ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টিকা আছে, সিরিঞ্জ নেই

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

টিকা আছে, সিরিঞ্জ নেই

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সিরিঞ্জের অভাবে চট্টগ্রামে ব্যাহত হচ্ছে শিশুদের বিসিজি (যক্ষ্মা) টিকা কার্যক্রম। নবেম্বর মাস থেকে সিরিঞ্জ সরবরাহ বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলের নবজাতকদের যক্ষ্মা প্রতিরোধক এ টিকা প্রদান করা যাচ্ছে না। সিরিঞ্জের অভাবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে চট্টগ্রাম নগরীর নি¤œআয়ের মা-বাবারা। সিরিঞ্জের অভাবে সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে টিকা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তারা নিজের নবাগত সন্তানকে টিকা দিতে পারছে না। উপজেলা পর্যায়েও একই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অথচ উপজেলা থেকে শুরু করে সিটি কর্পোরেশন স্বাস্থ্য কেন্দ্র সবখানে বিপুল পরিমাণ বিসিজি টিকার সরবরাহ রয়েছে। শিশুকে ধনুষ্টংকার, ডিফথেরিয়া, হুপিং কাশি, যক্ষ্মা, পোলিও, হাম এবং হেপাটাইটিস-বি নামক সাতটি মারাত্মক রোগের হাত থেকে বাঁচাতে আমাদের দেশে সরকারী এবং বেসরকারী পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঁচ ধরনের টিকা প্রদান করা হয়ে থাকে। চারটি ধাপে শিশুর এক বছর বয়সের মধ্যে টিকাগুলো প্রদান করা হয়। প্রথম ধাপে শিশুর দেড় মাস বয়সে যক্ষ্মা প্রতিরোধক বিসিজি টিকা এবং ডিপিটি, পোলিও এবং হেপাটাইটিস-বি টিকার প্রথম ডোজ দিতে হয়। দ্বিতীয় ধাপে শিশুর আড়াই মাস বয়সে ডিপিটি, পোলিও এবং হেপাটাইটিস-বি টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রদান করা হয়। তৃতীয় ধাপে শিশুর সাড়ে তিন মাস বয়সে ডিপিটি, পোলিও এবং হেপাটাইটিস-বি টিকার তৃতীয় ডোজ প্রদান করতে হয়। চতুর্থ ধাপে শিশুর বয়স নয় মাস পূর্ণ হলে পোলিও টিকার চতুর্থ ডোজ এবং হামের টিকা দিতে হয়। বিগত এক দশকের বেশি সময় এ নিয়ম মেনে টিকা প্রদান করা হলেও এবার চট্টগ্রাম জেলায় তার ব্যতয় ঘটেছে। নবেম্বর মাস থেকে সিরিঞ্জ না থাকায় গত দুই মাসে জন্ম নেয়া শিশুদের নির্ধারিত সময়ে টিকা প্রদান করা যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নবজাতক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ চিরঞ্জিত বড়ুয়া বলেন, ‘সাধারণত বিসিজি (যক্ষ্মা) টিকা শিশু জন্মের ১ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে দিতে হয়। এরপরেও জীবনের যে কোন সময় দেয়া যায়। তবে এ টিকা যত দ্রুত দেয়া যায় ততই ভালো। জন্মের পরপরই শিশুকে টিকা দিলে যক্ষ্মার ঝুঁকি একেবারে কমে যায়।’ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মীরসরাই বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, পটিয়া, সীতাক-, চকরিয়া, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ ও লোহাগাড়া চট্টগ্রামের এই ১৪ উপজেলায় প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। জন্ম নেয়া এসব নবজাতকদের সরকারীভাবে যক্ষ্মাসহ সাতটি মারাত্মক রোগের টিকা প্রদান করা হয়। সর্বশেষ গত ২০১৫ সালে এই ১৪ উপজেলায় টিকা নিয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৫০ নবজাতক। এর মধ্যে গত অক্টোবর মাসে ১২ হাজার ২ শ’ ৭১ জন টিকা নিয়েছেন। নবেম্বর মাসেও ১২ হাজার ২ শ’ ৭১ জন নবজাতক টিকা নিয়েছেন। প্রতিমাসে ১২ থেকে ১৩ হাজার শিশু জন্ম নিলেও গত ডিসেম্বর এবং চলতি মাসে সিরিঞ্জের অভাবে নবজাতকদের টিকা প্রদান করা যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, নবেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিসিজি টিকার সিরিঞ্জ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরে বারবার জানানোর পরেও এখন পর্যন্ত আমরা সিরিঞ্জ পাইনি। শুধু চট্টগ্রাম জেলা নয় দেশের সকল জেলায় নবেম্বর থেকে সিরিঞ্জ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, দুই মাস সিরিঞ্জ সরবরাহ বন্ধ থাকায় উপজেলা পর্যায়ে কোন প্রভাব পড়েনি। উপজেলা পর্যায়ে ভাপার স্ট্রোকে থাকা সিরিঞ্জ দিয়ে কার্যক্রম চলেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা) ডাক্তার হাবিব আব্দুল্লাহ সোহেল বলেন, প্রকিউরমেন্ট প্রসিডিউর দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে সরবরাহ সাময়িক বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। এখন সকল প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে আগামী সপ্তাহের মধ্যে সকল জেলায় সিরিঞ্জ পৌঁছে যাবে। দুই মাস সিরিঞ্জ সরবরাহ বন্ধের ঘটনায় উপজেলা পর্যায়ে তেমন প্রভাব পড়েনি। আগে থেকে স্ট্রোক করা সিরিঞ্জ দিয়ে কার্যক্রম অব্যাহত ছিল বলে তিনি দাবি করেন।
×