ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লাগাতার কর্মসূচীতে সঙ্কটে শিক্ষার্থীরা ;###;সেশনজটের আশঙ্কা ;###;সরকারের সংশ্লিষ্টরা এ জন্য দায়ী- শিক্ষক নেতৃবৃন্দ

ভার্সিটি অচল ॥ শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১২ জানুয়ারি ২০১৬

ভার্সিটি অচল ॥ শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পে স্কেলে মর্যাদাহানির প্রতিবাদ ও বৈষম্য নিরসনের দাবিতে শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে রীতিমতো অচল হয়ে পড়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাদে দেশের ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে চলা কর্মসূচীর প্রথম দিন সেমিস্টার/কোর্স ফাইনাল ছাড়া কোন ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বন্ধ ছিল সান্ধ্যকালীন কোর্সও। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ও কোর্স ফাইনাল পরীক্ষাও বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষকরা অধিকাংশই প্রশাসনিক কোন দায়িত্বও পালন করেননি। এদিকে পে স্কেলের বৈষম্য নিরসনের দাবিতে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি শুরু করেছেন প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডার ছাড়া অন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের এই লাগাতার কর্মবিরতিতে সঙ্কটে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকাসহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য ভর্তি হওয়া অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাসও পড়েছে অনিশ্চিয়তায়। কর্মসূচী দীর্ঘস্থায়ী হলে উচ্চশিক্ষায় বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হবে বলে আশঙ্কা শিক্ষার্থীদের। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়লে সেজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা দায়ী থাকবেন বলে বলছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য মাসের পর মাস আমরা নরম ও অহিংস কর্মসূচী পালন করেছি। কিন্তু সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে এখন ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কর্মসূচীর কারণে যদি দীর্ঘমেয়াদে সেশনজট হয় তাহলে আমাদের (শিক্ষকদের) করার কিছু থাকবে না। কারণ আমরা সরকারকে অনেক সময় দিয়েই কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছি। আমরা যে কোন ধরনের আলোচনার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এখন পর্যন্ত সরকারের কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তাই যতদিন পর্যন্ত দাবি আদায় হবে না, ততদিন কর্মবিরতি চলবে। বেতন কাঠামোয় ‘অসঙ্গতি’ নিরসনে শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমলারা বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছে আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘আমাদের নয় মাস ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরিয়ে এ অবস্থায় নিয়ে এসেছে। আমলারা ইচ্ছা করেই এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। ওরা ভাবছে ওরা কুলীন লোক, ওদের পর্যায়ে কাউকে দেয়া যাবে না।’ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে সোমবার সকাল থেকেই পূর্বঘোষিত লাগাতার কর্মসূচী শুরু হয়েছে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষকদের এই নজিরবিহীন কর্মবিরতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায়। ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল পরীক্ষার মাঝপথে এই কর্মবিরতি অনিশ্চয়তায় পড়েছেন পরীক্ষার্থীরা। কারণ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইনাল পরীক্ষাও অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই শেষ করেছে তাদের প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম। ক্লাস শুরুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন নতুন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। ঠিক এমন অবস্থায় শিক্ষকদের কর্মবিরতির ঘোষণায় শিক্ষাজীবনে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। লাগাতার কর্মবিরতিতে বন্ধ হয়ে গেছে কর্মসূচীর অন্যতম কেন্দ্রস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের ক্লাস। বন্ধ আছে সেমিস্টার ও কোর্স ফাইনাল পরীক্ষা ছাড়া অন্য সকল পরীক্ষাও। দুপুরে কলাভবন, ব্যবসা অনুষদ এবং কার্জন হলে গিয়ে দেখা যায়, কিছু কিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে এলেও শিক্ষকদের কোন ক্লাস নিতে দেখা যায়নি। তবে কিছু বিভাগের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলতে দেখা যায়। শিক্ষকদের এই আন্দোলন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে সরব হতে। কার্জন হলের নামনে দাঁড়িয়ে পদার্থ বিদ্যার শিক্ষার্থী নুরুল ইসলাম বলছিলেন, শিক্ষকরা যে আন্দোলন করছেন সেটি অবশ্যই যৌক্তিক। তবে আন্দোলনের কারণে যেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেশনজটে না পড়ে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। সব দিক বিবেচনা করে আমরা শিক্ষকদের আন্দোলনের সঙ্গে সহমত পোষণ করছি। পাশে দাঁড়ানো তার বন্ধু সোহেল বলেন, বেতন স্কেলে শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও বেতন-ভাতায় বৈষম্য বিদ্যমান, যা শিক্ষকদের আত্মমর্যাদার জন্য হুমকি। তাই আমাদের সামান্য সমস্যা হলেও আমরা শিক্ষকদের এই আন্দোলনে সমর্থন জানাই। ঘটনার জন্য শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে, প্রশাসন ক্যাডারের কিছু কর্মকর্তাকে দায়ী করতে। তবে কর্মবিরতি দীর্ঘ হওয়ার আগেই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা শিক্ষার্থীদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে বটতলায় দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, শিক্ষকদের পক্ষ থেকে যে দাবি জানানো হয়েছিল তার বাস্তবায়ন না হওয়ায় লাগাতার কর্মবিরতিতে যেতে শিক্ষকরা বাধ্য হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কোন সেশনজট নেই। তবে আন্দোলন দীর্ঘদিন চললে শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়তে পারে। আর এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টরা দায়ী থাকবেন। ২ জানুয়ারি কর্মবিরতি ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত সরকারের কোন পর্যায়ের সঙ্গে তাদের কোন আলোচনা হয়নি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, সিনিয়র মন্ত্রীরা পর্যন্ত শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করেছেন। কিন্তু এটা যাদের বাস্তবায়নের কথা তারা তা বাস্তবায়ন করেনি। অর্থাৎ শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে, এমন কেউ নিশ্চয় আছে। এদিকে ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না। শিক্ষকরা প্রশাসনিক কোন দায়িত্বও পালন করছেন না। আমাদের নয় মাস ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরিয়ে এ অবস্থায় নিয়ে এসেছে। আমলারা ইচ্ছা করেই এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। ওরা ভাবছে ওরা কুলীন লোক, ওদের পর্যায়ে কাউকে দেয়া যাবে না। গত ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলোর ফেডারেশনের বৈঠকে থেকেই শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের দিকে যেতে চেয়েছিলেন জানিয়ে সরকার সমর্থক নীল দলের অন্যতম এ শিক্ষক নেতা বলেন, ওই সময়ে সামনে কেবিনেট মিটিং থাকায় আমরা তখন সময় নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি, কেবিনেট মিটিংয়ের পর প্রধানমন্ত্রী সেই আমলাদের সঙ্গেই বৈঠক করলেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে ভুলভাবে বোঝানো হয়েছে। তারা (আমলা) এখন আমাদের ৯টা-৫টা ডিউটি করার কথা বলছে। আমরা তো কেরানি না যে নয়টা-পাঁচটা ডিউটি করব। আমাদের অফিস তো ২৪ ঘণ্টা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যদি আমরা মাত্র ৫ মিনিটও বসি, তাহলেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। অচলাবস্থা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ॥ শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। প্রথম দিন জবিতে ক্লাস এবং মিডটার্মসহ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাও বন্ধ ছিল। শিক্ষকরা প্রশাসনিক দায়িত্বেও কর্মবিরতি পালন করছেন। সকাল ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন জবি শিক্ষকরা। এ সময় তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা বক্তব্য রাখছেন। এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, আমরা এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা এখন আন্দোলন না করলে শিক্ষার্থীরা লং টার্ম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। উচ্চশিক্ষাকে বাঁচানোর জন্য আমাদের এই আন্দোলন। শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষার্থীর মন্তব্য জানতে চাইলে তারা সবাই প্রায় একই রকম বক্তব্য দেন। তারা বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত। আমরা তাতে সমর্থন দেই। কিন্তু ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তারা দ্রুত বিষয়টির সুরাহা করতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও (শেকৃবি) লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবে সমবেত হয়ে বেলা এগারোটা থেকে এ কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন তারা। কোন অনুষদেই ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির পাঠদান কার্যক্রম। শুধু ফাইনাল পরীক্ষার ফর্ম পূরণের জন্য শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ভবনে যেতে দেখা গেছে। তবে মাসিক পরীক্ষা না হলেও ফাইনাল পরীক্ষা সময়মতো হবে বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন একাধিক শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনার পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ সেকেন্দার আলী বলেছেন, অষ্টম জাতীয় পে স্কেলে শিক্ষকদের হেয় করা হয়েছে। প্রস্তাবিত দাবি না মানা পর্যন্ত শিক্ষকদের এ কর্মবিরতি চলবে বলেও জানান তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ॥ অর্থমন্ত্রী প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ ও অন্যান্য অসঙ্গতি দূর করার দাবিতে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষা কার্যক্রম। দু’একটি বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও অধিকাংশ বিভাগের নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী সোমবার সকাল থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছে জাবি শিক্ষক সমিতি। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোঃ খবির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ কর্মবিরতি পালন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সকাল থেকে রাবিতে এ কর্মসূচী পালন করছে শিক্ষক সমিতি। রাবিতে অবশ্য ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শীতকালীন ছুটি থাকায় ক্লাস বন্ধ রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস খুলেছে। অফিস খোলা থাকাকালে বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মবিরতির কারণে সোমবার সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ রেখেছেন শিক্ষকরা। রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রেজাউল করিম জানান, ছুটির কারণে এমনিতেই ক্লাস বন্ধ। তবে, পরীক্ষা নেয়ার কথা থাকলেও কর্মবিরতির কারণে পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও পালন করছেন সর্বাত্মক কর্মসূচী। শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতির কারণে সোমবার কোন ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। পুরো ক্যাম্পাস ছিল শিক্ষার্থীশূন্য।দেশব্যাপী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার থেকে একযোগে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হলেও চবিতে তা শুরু হয়েছে ৩ জানুয়ারি থেকে। ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চবি শিক্ষকরা পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষাসমূহ নিয়েছেন। সোমবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করায় মুখ থুবড়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতির প্রথম দিনে চবিতে বেশ কয়েকটি বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ৪০৩ নং কোর্সের পরীক্ষা, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের এমএসএস ৫০৩নং কোর্সের সোমবারের পরীক্ষা, বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ২০১ নং কোর্সের পরীক্ষা এবং ২০১০ সালের প্রথম বর্ষ বিএ সম্মান (বিশেষ) এর সকল কোর্সের পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. খসরুল আলম কুদ্দুসী বলেন, আমাদের কোন বিকল্প নেই বিধায় আমরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচী দিতে বাধ্য হয়েছি। তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হলেও আমরা পরবর্তীতে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে সেটি পুষিয়ে দেব। আমরা আন্দোলন করতে চাই না। আন্দোলন আমাদের পেশা নয়। তবুও আমাদের দাবিসমূহের প্রতি কোন প্রকার কর্ণপাত না করায় আমরা বাধ্য হয়েছি আন্দোলনে যেতে। জানা গেছে, কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। দুই ঘণ্টার কর্মবিরতিতে ২৬ ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা ॥ পে-স্কেলের বৈষম্য নিরসনের দাবিতে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি শুরু করেছেন প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডার ছাড়া অন্য সকল ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা। কালো ব্যাজ ধারণ করে বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সকল সরকারী অফিসে শিক্ষক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসক, ২৬টি ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের কর্মকর্তারা কর্মবিরতি পালন করেন বলে বিসিএস সমন্বয় কমিটির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য স ম গোলাম কিবরিয়া জানিয়েছেন। পাঁচ দফা দাবিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত সরকারী কর্মকর্তা পরিষদের ব্যানারে একই সময়ে কর্মবিরতিতে আছেন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা। সংগঠনের সভাপতি মোঃ শফিউল আজম জানান, বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সারাদেশের সাড়ে তিন লাখ নন-ক্যাডার কর্মকর্তা দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করছেন। অষ্টম বেতন কাঠামোয় টাইমস্কেল ও সিলেকশনগ্রেড বহাল, প্রথম শ্রেণীর ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের একই গ্রেডে বেতন, চাকরি জীবনে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের চারটি উচ্চতর বেতনধাপ পরিবর্তনের সুযোগ, ইউএনওদের কর্তৃত্ব ক্ষমতা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশ বাতিল এবং নিজস্ব সার্ভিস ও বিভাগ ছাড়া সব প্রেষণ বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। অন্যদিকে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল পুনর্বহাল, সরকারী প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে যোগদানে ক্যাডার নন-ক্যাডার বৈষম্যের সিদ্ধান্ত বাতিল, ইউএনওকে দেয়া কর্তৃত্ব আদেশ বাতিল, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ বিভিন্ন দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে আছে ২৬টি ক্যাডারের সংগঠন বিসিএস সমন্বয় কমিটি। আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বিসিএস সমন্বয় কমিটি এবং সরকারী কর্মকর্তা পরিষদ প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করবে।
×