ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিউটি পারভীন

ঘরের মাঠে মিরাজদের চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

ঘরের মাঠে মিরাজদের চ্যালেঞ্জ

আবারও বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বড় একটি আইসিসি ইভেন্ট। আগামী বছর ২৭ জানুয়ারি শুরু হবে অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। আর ১১তম এই আসরটির গর্বিত আয়োজক বাংলাদেশ। ২০০৪ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজন হতে যাচ্ছে এখানে। এছাড়া ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক এবং ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপের একক আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। আগের মতোই এবারও ১৬ দল অংশ নেবে এ আসরে। সবমিলিয়ে মাত্র ১৯ দিনের টুর্নামেন্টে ৪৮ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও সিলেটের মোট ৮ ভেন্যুতে খেলাগুলো হবে। উদ্বোধনী ম্যাচে ২৭ জানুয়ারি স্বাগতিক বাংলাদেশ ও গতবারের চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ড ও ফিজি চট্টগ্রামে মুখোমুখি হবে। অবশ্য এর আগেই ২২ জানুয়ারি থেকে প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে যুব বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু হয়ে যাবে। বাংলাদেশ যুব ক্রিকেট দল ‘এ’ গ্রুপে দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও লড়বে নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ১২ বছর আগে স্বাগতিক দল হয়েও সুপারলীগ খেলতে পারেনি বাংলাদেশ দল। তবে এবার নিজেদের সেরা সাফল্য পেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বাংলাদেশের যুবারা। এমন আত্মবিশ্বাসই জানিয়েছেন যুবাদের কোচ মিজানুর রহমান বাবুল। আর কোচ বাবুলের চেয়েও অনেক বড় স্বপ্ন টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিতে যাওয়া অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের। তিনি আশা করছেন দলকে চ্যাম্পিয়ন করার। তবে এবার আসর থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে অন্যতম শক্তিশালী দল অস্ট্রেলিয়া। নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানিয়ে তারা বাংলাদেশে আসছে না যুব বিশ্বকাপে অংশ নিতে। তাদের পরিবর্তে বাছাইয়ে রানার্সআপ হওয়া আয়ারল্যান্ড অনুর্ধ-১৯ দল অংশ নেবে। বিশ্বকাপ মানেই অন্যরকম এক উত্তেজনা। সেই উত্তেজনাটা আরও বেড়ে যায় যখন স্বাগতিক দল দারুণ কিছু করতে সক্ষম হয়। সে কারণে বাংলাদেশের যুবারা প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে আগেভাগেই। দেশীয় কোচ মিজানুর রহমান বাবুলের অধীনে ক্যাম্প শুরু হয়েছে অনেক আগেই। এছাড়া দলের সঙ্গে পরামর্শক হিসেবে গত ৩ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অস্ট্রেলিয়ান কোচ স্টুয়ার্ট ল। তবে বলা হয়ে থাকে অনুশীলনের চেয়ে বড় প্রস্তুতি হয় ম্যাচ খেলার মাধ্যমে। এবার সেই সুযোগটাও পাচ্ছে বাংলাদেশ যুব দল। শুরু হয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনুর্ধ-১৯ দলের বিরুদ্ধে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। এছাড়াও আইসিসি নির্ধারিত প্রস্তুতি ম্যাচও খেলার সুযোগ থাকছে বাংলাদেশ যুব দলের। গত কয়েক বছর ধরে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশ দল। এমনকি গত আসরের চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা অনুর্ধ-১৯ দলের বিরুদ্ধে হোম ও এ্যাওয়ে পদ্ধতিতে দুটি সিরিজ খেলে দুটোতেই ভালভাবে সিরিজ জিতেছেন মিরাজরা। এ কারণে অধিনায়ক মিরাজ স্বপ্ন দেখছেন দলকে চ্যাম্পিয়ন করার। এ বিষয়ে মিরাজ বলেন, ‘ভারতে আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভাল কিছু করতে পারেনি। দেশে ফিরে অনুশীলন করেছি, বিসিবি একাদশের সঙ্গে চারটা ম্যাচ খেলেছি। ওইখানে আমরা খুব ভাল ক্রিকেট খেলেছি এবং ব্যাটসম্যানরা রান করেছে। বোলাররাও উইকেট পেয়েছে। আমরা তিনটা ম্যাচ জিতেছি। সব মিলিয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক ভাল। বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়নি, সেমিফাইনালও খেলেনি। এ বছর সুযোগ রয়েছে আমাদের দেশে বিশ্বকাপ। আমাদের কন্ডিশন, সবকিছুই আমাদের পক্ষে আছে। আমরা যদি ভাল ক্রিকেট খেলি, সব কিছু যদি ঠিক হয় ইনশাআল্লাহ এবার একটা সুযোগ রয়েছে ভাল কিছু করার।’ কোচ মিজানুরের কণ্ঠেও আছে প্রত্যয়। তিনি বলেন, ‘আশা করছি সুপার লীগে এবার আমরা অবশ্যই খেলব। এটাই আমার প্রাথমিক লক্ষ্য। আমাদের দলে ৫ জন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে। যাদের শুধু যে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তা নয়; এই বয়সে তারা জাতীয় লীগও খেলেছে।’ অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপই পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মহাতারকাদের জন্মস্থান। এখান থেকেই মূলত পরবর্তী সময়ের ক্রিকেট বিশ্ব কাঁপানো তারকারা বেরিয়ে আসেন। এর আগে যুব বিশ্বকাপ থেকে যেসব তারকা উঠে এসেছেন তাদের মধ্যে ব্রায়ান লারা, মাইক আথারটন, ক্রিস গেইল, সনাথ জয়সুরিয়া, ইনজামাম-উল-হক, মুশতাক আহমেদ, গ্রায়েম স্মিথ, যুবরাজ সিং, ক্রিস কেয়ার্নস, এ্যালিস্টার কুক, সুরেশ রায়না, শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, টিম সাউদিদের মতো ক্রিকেটাররা আছেন। ১৯৮৮ সালে প্রথমবার অনুষ্ঠিত ছোটদের এ বিশ্বকাপের এখন পর্যন্ত ১০টি আসর আয়োজিত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক তিনবার করে শিরোপা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া (১৯৮৮, ২০০২ ও ২০১০) ও ভারত (২০০০, ২০০৮ ও ২০১২)। পাকিস্তান ২০০৪ ও ২০০৬ সালে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা (২০১৪) ও ইংল্যান্ড (১৯৯৮) একবার করে যুব বিশ্বকাপ জয় করে। যুব বিশ্বকাপের ফরমেটটা একটু আলাদা। চারটি গ্রুপে বিভক্ত ১৬ দলের মধ্যে শীর্ষ দুটি করে দল সুপারলীগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। আর বাকি আট দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্লেট চ্যাম্পিয়নশিপ। বাংলাদেশ যুব দল ১৯৯৮ সালে প্রথমবার প্লেট চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়া ২০০৪ সালের ঘরের মাঠে এবং ২০১০ ও ২০১৪ সালেও প্লেট চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত মাত্র তিনবার গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে সুপারলীগ খেলতে পেরেছে বাংলাদেশের যুবারা। সেরা সাফল্য ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে পঞ্চম স্থান অর্জন। ১৯৯৮ সালে প্রথম কোন আইসিসি ইভেন্ট হিসেবে নকআউট বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ। তবে পূর্ণ বিশ্বকাপ হিসেবে ২০০৪ সালে অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপের আয়োজক হয়। ১২ বছর পর আবারও সেই বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর আগে অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ড দু’বার করে অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ আয়োজন করে। এবারের আসরটি ২৭ জানুয়ারি শুরুর পর শেষ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। সব ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে। সুপারলীগ সেমিফাইনাল ও ফাইনালের জন্য একদিন করে রিজার্ভ ডে রাখা হয়েছে। এই প্রথম ৪৮ ম্যাচের মধ্যে আইসিসি নিজেদের ব্যবস্থাপনায় সরাসরি সম্প্রচার করবে ২০ ম্যাচ। আইসিসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান স্টার স্পোর্টস এ দায়িত্ব পাবে। আয়োজক হিসেবে আবার বাংলাদেশ। ২০০৪ সালের যুব বিশ্বকাপে প্রচুর দর্শক উপস্থিতি ছিল প্রতিটি ম্যাচে। এবার ৯ টেস্ট খেলুড়ে দেশ ছাড়াও ৭টি সহযোগী সদস্য দেশ অংশ নেবে। সহযোগী দেশগুলো হচ্ছে আফগানিস্তান, কানাডা, ফিজি, নামিবিয়া, নেপাল, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড।
×