ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা জঙ্গীদের নিয়ে জামায়াতী নাশকতার চেষ্টা পুলিশী বাধায় সে সময় ভেস্তে যায়

নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা চেয়ারম্যান ঢাকায় গ্রেফতার ॥ রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা মামলার আসামি

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১২ জানুয়ারি ২০১৬

নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা চেয়ারম্যান ঢাকায় গ্রেফতার ॥ রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা মামলার আসামি

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ রামু বৌদ্ধবিহারে হামলা মামলার আসামি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা তোফায়েল আহম্মদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার ভোর রাতে ঢাকার সুন্দরবন হোটেলের ৩১৮ নম্বর কক্ষ থেকে একটি পিবিআই দল তোফায়েলকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত দুর্গাপূজার সময় প্রথম সারির দুই রোহিঙ্গা জঙ্গী মৌলভী আবু ছালেহ ও ইব্রাহিম আতিকের সঙ্গে জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের নিয়ে জামায়াত নেতা তোফায়েল আহম্মদ বান্দরবান ও কক্সবাজারে দুটি ম-পে বড় ধরনের নাশকতার চেষ্টা চালায়। ওইসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেষ্টায় বড় ধরনের নাশকতা থেকে রক্ষা পেয়েছে দেশ ও জাতি। ধৃত জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান মলিডাবিটি অর্গানাইজেশন আরএসওসহ দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের জঙ্গীদের মদদ দেয়ার প্রমাণও পেয়েছে সরকারের বিশেষ সংস্থা। কিছুদিন আগে ভয়ঙ্কর এ জামায়াত নেতার বাসায় অভিযান চালিয়ে ল্যাপটপ ও মোবাইলফোনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছিল। এরপর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন রামু বৌদ্ধ বিহারে ধ্বংস লীলায় নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত এ জনপ্রতিনিধি। সোমবার তার গ্রেফতারের খবর এলাকায় পৌঁছলে নাইক্ষ্যংছড়িতে অনেকে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। সূত্র জানায়, রামু বৌদ্ধ বিহারে হামলা মামলায় প্রাথমিক তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় পুলিশ তার বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করে। কক্সবাজার আদালতে তার বিরুদ্ধে একাধিক চার্জশীট গ্রহণ করে তোফায়েলকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে। পরে তিনি উচ্চ আদালতে আপীল ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশে স্থগিতাদেশ নিয়ে এলাকায় ফিরে এসে তাকে অপসারণ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আরএসও, জামায়াত-শিবির ক্যাডার ও রোহিঙ্গা জঙ্গীদের নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। কষতে থাকেন বড় ধরনের নাশকতার ছক। এছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারী টাকা আত্মসাত করতে চাইলে বাদ সাধেন ইউএনও। এতে ক্ষিপ্ত তিনি নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম ছায়েদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ প্রেরণ করে। উপজেলা চেয়াম্যানের চেয়ার আঁকড়ে ধরে রাখতে এবং সরকারী টাকা অপচয়ে বাধাদানকারী ইউএনওকে সরাতে ব্যাপক তদ্বির চালান জামায়াতের এ নেতা। ৫৩ জনের স্বাক্ষর জাল করে ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রেরণ করেন উচ্চ পর্যায়ে। ৪ জানুয়ারি বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অভিযোগটি সরেজমিনে তদন্তে গেলে ৫৩ জনের মধ্যে কেউই অভিযোগ সম্পর্কে জানেন না এবং ওসব স্বাক্ষর তাদের নয় বলে জানিয়েছেন। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে তোফায়েল আহম্মদ নাইক্ষ্যংছড়িতে ফিরলে লোকজন এগিয়ে আসেনি। তবে আরএসও জঙ্গীরা তাকে ফুলের মালা গলায় পরিয়ে সংবর্ধনা জানায়। এসময় স্থানীয় অধিবাসীদের অনেকে বিষয়টিকে ধিক্কার জানায় এবং ছি ছি করে। সূত্র মতে, তোফায়েল আহম্মদ চেয়ারম্যানের প্রভাব খাটিয়ে নাইক্ষ্যংছড়িতে নিরীহ জনগণের প্রায় দেড় হাজার একর জমি অবৈধ দখলে রেখেছেন। সরকারের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও তার সহোদর জহির আহমদকে দিয়ে রামুর এক আ’লীগ নেতার সহযোগিতায় নাইক্ষ্যংছড়িতে ইটেরভাঁটি স্থাপন করে পরিবেশ প্রতিবেশ বিষিয়ে তুলেছেন। প্রভাব খাটিয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দিয়ে অবৈধ ওই ইটভাঁটি পাহারা ও সরকারবিরোধী আন্দোলনে এসব রোহিঙ্গাকে ব্যবহার করে থাকেন এ চেয়ারম্যান।
×