ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যৌতুকের জন্য ঘরছাড়া, তিন সন্তান নিয়ে আশ্রয়হীন গৃহবধূ

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

যৌতুকের জন্য ঘরছাড়া, তিন সন্তান নিয়ে  আশ্রয়হীন গৃহবধূ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ দু’লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে হত্যার উদ্দেশে স্ত্রীকে অমানুষিক নির্যাতনের পর অবুঝ তিন পুত্র সন্তানসহ স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে যৌতুকলোভী পাষ- স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা। প্রচ- শীতের মাঝে গত দু’দিন থেকে অবুঝ সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন অসহায় ফাতেমা। অসহায় ফাতেমা স্বামীর অধিকার ও তার পুত্রদের পিতৃ অধিকার ফিরিয়ে দিতে প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মানবাধিকার ও নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাটি জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর ইউনিয়নের চরজাহাপুর গ্রামের। জানা গেছে, ওই গ্রামের মোহাম্মদ আলী বেপারীর পুত্র সাইফুল ইসলামের সঙ্গে গত দশ বছর পূর্বে ঢাকার গার্মেন্টস কর্মী নোয়াখালীর নলেরচর থানার আব্দুল খালেক মিয়ার কন্যা ফাতেমা বেগমের (২৮) পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের তিনটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। বিয়ের পর বিভিন্ন সময় স্বামীর চাহিদা অনুযায়ী যৌতুকের প্রায় তিন লাখ টাকা পরিশোধ করেন ফাতেমা। সর্বশেষ গত দু’বছর পূর্বে দু’লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে সাইফুল ও তার পরিবারের সদস্যরা ফাতেমাকে অমানুষিক নির্যাতন করে। ওই সময় দাবিকৃত যৌতুকের টাকা পরিশোধ করতে ফাতেমা তার বাবার বাড়ির প্রাপ্ত সম্পত্তি বিক্রি করে স্বামীর হাতে এক লাখ টাকা তুলে দেন। এরইমধ্যে সাইফুল সেতারা বেগম সুরমা নামের আরেক নারীকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন। এ ঘটনার পর ফাতেমার সঙ্গে সাইফুলের দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। একপর্যায়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেয়ার জন্য ফের দু’লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে সাইফুল ও তার পরিবারের সদস্যরা ফাতেমা বেগমের ওপর নির্যাতন শুরু করে। সর্বশেষ গত রবিবার সকালে সাইফুল তার পিতা, মাতা, ভাই, বোন মিলে হত্যার উদ্দেশে ফাতেমা বেগমের ওপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে। এ সময় ফাতেমা ও তার সন্তানদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে ফাতেমাকে প্রাণে রক্ষা করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় তিন পুত্রসহ ফাতেমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। ফাতেমা বেগম অভিযোগ করেন, পাশের এক বাড়িতে রাতযাপন করে সোমবার সকালে পুত্রদের নিয়ে তিনি বাবুগঞ্জ থানায় হাজির হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাইফুলের পিতা মোহাম্মদ আলী বেপারীকে আটক করলেও রহস্যজনক কারণে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। থানার ওসি মোঃ মাহবুবুর রহমান আটকের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ফাতেমা ও সন্তানদের ঘরে তুলে নেয়াসহ তাকে আর নির্যাতন করা হবে না মর্মে লিখিত মুচলেকা দেয়ার পর মোহাম্মদ আলীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মুচলেকা অমান্য করায় সোমবার রাতে থানা পুলিশ ফাতেমা বেগম ও তার পুত্রদের আগরপুর হাই স্কুল মাঠ থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বসত ঘর তালাবদ্ধ করে মোহাম্মদ আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপন করায় ফাতেমা ও তার সন্তানদের ঘরে উত্তোলন করে দেয়া সম্ভব হয়নি।
×