ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী ও ব্যক্তি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে ॥ জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

সরকারী ও ব্যক্তি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে ॥ জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর অতিরিক্ত মাত্রার কার্বন নিঃসরণের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির শিকার হওয়া সত্ত্বেও গ্রীন এনার্জির জন্য আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করছি। যা জাতি হিসেবে আমাদের মাথা উঁচু করেছে বলে জানান তিনি। এজন্য পরিবেশবান্ধব কারখানায় সহজ অর্থায়নে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর। মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য সবুজ অর্থায়ন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় গবর্নর পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে শুল্ক সুবিধা দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ রাখেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বাংলাদেশ সোলার এ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি এ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরইএ)। ড. আতিউর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ভূমিকা কম। অথচ উন্নত বিশ্বের কারণে আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হতে হয়েছে। এখন এটি মোকাবেলা করা আমাদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার একা এতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে না। এজন্য সরকারী খাত ও ব্যক্তি খাত একযোগে কাজ করতে হবে। আতিউর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হলে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের বিকল্প নেই। এজন্য উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমি ব্যাংকগুলোকে বলব, যেসব প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম পরিচালনা করবে, আপনারা তাদের পাশে থাকবেন। একই সঙ্গে সরকারকেও অনুরোধ করব পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে শুল্ক সুবিধা দিতে। গবর্নর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ আমাদের পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থারও অঙ্গীকার রয়েছে। এ জন্য আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ থেকে গ্রিন প্রোডাক্টে অর্থায়ন করছি। এটি জাতি হিসেবে সারাবিশ্বে আমাদের ভাবমর্যাদাকে অনেক উঁচু করেছে। তিনি বলেন, সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে দায়বদ্ধ খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ সফল করতে সরকারী ও ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে ব্যক্তি খাতের সংযোগ স্থাপনের কোন বিকল্প নেই। ড. আতিউর রহমান আরও বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের সামনে যে চ্যালেঞ্জ সেটি মোকাবেলায় দেশের টেকসই উন্নয়নের বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক সামনের সারিতে থেকে কাজ করছে। গবর্নর বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে ইতোমধ্যে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই অবস্থানকে সুদৃঢ় ও টেকসই করতে হলে আরও ব্র্যান্ডিং করতে হবে। এক্ষেত্রে গ্রিন প্রোডাক্টের বিকল্প নেই। গার্মেন্টসের সবুজ বস্ত্র ও চামড়ার পণ্য উৎপাদন করে সারাবিশ্বকে জানাতে চাই, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়েও তা মোকাবেলায় নিজেদের অর্থায়নে সবুজ পণ্য তৈরি করছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট’ নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি বিভাগও রয়েছে। বিভাগটির মাধ্যমে ৫০টির মতো সবুজ প্রোডাক্টে নির্ধারণ করা হয়েছে। যেগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে ঋণসুবিধা দেয়া হচ্ছে। গ্রিন প্রোডাক্ট তৈরিতে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য খাতেও অর্থায়ন সুবিধা দেয়া হবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ইতোমধ্যে আমরা ২০ কোটি ডলারের একটি গ্রিন ফান্ড তৈরি করেছি। এই তহবিল থেকে বস্ত্র ও চামড়া শিল্পের উদ্যোক্তারা ঋণ পাবেন। যেকোন সময় এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে, আমরা আক্রান্ত হয়েও সবুজ পণ্য উৎপাদন করছি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজান আর. খান। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এসকে সুর চৌধুরী, সাসটেইনেবল এ্যান্ড রিনিউয়েবেল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (স্রেডা) চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম শিকদার প্রমুখ। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমের প্রসার ঘটেছে। বর্তমানে ৫০টির মতো সবুজ পণ্য উৎপাদিত। এ বিষয়ে এখন বাংলাদেশকে বিশ্বে ব্র্যান্ডিং করার সময় হয়েছে বলে তারা মত দেন। তবে এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী খাতকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা। আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী, সাসটেইনেবল এ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম শিকদার, ইডকলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ মালিক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মিজার আর খান প্রমুখ। বিএসআরইএর সভাপতি দিপাল সি বড়ুয়া আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন।
×