোপনে চলে যান। অথচ বিএনপি নেত্রী আজও বলছেন, বিডিআর বিদ্রোহ নাকি আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মতে, বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। দেশবাসী এই ঘটনায় আজও মর্মাহত। তারা চায় বিদ্রোহের ষড়যন্ত্রের ঘটনা উদ্ঘাটন ও জড়িতদের বিচার। সরকার দেশ ও জাতির স্বার্থে সেই পথ অনুসরণ করবেন- এমন প্রত্যাশা স্বাভাবিক।
×