ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মহিলাদের শ্বেতপ্রদর বা লিউকোরিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১২ জানুয়ারি ২০১৬

মহিলাদের শ্বেতপ্রদর বা লিউকোরিয়া

শ্বেতপ্রদর আমাদের দেশেই সবারই জানা একটি নাম। আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একে বিভিন্ন নামে নামকরন কর হয়ে থাকে। যেমন- সাদা-স্রাব, প্রমেহ, মেহ ইত্যাদি। অনেকের ধারনা, শ্বেতপ্রদর বা লিউকোরিয়া কোন একটি রোগের নাম, কথাটি সত্য নয়। এ নামে কোন রোগ নেই। এটি একিট উপসর্গ মাত্র। যোনির নিঃসরণকেই শ্বতপ্রদর বা লিউকোরিয়া বলা হয়। বিভিন্ন কারনে শ্বেতপ্রদর হতে পারে এবং সেই কারনের উপরই নির্ভর করবে নিঃসরিত স্রাবের রং কি হবে? শ্বেতপ্রদরের অন্যতম ও প্রধান কারন হচ্ছে যোনিপথের ইনফেকশন বা জীবানু দূষন, এমনকি সে ক্ষেত্রে যদি নিঃসরন কোনরকম ইনফেকশন ছাড়াও ঘটে তবে তাকেও শ্বেতপ্রদর বা লিউকোরিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এমন ও যদি হয় যে, যোনি ও জরায়ূগ্রীবায় ক্যান্সারের কারনে ও রক্তাভযোনি নিঃসরন ঘটে তাকে ওলিউকোরিয়া ধরা হয়। উপরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, লিউকোরিয়ার প্রধান কারন ইনফেকশন। প্রধান যেদু’টি জীবানু লিউকোরিয়ার জন্য দায়ী তা হলো ট্রাইকোমনোস ভ্যাজিনালিস এবং ক্যানডিডা এলবিকাসন। দু’টি রোগই যৌনমিলনের মাধমে ছড়ায়। এর ভয়াবহতার গুরুত্ব বিচেচনা করে রোগ দু’টিকে লঘু যৌণরোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও গার্ডনেরেলা ভাজিনালিস, মাইকোপ্লাসমা হোমিনিস, ইউরিয়াপ্লাসমা ইউরিয়া লাইটিকাস, গণোকক্কাস, ক্লামাইডিয়া, হারপিস সিমল্লেক্স ইত্যাদি জীবাণুর কারণে বিভিন্ন রকমের ও রঙের নিঃরসণ ঘটতে পারে। তবে এই প্রতিবেদনের মূলত প্রথম গুরুত্বপর্ণ দুটো জীবাণুর ওপরেই আলোচনা সীমিত রাখা হবে। ক্যানডিডিয়াসিস: এর আরেকটি নাম মনিলিয়াসিস এবং এ রোড় যে ছত্রাক জীবানু দিয়ে হয় সে জীবাণুটির নাম ক্যানডিডা অ্যালবিকাসন। অতি প্রাচীন এ রোড়। তবে এ জীবাণু আবিস্কৃত হয়েছে ১৯৩৯ সালে। যে বিজ্ঞানী এে আবিষ্কার করেন তার নাম ল্যানজেনাবেক। এই জীবাণুগুলো মুখ, গলা, বৃহদন্ত এবং যোনিপথে সচরাচর সংক্রমণ ঘঁটায়। তারা ভেজা এবং গরমস্থানে অতি সহজেই আক্রমন ঘঁটাতে সক্ষম। তবে শুস্ক স্থানে (ত্বকে) তারা কখনোই আক্রমন ঘঁটায়। তারা ভেজা এবং গরমস্থানে অতি সহজেই আক্রমন ঘঁটাতে সক্ষম। তবে শুস্ক স্থানে (ত্বকে) তারা কখনোই আক্রমন ঘঁটাতে পারে না। তাই তারা মুখ থেকে শুরু করে ফুঁসফুঁস,যোনি, ভেজা ত্বকে বা চামড়ার ভাঁজ, অন্তানালী ইত্যাদি স্থানে সংক্রিমত হয় ।এটা নারী বা পরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সংক্রমিত হয়ে থাকে। পরুষের ক্ষেত্রে উপসর্গ: পরুষের ক্ষেত্রে প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া বা যন্ত্রনা অনুভত হয়। প্রসাবের পথে চুলকানি এবং সাদা পদার্থের নিঃসরন –যা পরিমাণে খুবই ক হয়ে থাকে। পরুষের ক্ষেত্রে প্রসাবের নালীর অগ্রভাগে লক্ষ্য করলে প্রদাহজনীত লালচে ভাব দেখা যায়। মহিলাদের অনেক ক্ষেত্রেই এ রোগের কোন উপসর্গ থাকে না। যাদের থাকে তাদের সাদা স্রাব বা অন্য রঙের যোনি নিঃসরণ, যোনিপথের চুলকানি, প্রসাবের পথে জ্বালা যন্ত্রনা, কারো কারো ক্ষেত্রে সহবাসের সময় ব্যাথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। যোনিপথ পরিক্ষা করলে প্রদাহের কারণে ফোলা লালচে ভাব দেখা যায় এবং ভিতরে যে নিঃসরণ দেখা যায় তা পানির মত এমনকি চুনের মত দেখা যেতে পারে। রোগ নির্ণয়: এ ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে ছত্রাক নির্ণয় করা যায় ঠিকই, তবে সাধারনত:তা করা হয় না। রোগের উৎসব বা লক্ষণ শুনেই চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। একটা কথা জেনে নেয়া প্রয়োজন যে, এই জীবাণু আমাদের দেহে বিশেষ করে গলা, মুখে বৃহদন্ত্রে, যোনিপথে, পরজীবী হিসেবে কোনোরকম ক্ষতি করা ছাড়াই মানব দেহে বসবাস করে। তবে নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে অন্ত:সত্ত্বা হলে, ডায়াবেটিস্ দেখা দিলে কার্টিসোন গ্রুপের ঔষধ সেবন করলে, স্বাস্থ্যহীনতা ও দুর্বলতায় ভূগলে, বেশি পরিমাণ এন্টিবায়োটিক খেলে, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে খাবারে বেশী পরিমাণ সুগার খেলে দেহের অভ্যন্তরে (বৃহদন্ত্রের) নিস্ক্রিয় জীবাণু সক্রিয় হয়ে উঠে এবং আবার আমাদের দেহে ত্বরিত আক্রমন ঘঁটায়। ট্রাইকোমোনিয়াসিস: ই্ েেরাগের জীবাণুটির নাম ট্রাইকোমোনাস্ ভ্যাজিনালিস্। ভ্যাজিনালিস্ শব্দটি শুনলে মনে হয় যেন ভাজিনা থেকে এসেছে ভ্যাজিনালিস্ শ্বদটি। সেই কারণে স্বাভাবিকভাবেই মনে হয় যেন এ রোগ বুঝি শুধু মহিলাদের হয়। আসলে কিন্তু সেটা নয়।নারী- পরুষ উভয়ের এ রোগটি হতে পারে। এ জীবাণু দেখতে ডিম্বাকৃতির এবং শ্বেত কণিকার চেয়ে কিছুটা বড়। এই জীবানুটি যোনিপথ ছাড়াও কিডনীতন্ত্রের নিচের অংশে আক্রমন ঘঁটাতে সক্ষম। এটিও অন্যান্য যৌন রোগের মত সহবাসের মাধ্যমে একের থেকে অপরের দেহে সক্রিমত হয়। আক্রন্তা রোগীর অর্ন্তবাস ব্যবহার করলেও সংক্রিমত হতে পারে। জীবাণু শরীরে প্রবেশের ৪ থেকে ১২ দিনের মধ্যে রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। উপসর্গ: অধিকাংশ আক্রান্ত পুরুষের ক্ষেত্রে এ রোগের কোন উপসর্গ থাকে না। অনেকের ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণ মূত্রনালী নিঃসরণ থাকতে পারে। প্রসাবের রাস্তায় সামান্য পরিমাণ জ্বালা-যন্ত্রণাও থাকতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে যোনির নিঃসরণ যা পাতলা থেকে শুরু করে হলদে রঙের হতে পারে। যোনিপথের চুলকানি, তলপেটের ব্যাথা, ঘন ঘন প্রসাব হওয়া এবং জ্বালা যন্ত্রণা ও এক সাথে থাকতে পারে। এ রোগটি নির্ণয়েরক্ষেত্রে সাধারণত: ল্যাবরেটরি পরীক্ষার সাহায্য ছাড়াই চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। তবে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে রোগটি সনাক্ত করা যায়। চিকিৎসাঃ এ ক্ষেত্রে অন্যান্য যৌন রোগের মতই স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই এক সাতে চিকিৎসার প্রয়োজন।ট্যাবলেট মেট্রোনিডাজল ২৫০মিঃগ্রাম রোজ ৩ বার ০৭ দিন পর্যন্ত দিতে হবে। অথবা এক সাতে ২ গ্রাম মেট্রোনিডাজল অর্থাৎ৪০০ মিঃগ্রামের সাড়ে ৪টি বড়ি এক সাথে খেতে হবে। ক্যানডিডা অ্যালবিকাসন –এর ক্ষেত্রে ক্লোট্রিমাজল ১% ভ্যাজিনার ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্লোট্রিমাজল ভ্যাজিনাল ট্যাবলেট রোজ ২ বর ৬দিন পর্যন্ত ব্যবহার করলেও খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। ডাঃ দিদারুল আহ্সান চর্ম, এলার্জি ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ চেম্বার: গ্রীন সুপার মার্কেট, গ্রীন রোড।
×