ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

নেত্রকোনার ননী ও তাহেরের রায় যে কোন দিন

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

নেত্রকোনার ননী ও তাহেরের রায় যে কোন দিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার দুই রাজাকার মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননী ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে মামলার রায় হবে যে কোন দিন। বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল বলেছেন, ‘এখন যে কোন দিন রায় হতে পারে। দুই আসামিকে রবিবার কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল। দেড় বছর আগে তারা গ্রেফতার হন। চলতি মাসের ৪ জানুয়ারি থেকে প্রসিকিউশন পক্ষ ও আসামি পক্ষের চার দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার পর্যায়ে এল। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নী। আসামি পক্ষে ছিলেন আব্দুস সোবাহান তরফদার ও গাজী এম এইচ তামিম। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের দুই সহোদর এটিএম নাসির আহম্মেদ ও শামসুদ্দিন আহম্মদসহ পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৩তম সাক্ষী মাহবুুবুর রহমান ও ২৪তম সাক্ষী আব্দুল কাদের জিলানী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। তারা জব্দ তালিকার সাক্ষী। জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আসামিকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। নেত্রকোনার দুই রাজাকার মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননী ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। ননী ও তাহেরের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৩ সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। আতাউর রহমান ননী ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটসহ ৬ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী ছয়টি অপরাধের অভিযোগে ননী ও তাহেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা আলী রেজা কাঞ্চন বাদী হয়ে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ননী ও তাহেরসহ ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ২০১৪ সালের ১২ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর এ দুই আসামিকে গ্রেফতারের পরদিন ১৩ আগস্ট তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ৫ নবেম্বর একটি মামলার আসামি ওবায়েদুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের মোট ৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাট। ১৫ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা, প্রায় সাড়ে ৪শ’ বাড়িঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগ। তদন্ত সংস্থা ৪ অভিযোগ থেকে প্রসিকিউশন যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে ৬ অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ (চার্র্র্র্র্জ)গুলোর মধ্যে রয়েছেÑ চার্জ-১ ॥ একাত্তরের ১৭ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে আসামিদের নেতৃত্বে রাজাকাররা নেত্রকোনা জেলার বারহাট্রা থানার বাউসী বাজার থেকে ফজলুর রহমান তালুকদারকে অপহরণ করে। এরপর নেত্রকোনা জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় নির্যাতনের পর ত্রিমোহনী ব্রিজে হত্যা করে। হত্যাকা-ের পর বাউসী বাজারের ৪০০-৪৫০টি দোকানঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। চার্জ-২ ॥ ৪ অক্টোবর ১৯৭১, বেলা আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে নেত্রকোনা শহরের বারহাট্রা রোডস্থ জিউ আখড়ার সামনের রাস্তা থেকে আসামিরা কৃতী ফুটবলার দাবির হোসেনকে অপহরণ করে। এরপর নির্যাতন চালিয়ে মোক্তারপাড়া ব্রিজের নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। চার্জ-৩ ॥ ২৯ অক্টোবর ১৯৭১ বেলা অনুমান সাড়ে ১২টার দিকে আসামিরা বারহাট্রা থানার লাউফা গ্রামে মশরফ আলী তালুকদারসহ ১০ জনকে অপহরণ করে ঠাকুরাকোনা ব্রিজে ৭ জনকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। চার্জ-৪ ॥ রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার আতাউর রহমান ননী ও অন্যান্য রাজাকাররা শহরের মোক্তারপাড়ায় মলয় বিশ্বাসের বাড়ি এবং এ্যাডভোকেট শ্রীষ চন্দ্র সরকারের বাড়ি দখল, মানষিক নির্যাতন ও দেশ ত্যাগে বাধ্য করা। চার্জ-৫ ॥ ১৫ নবেম্বর ১৯৭১ বেলা ১১টার দিকে আসামিরা বিরামপুর বাজার থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বাদিউজ্জামান মুক্তসহ ৬ জনকে অপহরণ করে। এরপর লক্ষ্মীগঞ্জ ও মোক্তারপাড়া ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। চার্জ-৬ ॥ অক্টোবরের মাঝামাঝি শিক্ষক কামিনী চক্রবর্তীসহ ২৭ জনকে হত্যা। তাদের নেত্রকোনা জেলগেট থেকে ধরে এনে নেত্রকোনা ত্রিমোহনী ব্রিজের কাছে নিয়ে হত্যা করা হয়। কিশোরগঞ্জের ৫ রাজাকার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের দুই সহোদর এটিএম নাসির আহম্মেদ ও শামসুদ্দিন আহম্মদসহ ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৩তম সাক্ষী মাহবুুবুর রহমান ও ২৪তম সাক্ষী আব্দুল কাদের জিলানী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। তারা জব্দ তালিকার সাক্ষী। জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আসামিতে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। সাক্ষ্যগ্রহণে সাহায্য করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। পরে আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান সাক্ষীদের জেরা শেষ করেন।
×