ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মঙ্গলবারও ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অচল ছিল

শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের বৈঠক ॥ দুই পক্ষই আশাবাদী

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের বৈঠক ॥ দুই পক্ষই আশাবাদী

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ পে স্কেলে মর্যাদাহানির প্রতিবাদে শিক্ষকদের ডাকা কর্মবিরতিতে দ্বিতীয় দিনের মতো মঙ্গলবারও অচল ছিল দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এদিকে সঙ্কট সমাধানে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের শীর্ষ দুই নেতা। বৈঠকে আন্দোলন প্রত্যাহারের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দুই পক্ষই দ্রুত সঙ্কট সমাধানে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, আমরা খুবই আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা করেছি। আরও আলোচনা চলবে। আন্দোলনও চলবে। শিক্ষকদের কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দফতরে মন্ত্রী ছাড়াও শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এ বৈঠক করেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বাইরে এসে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষা পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরা যে কোন সময় আলোচনা করতে পারি, এটি দরকারও আছে। খুবই খোলামেলা পরিবেশে সন্তোষজনক আলোচনা হয়েছে। সঙ্কট কীভাবে কাটিয়ে উঠা যায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনারা বলতে পারেন আমরা এগোচ্ছি, আমরা খুবই আশাবাদী যে একটা সুষ্ঠু সমাধানের দিকে যাওয়ার জন্য যে কার্যক্রম, সেটি আজকের আলোচনায় আরও বেশি এগোলো। আন্দোলন প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি আশ্বাস দেয়ার কে? আমি শিক্ষাপরিবারের সদস্য বা সরকারেরও সদস্য। আমরা চাইব যেন এমন একটা সন্তোষজনক সমাধান আসে, যেখানে আমাদের সম্মানিত শিক্ষকদের সত্যিকার অর্থেই সম্মান বজায় থাকে, সম্মানিত হয়ে থাকেন এবং একই সঙ্গে যেন বেতন বা এ ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে, সেগুলো যেন সমাধান করা যায়। সেই আলোচনা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে কত দিন সময় লাগতে পারে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, নির্ধারিত বিষয় নিয়ে বসিনি। তাই এ আলোচনা হয়নি। কর্মসূচী বন্ধ রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আলোচনা হয়েছে সমস্যা কিভাবে কাটিয়ে উঠতে পারি। আলোচনা এগোচ্ছে। সমাধানের পথ বের হবে কিনা- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, নিশ্চয় বের হবে। এ সময় শিক্ষক নেতা ফরিদ উদ্দিনও বলেন, অবশ্যই বের হবে। বেতন বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত পুনর্গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির মিটিং শীঘ্রই হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সেটা কমিটির চেয়ারম্যান ডাকতে পারেন, তিনিই ভাল বলতে পারবেন। সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায়, সেই বিষয়গুলো আজকে বেশি জোর দিয়েছি, সেটি বেশি দরকার। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের আগে শিক্ষক নেতা অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, সৃষ্ট সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য এই আলোচনা। সমাধানের পথে আমরা সব সময় এগোতে চাই, সেজন্য আমরা এগোচ্ছি, আলোচনা করছি, আরও আলোচনা চলবে। এরপর নিশ্চিতই এক জায়গায় পৌঁছে যাব। খুবই আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা করেছি। আন্দোলন চলবে কিনা- এ বিষয়ে বলেন, আন্দোলন চলবে, এখন পর্যন্ত ওই জায়গায় কোন সিদ্ধান্ত নেইনি। এদিকে শিক্ষকদের কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনে দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার/কোর্স ফাইনাল ছাড়া কোন ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বন্ধ ছিল সান্ধ্যকালীন কোর্সের ক্লাসসমূহও। শিক্ষকরা অধিকাংশই প্রশাসনিক কোন দায়িত্বও পালন করেননি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লাগাতার এই কর্মবিরতিতে সঙ্কটে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকাসহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য ভর্তি হওয়া অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাসও পড়েছে অনিশ্চয়তায়। কর্মসূচী দীর্ঘস্থায়ী হলে উচ্চ শিক্ষায় বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হবে বলে আশঙ্কা শিক্ষার্থীদের। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়লে সেজন্য অর্থমন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা দায়ী থাকবেন বলে বলছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা সাংবাদিকদের বলেছেন, শিক্ষার্থীদের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য মাসের পর মাস আমরা নরম ও অহিংস কর্মসূচী পালন করেছি। কিন্তু সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে এখন ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কর্মসূচীর কারণে যদি দীর্ঘমেয়াদে সেশনজট হয় তাহলে আমাদের (শিক্ষকদের) করার কিছু থাকবে না। কারণ আমরা সরকারকে অনেক সময় দিয়েই কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছি। যতদিন পর্যন্ত দাবি আদায় হবে না, ততদিন কর্মবিরতি চলবে। লাগাতার কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনেও বন্ধ ছিল কর্মসূচীর অন্যতম কেন্দ্রস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের ক্লাস। সেমিস্টার ও কোর্স ফাইনাল পরীক্ষা ছাড়া অন্য সকল পরীক্ষাও এদিন অনুষ্ঠিত হয়নি। এদিন ক্যাম্পাসের কলাভবন, ব্যবসা অনুষদ এবং কার্জন হলসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে আড্ডা দিচ্ছেন। গান-গাইছেন এবং ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিছু বিভাগের প্রশাসনিক কার্যক্রম চললেও ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। বেতন কাঠামোয় ‘অসঙ্গতি’ নিরসনে শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমলারা বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। সংগঠনের এক শীর্ষ নেতা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমাদের নয় মাস ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরিয়ে এ অবস্থায় নিয়ে এসেছে। আমলারা ইচ্ছা করেই এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত চেয়ে দফায় দফায় চিঠি দিয়েও আমরা কোন জবাব পাইনি। আমলাদের দেয়াল ভেঙ্গে ওই চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই চিঠি যেতে দেয়া হয়নি। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র প্রায় একই রকম ছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস এবং মিডটার্মসহ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাও বন্ধ ছিল। শিক্ষকরা প্রশাসনিক দায়িত্বেও কর্মবিরতি পালন করছেন। জানা যায়, এদিন কার্যত অচল হয়ে ছিল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
×