ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৈশ্বিক অর্থনীতি ও রাজনীতির জন্য অশনি সঙ্কেত

চীনা অর্থনীতি নিম্নমুখী

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

চীনা অর্থনীতি নিম্নমুখী

চীনের অর্থনীতির নিম্নমুখী প্রবণতা ও বিশৃঙ্খলা বিশ্ব পরিসরে ও আঞ্চলিক পর্যায়ে দুশ্চিন্তার ছাপ ফেলতে শুরু করেছে এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতির জন্য সুখবর হবে না বলেই বিশ্লেষকরা আভাস দিচ্ছেন। চীনের কাছে কমমূল্যে শেয়ার বিক্রির প্রতিক্রিয়ায় সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকার মুদ্রা র‌্যান্ডের দর পতন ঘটেছে। চীন দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী। আফ্রিকার অনেক দেশের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ চীনা অর্থনীতি সচল রাখতে ব্যবহৃত হচ্ছে। চীনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উর্ধমুখী থাকা অবস্থায় কাঁচামালের ব্যাপক চাহিদা ছিল। চীনে কাঁচামালের চাহিদা পূরণ করে প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ আফ্রিকার দেশগুলো নিজেরাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছিল। কিন্তু এই চাহিদা এখন পড়ে যাওয়ায় দেশগুলো সঙ্কটে পড়তে পারে। এসব দেশের বহুবিধ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলো ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য সঙ্কট। আফ্রিকা ছাড়াও লাতিন আমেরিকান অনেক দেশের সঙ্গেও চীনের প্রায় একই রকম সম্পর্ক রয়েছে। চীনের সমৃদ্ধ অর্থনীতি এদেশগুলোর অর্থনীতিকেও চাঙ্গা রোখেছিল। কিন্তু চীনের চাহিদা কমে যাওয়ায় এদেশগুলো এখন বিপাকে পড়তে চলেছে। ভেনিজুয়েলার মুদ্রাস্ফীতি এখন দুয়ের ঘর ছাড়িয়ে তিনের ঘরের কাছাকাছি। ব্রাজিলে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। অর্থনৈতিক সঙ্কট প্রভাবিত করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে। সঙ্কট দীর্ঘয়িত হলে জনমনে ক্ষোভ বাড়ে এবং রাজনৈতিক সরকারগুলো পড়ে বিব্রতকর অবস্থায়। যেমন ভেনিজুয়েলা ও ব্রাজিল দুটি দেশেই এখন রাজনৈতিক অসন্তোষ দানা বাধতে শুরু করেছে। চীনা অর্থনীতির শ্লথগতির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ব তেল বাজারের ওপরেও। যদিও এই প্রভাব প্রত্যক্ষ নয় অনেকটা পরোক্ষ ধরনের। ব্রেন্ট অশোধিত তেলের ব্যারেল প্রতি দর সোমবার ১২ মাসের মধ্যে সবনিম্ন ৩১.৫৬ ডলারে নামে। সৌদি আরব ও রাশিয়ার মতো তেলনির্ভর অর্থনীতির জন্য এটি একটি দুঃসংবাদ। মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশদুটোর ১৪ শতাংশ তেল যায় চীনে। চীনের চাহিদা কমে গেলে স্বাভাবিকভাবে দেশগুলোর তেল রাজস্ব আয় কিছুটা কমে যাবে। মার্কিন অর্থনীতির ওপর এখন পর্যন্ত এর কোন প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। চীনে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা পণ্য ও খাবারের প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করছে। মার্কিন শেয়ারবাজার অবশ্য গত একবছর ধরে কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন এ বিষয়ে যে, চীনের খনি ও জ্বালনি শিল্প সঙ্কটের মধ্যে থাকলে বেকারত্বের হার বেড়ে যেতে পারে। ২০১০ সালের পর সোমবার সাংহাই শেয়ারবাজারে সর্বোচ্চ ৫.৩ শতাংশ দরপতন ঘটে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এন্ড পুয়রস রেটিংস সার্ভিসেসের প্রধান গ্লোবাল ইকোনমিস্ট পল শেয়ার্ড বলেন, চীনের অর্থনীতি আধ শতাংশ বা এক শতাংশ নিম্নমুখী হলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সেটি বড় কোন ঘটনা নয়। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা, পেরু, চিলি, কলম্বিয়া, মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোর কথা ভিন্ন।’ চীনের অর্থনীতিতে যে এখন নিম্নমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে অনেক অর্থনৈতিক বিশ্লেষকই সে ব্যাপারে একমত। প্রশ্ন হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির গতি কতটুকু শ্লথ হবে। প্রবৃদ্ধি কি দুই ডিজিট থেকে কমে ৬ বা ৭ শতাংশের মধ্যে স্থিতিশীল থাকবে, না এটি ৩ বা ৪ শতাংশ পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। চীনের কাঁচামালের যোগানদাতা অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোই মূলত এর জন্য চাপের মুখে পড়বে। ব্রাজিল, পেরু ও ভেনিজুয়েলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। অন্যদিকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া চীনের অন্যতম কয়লা সরবরাহকারী ছিল। কিন্তু চাহিদা কমে যাওয়ায় ইন্দোনেশিয়ার কয়লা শিল্প সঙ্কটের মুখে পড়তে যাচ্ছে। Ñওয়াশিংটন পোস্ট
×