ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশ্নবিদ্ধ প্রশ্নপত্র

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১২ জানুয়ারি ২০১৬

প্রশ্নবিদ্ধ প্রশ্নপত্র

বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির বুঝি শেষ নেই। এতদিন হৈ-চৈ হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ফল নিয়ে, এবার শোনা গেল ভুলে ভরা ও অসঙ্গতিপূর্ণ প্রশ্নপত্রের। বিষয়টি ধরা পড়ে গত শুক্রবার দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত ৩৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রাক্কালে। এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন দুই লাখ ১১ হাজার ৩২৬ চাকরিপ্রার্থী। প্রদত্ত প্রশ্নপত্রে বেশ কয়েকটি প্রশ্নে একেবারে সাধারণ বানান ভুল থেকে শুরু করে পাওয়া যায় ব্যাপক অসঙ্গতি। সম্পাদকীয়র সীমিত পরিসরে বিস্তারিত লেখার অবকাশ নেই। শুধু এটুকুই বলা বোধ করি যথেষ্ট বলে বিবেচিত হবে যে, ডিজিটাল যুগে প্রায় সবার হাতে হাতে যখন শোভা পায় মোবাইল ফোন, তখন ইংরেজীতে সেই সাধারণ বানানটিই ভুল লেখা হয়েছে বিসিএসের মতো একটি উচ্চমানের পরীক্ষায়। অসঙ্গতির কথা আর কী বলা যায়! অনেক প্রশ্নে চারটি উত্তরের মধ্যে যেগুলো দেয়া হয়েছে তার একটিও সঠিক নয়। বিতর্কের শেষ নেই এখানেও। উত্তর প্রদানের জন্য সরবরাহকৃত ওএমআর শীটে প্রশ্নপত্রের কোড আগে থেকেই পূরণ থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। কেননা, ওএমআর শীটে ফিলআপ করা কোড আর প্রশ্নপত্রের কোড মেলেনি অনেকের। ফলে স্বভাবতই প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে পরীক্ষার্থীরা একদিকে হয়েছেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়, অন্যদিকে বিড়ম্বিত। কেন্দ্রীয়ভাবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) কর্তৃক পরীক্ষা নেয়ায় পরীক্ষার হলগুলোতে এসবের তাৎক্ষণিক উত্তর তথা সমাধান দেয়ারও কেউ ছিল না। ফলে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে আটঘাট বেঁধে পরীক্ষার হলে উপস্থিত হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীকে ফিরতে হয়েছে ব্যর্থমনোরথ ও একবুক হতাশা নিয়ে। সে অবস্থায় বিসিএস পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের প্রশ্ন যথার্থ, ভুলে ভরা এবং অসঙ্গতিতে পূর্ণ প্রশ্নপত্রের দায়ভার নেবে কে? বিসিএস একটি উচ্চশ্রেণীর পরিশীলিত পরীক্ষা। বলা যায়, দেশের সর্বোচ্চ ক্যাডার সার্ভিসে প্রবেশের পরীক্ষা। মেধাবী ছাত্রছাত্রী মাত্রই শিক্ষাজীবন শেষে স্বপ্ন দেখে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসে প্রবেশ করে দেশসেবা ও জনগণের কল্যাণে অবদান রাখার। সেক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে শুরুতেই যদি তাকে হোঁচট খেতে হয়, তাহলে সে হতাশ হবেই। বিসিএসের মতো সর্বোচ্চমানের পরীক্ষায় ভুল ও অসঙ্গতি থাকা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ও লজ্জাজনক, অনাকাক্সিক্ষত তো বটেই। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান যা বলেছেন তাও অনেকটা দায়সারা গোছের। আগেও দু-একবার এমন হয়েছে জাতীয় সাফাই গেয়ে তিনি বলেছেন, পরীক্ষার্থীদের যাতে ক্ষতি না হয় সেটা পিএসসি কর্তৃপক্ষ দেখবে। প্রশ্নে ভুল হলে সেই নম্বরগুলো বাদ দিয়েই মূল্যায়ন করা হবে উক্তিটি অত্যন্ত দায়িত্বহীন এবং দায় এড়ানোর অপপ্রয়াস মাত্র। বরং যে বা যারা এ জাতীয় পশ্নপত্র প্রণয়ন ও দেখভালের সঙ্গে জড়িত, যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। প্রয়োজনে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা উচিত। এমনিতেই দেশে সার্বিকভাবে শিক্ষার মান, বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বিসিএস পরীক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতিসহ প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হলো ভুলে ভরা অসঙ্গতিপূর্ণ প্রশ্নপত্র। আর বাকি থাকল কী? অথচ, এসব চাকরিপ্রার্থীই বিসিএস পাস করে অদূর ভবিষ্যতে দেশ শাসন করবে, প্রশাসন চালাবে, শিক্ষক, প্রকৌশলী ও চিকিৎসক হবে। তাতে যে দেশের অবস্থা আরও বেহাল হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কোন অবস্থাতেই এরকম নৈরাজ্যজনক অবস্থা মেনে নেয়া যায় না। পিএসসিকে এ বিষয়ে আরও দায়িত্ব সচেতন হতে হবে। জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে তাদের কার্যকলাপ। দেশ ও জাতির ভবিষ্যত কর্ণধারদের দায়িত্বহীন আচরণ কখনওই প্রত্যাশিত নয়।
×