ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বাঁশির সুরে ঢাকের বোলে কালিদাসের চিত্রাঙ্কন

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

বাঁশির সুরে ঢাকের বোলে কালিদাসের চিত্রাঙ্কন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাজল বাঁশির সুর। সেই সঙ্গে এগিয়ে চলল কালিদাস কর্মকারের ব্রাশের স্ট্রোক। একসাগর রক্তের বিনিময়ে/বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা- গানের চরণ ধরে স্ফীত রেখায় মূর্ত হতে থাকল ক্যানভাস। বিশাল চিত্রপটটি ধীরে ধীরে ধাবিত হলো অবয়বের পানে। এরই মাঝে যেন গর্জে উঠল ঢাকির ঢাক আর ঢুলির ঢোল। সেই তাল ধরে এবার শিল্পী দুই হাতের মুঠো ডুবিয়ে দিলেন থরে থরে রাখা রঙের কৌটায়। তুলে আনা রংগুলো অনবদ্য দক্ষতায় লেপতে থাকলেন রেখায় ভরে ওঠা ছবির শরীরে। রঙের মিছিলের পূর্ণতা ও বিচিত্র বিন্যাসে ক্রমশই জেগে উঠল চিত্রতল। বিমূর্ত আঙ্গিকে নারীর অবয়বসহ কিছু নির্বস্তুক বিষয়ের উপস্থিতিতে সৃজিত হলো চিত্রকর্মটি। যন্ত্রসঙ্গীতের সুর মূর্ছনায় ৭১ মিনিটের শিল্প রচনায় মোহাবিষ্ট হলেন শিল্পরসিক দর্শকরা। আর এমন অভিনব শিল্পায়নের সাক্ষী হয়ে রইল জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন। রবিবার সত্তর পেরিয়ে ৭১তম জন্মদিনে পদার্পণ করেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকার। শিল্পীর জন্মের শুভদিনটি উদ্্যাপনের আয়োজনটিও ছিল ভিন্ন রকমের। পৌষের বিকেলে দেশী বাদ্যযন্ত্রের সুরের আশ্রয়ে ছবি আঁকার আয়োজন করা হয় জাদঘুরের প্রধান মিলনায়তনে। শিল্পপ্রাণ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত সুরের টানে শিল্প নির্মাণের অনুষ্ঠানটির শিরোনাম ছিল পাললিক ছন্দ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের ও মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন অতিথিবৃন্দ। আঁকাআঁকি শুরুর আগে যুগলবন্দী আয়োজনটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন কালিদাস কর্মকার। তিনি বলেন, শিল্প তখনই সমৃদ্ধ হয় যখন তা অন্য মাধ্যমগুলোর সঙ্গে মিলিত হয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করে। সে কারণেই বাঁশির সুর ও ঢাক-ঢোলের বোলের সংযোগে এ প্রয়াস। জন্মদিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের পরিবারে কখনও ঘটা করে জন্মদিন উদ্্যাপিত হয়নি। ওই রেওয়াজটাই ছিল না পরিবারে। তারপরও অন্য কেউ যখন উদ্যাপনের আয়োজন করে তখন বেশ ভাল লাগে। রামেন্দু মজুমদার বলেন, কালিদাস সব সময় চমক দিতে পছন্দ করেন। নানা মাধ্যমে কাজ করেন এই শিল্পী। ছবি আঁকার পাশাপাশি অন্য কাজও করেন। তার ছবিও বৈচিত্র্যময়। এ কারণে তার প্রদর্শনীগুলো একটি থেকে অপরটি পৃথক রূপে হাজির হয়। আবুল খায়ের বলেন, একই সঙ্গে মেধাবী ও উদ্যোমী এক শিল্পী কালিদাস কর্মকার। অসাধারণ ছবি আঁকেন। এক ধরনের রহস্যময়তা সৃষ্টি করেন ক্যানভাসে। সব সময়ই তিনি নতুন আঙ্গিকে কাজ করতে চান। রঙের বৈভবের কারণে তার অনেক ছবি না বুঝলেও দেখতে ভাল লাগে। রুবানা হক বলেন, শিল্পী কালিদাস কর্মকার কখনও যাত্রাকে মুখ্য ভাবেন না। বরং প্রত্যাবর্তনকে গুরুত্ব দেন। শিল্পীর সব প্রদর্শনীর সঙ্গে ‘পাললিক’ শব্দটি জড়িয়ে থাকে। আর নদী যখন তার তীরে পলি রাখে সেখানে তখন নতুন কিছুই জন্মায়। পলিমাটির এই দেশে কালিদাসের চিন্তায় মিশে আছে সেই অনুভব। ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, তিনি এমন এক শিল্পী যিনি চিত্রকলার সব ধরনের টেকনিক রপ্ত করতে চান এবং তা ক্যানভাসে ব্যবহার করতে চান। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের একজন শিল্পী তিনি। আলোচনা শেষে গ্যালারি টোয়েন্টি ওয়ানের পক্ষ থেকে শিল্পীকে জন্মদিনের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান আরেক চিত্রশিল্পী শামীম সুব্রানা। এছাড়া গ্যালারি কসমসের পক্ষ থেকেও নিবেদন করা হয় জন্মদিনের শুভেচ্ছা। জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে চলছে কালিদাস কর্মকারের পাললিক প্রাণ-মাটি-প্রতীক শীর্ষক প্রদর্শনী। ২২ দিনের এ প্রদর্শনী শেষ হবে ২৪ জানুয়ারি। বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক উৎসব ॥ রাজধানীর শিশু একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে চলছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক উৎসব। মেলা, আলোচনা আর সাংস্কৃতিক আয়োজন মিলে বেশ জমজমাট এখন উৎসব প্রাঙ্গণ। উৎসবটির বহুমুখী আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক কর্মকা-, সামাজিক রীতি-নীতি ও পালা-পার্বণের চিত্র। যৌথভাবে সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করেছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদ ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম। শনিবার দিনব্যাপী আয়োজনের থিম জেলা ছিল জামালপুর। জামালপুরের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয় স্থানীয় শিল্পীরা। শুরুতে ছিল ‘ঐতিহ্যে, সংগ্রামে ও সংস্কৃতিতে বৃহত্তর ময়মনসিংহ’ শীর্ষক আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। ঢাকার জামালপুর জেলা সমিতির সভাপতি হাসান মাহমুদ রাজার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ। মেলার সুবাদে বেড়েছে এ উৎসবের আকর্ষণ। ২২টি স্টলে সজ্জিত মেলায় ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার ম-া যেমন ঠাঁই পেয়েছে, তেমনি রয়েছে নেত্রকোনার গারো সম্প্রদায়ের তাঁতের তৈরি নানা ধরনের পোশাক। আর বৃহত্তর ময়মনসিংহের অন্যতম টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির দোকানে ছিল বেশ ভিড়। মেলায় আগতরা বেশ দরদাম করেই পছন্দের রঙের শাড়ি কিনে তবেই ঘরে ফিরছেন। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলমান উৎসবের দ্বার খুলবে প্রতিদিন বিকেল ৪টায়।
×