ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবু সুফিয়ান কবির

নতুন বছরের প্রত্যয় হোক নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

নতুন বছরের প্রত্যয় হোক নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করা

সাধনা ও কঠোর অধ্যাবশায় করলে জীবনে সাফল্য অনিবার্য। তাই বলে চলার পথ সব সময় মসৃণ থাকে না। কখনও কখনও দেখা দেয় সমস্যা ও সংঘাত। এই সব সমস্যাকে বুদ্ধিমত্তা ও সাবধানতার সঙ্গে মোকাবেলা করে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়। আমরা নতুন বছরে প্রদার্পণ করেছি। নতুন বছরে জীবন চলার পথে সব ধরনের বাধাকে অতিক্রম করতে হলে প্রয়োজন নিজেকে আরও বেশি আত্মনির্ভরশীল করা। তবেই আসে জীবনের সার্থকতা। একটি গাছে যেমন গোলাপ ফুটে, সেই ফুলে থাকে সৌরভ-সৌন্দর্য, সেই সঙ্গে থাকে কাঁটার যন্ত্রণা। সাফল্যের চূড়ান্ত জীবনে চলার পথে থাকে সংঘাত, প্রতিবন্ধকতা, অশ্রু ও যন্ত্রণা। আমরা যখন এসবের সম্মুখীন হই তখন চলার পথে থেমে যাই, মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি। কিন্তু এর সবকিছুই বুদ্ধিমত্তা আর দক্ষতা দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলতে পারাটার জন্য নিজেকে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল, প্রেমে ব্যর্থতার কারণে অনেকে হতাশ হয়ে পড়ে। কেউ আছে ক্রীড়া বা সংস্কৃতিক কর্মকা-ে অন্যের চেয়ে ভাল করতে না পারলে নিজেকে অযোগ্য মনে করেন। ফলে তারা নিজেরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। আগামীর জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। পরমুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে। এই সময় প্রয়োজন আত্মনির্ভরশীলতা বাড়ানো। মনে রাখবেন ভবিষ্যত জীবনে আপনি কি করতে চান বা কি হতে চান না তা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন। নিদ্ধান্ত নেয়ার পর সেখানে পৌঁছানোর জন্য একটি সঠিক পথনির্দেশনা তৈরি করুন। এতে আপনার পরিকল্পনা গ্রহণ সহজ হবে। চলার পথে আপনার প্রয়োজন এমন সঙ্গী বা বন্ধু যারা আপনার জীবনের চলার পথে ভাল পরামর্শ দেবেন। তাই সঙ্গী নির্বাচন করতে হবে এমন যার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখা যায়। তাছাড়া সব সময় ভবিষ্যত পরিকল্পনার জন্য চিন্তা করতে হবে। পারিপাশ্বিক বিষয়গুলো এমনভাবে গুছিয়ে রাখতে হবে যেন ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়টি নিয়ে স্বচ্ছন্দ্যে চিন্তা করা যায়। তাই বন্ধুদের কর্মকা-ে যদি মানসিক বিড়ন্বায় সর্বত্র পড়তে হয় তাহলে ভবিষ্যত পরিকল্পনার চিন্তায় ভাটা পড়ে। আজকাল সময়টা এমন যে চতুর্দিকে আধুনিকতার ছোঁয়া। সব কিছুই প্রতিদিন আপডেট হচ্ছে। পোশাক, মোবাইল, পড়ালেখার সামগ্রী ও এবং খাদ্যাভাসে আধুনিকতাকে ধারণ করতে গিয়ে আমরা অহেতুক অপব্যয় করে থাকি। যা না হলেও চলবে তা দিয়েই চলতে হবে। যেমন একটি সাধারণ মোবাইল দিয়ে কাজ করা যায় তাহলে দামী মোবাইল কিনে অপব্যয় করা ঠিক নয়। বরং ভবিষ্যতের জন্য টাকা রোজগার করাটা জরুরী। আর ভবিষ্যতের জন্য কিছু রোজগার রাখলে তা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। আর যদি কারও কাছে টাকা ধার নিয়ে থাকেন তাহলে তা যত দ্রুত পারেন পরিশোধ করুন। এতে নিজেকে হালকা মনে হবে। আর টাকা ধার করে এমন কিছু ক্রয় করবেন না যা না হলেও আপনার চলবে। সব সময় মনে রাখবেন আপনি আজ যে অবস্থায় আছেন তার থেকে অনেক খারাপ অবস্থায় আছে পৃথীবির অনেক মানুষ। যদি কখনও কারও প্রতি সামান্যতম কোন উপকার বা সহানুভূতি পেয়ে থাকেন তাহলে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। এতে নিজেকে অনেক আত্মনির্ভরশীল মনে হবে। মনে রাখবেন আজ যদি আপনি কারও উপকার করেন তাহলে তার ভাল প্রতিদান পাবেন। আর যদি কারও প্রতি অন্যায় করেন বা ঠকিয়ে কিছু করেন তাহলে তা হবে আত্মঘাতী। তাই যতদূর সম্ভব পারা যায় মানুষের উপকার করার চেষ্টা করুন। প্রতিদিনের জীবনযাপনের গ-ি থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে আরও সমৃদ্ধশালী করতে বর্তমান সময় কাজে লাগে এই সব বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিন বা ডিপ্লমা করুন। এতে নিজের ভিত মজবুত হয় কখনও নিজেকে অসহায় মনে হয় না। আর তাছাড়া একঘেয়ে জীবন সব সময় ভাল লাগে না। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে নিজেকে সংস্কৃতিক ও সেবামূলক কর্মকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করুন। সব সময় মনে রাখবেন জীবনের উত্থান-পতন আছে। যদি আপনি কোন একটি কাজে প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন তাহলে হতাশ না হয়ে বরং ভাবুন কী কারণে তা ব্যর্থ হলো। তাহলেই তা অন্য নতুন কোন প্রচেষ্টা শুরু করা যায়। জীবনে যত বেশি উত্থান-পতন হবে, আপনার লক্ষ্য ততই নিকটে আসার মতো আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে। প্রত্যেক পরিস্থিতিতেই আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে তা থেকে সার্থকতা আসে। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। অহেতুক রাত জেগে কাজ করলে বা টেলিভিশনের সামনে সময় নষ্ট করলে দিনে কাজে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়। পর্যাপ্ত ঘুম, অনুশীলন ও পুষ্টিসম্পন্ন খাবার আপনার মনকে প্রফুল্ল রাখবে, কাজে প্রেরণা বেড়ে যায় এবং বিষণœœতা থেকে মুক্ত রাখে। এতে আত্মনির্ভরশীলতা বাড়ে। কোন কাজ শেষে কোন সামান্য গরমিল দেখা দিলে বা কাজটি ক্রটিমুক্ত মনে হলে তা এড়িয়ে না চলে বরং তার প্রতি অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিন। চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে আপনার জানা সমস্ত কিছু কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে ভুলবেন না। আপনি নিজেকে যত যোগ্যতাসম্পন্ন করে উপস্থাপন করতে পারবেন, ততই আপনার আত্মবিশ্বাস বড়বে। যে কোন কাজে অন্যকে সহযোগিতা করবেন এবং নিজের কাজে অন্যের সহযোগিতা চাইতে ভুলবেন না। নিজেই সব কিছু পারেন, এই ধরনের চিন্তা অনেক সময় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, আসলে আপনি যে পড়াটি বা কাজটি পছন্দ করেন না বা অবচেতনে মনে রাখতে চান না, কিংবা যা আপনি মনে রাখতে পারবেন না বলে আগে থেকে ধরে রাখেন, সেগুলো মনে রাখা আসলেই কঠিন। তাই আপনি যা পড়ছেন বা যা জানতে চাইছেন তার প্রতি আগে নিজের আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। আপনাকে আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে হবে যে আপনি পারবেন। এই ইতিবাচক চিন্তাই আপনার মনোযোগ বাড়তে অনেক সাহায্য করবে। স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কিছু কৌশল রয়েছে। যেমন ছোটবেলায় রংধনুর সাতটি রঙ্গের নাম মনে রাখতে গিয়ে কেউ ‘বেনীআসহকলা’ শব্দটি শিখিয়ে দিয়েছিল। অন্যান্য পড়ার ক্ষেত্রেও সুবিধা অনুযায়ী শব্দ বা ‘কি ওয়ার্ড’ বা ‘গুরুত্বপূর্ণ শব্দ’ তৈরি করুন এবং তা মনে রাখার চেষ্টা করুন। সেই সূত্র ধরে পুরো পড়াটি মনে পড়বে। শুধু স্মরণশক্তি নয় জীবনকে প্রতিষ্ঠিত ও সার্থক করতে নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করতে হবে। নিজের আত্মবিশ্বাস নিজেকেই বাড়াতে হবে। মনে রাখবেন হতাশা জীবনকে বিপথগামী করে তোলে। ছবি : আরিফ আহমেদ মডেল : সাফা কবির ও তানজিন তিশা
×