ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আল্টিমেটাম শেষে ভার্সিটি শিক্ষকদের আজ থেকে কর্মবিরতি শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

আল্টিমেটাম শেষে ভার্সিটি শিক্ষকদের আজ থেকে কর্মবিরতি শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পে স্কেলে মর্যাদাহানির অভিযোগ এনে বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আল্টিমেটাম শেষে ঘোষণা অনুসারেই আজ থেকে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাদে দেশের ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে চলবে এ প্রতিবাদ কর্মসূচী। সেমিস্টার/ কোর্স ফাইনাল ছাড়া কোন ধরনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। বন্ধ থাকবে সান্ধ্যকালীন কোর্সও। এদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের এ লাগাতার কর্মবিরতিতে সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পা রাখা অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুও পড়েছে অনিশ্চিয়তায়। কর্মসূচী শুরুর আগে রবিবার এক বিবৃতিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিগুলোর জোট শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বলেছে, সোমবার (আজ) থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালিত হবে এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। সান্ধ্যকালীন কোর্সসমূহের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে। পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। শিক্ষার্থীদের অনুরোধ ও তাদের শিক্ষাজীবন রক্ষার বিষয় বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি কর্মবিরতি চলাকালীন সময়ে শুধুমাত্র সেমিস্টার/কোর্স ফাইনাল পরীক্ষাসমূহ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, তবে মিডটার্ম পরীক্ষাসহ অন্য সকল শ্রেণীর পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। আন্দোলনরত শিক্ষকরা সরকারের সংশ্লিষ্টদের আচরণে হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য প্রথম নরম ও অহিংস কর্মসূচী পালন করেছি। কিন্তু সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাই বলছিÑ আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে, আর পিছনে ফেরার সময় নেই। এখন কর্মসূচীতে যদি শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয় তবে তার দায় তাদের যারা পে স্কেল নিয়ে অপকর্ম করেছেন। ফেডারেশনের মহাসচিব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলছিলেন, আমরা কর্মসূচী ঘোষণার পরও সরকারের কোন মহল থেকে আমাদের সঙ্গে কোন ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। এমতাবস্থায় লাগাতার কর্মবিরতি ছাড়া আমাদের কোন বিকল্প নেই। এর আগে গেল ২ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে ফেডারেশন নেতারা বলেছিলেন, দাবি আদায়ে ১১ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবে। তারও আগের সপ্তাহে ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি স্ব স্ব ক্যাম্পাসে একযোগে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি বাস্তবায়নে পাঁচ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিল। শিক্ষক সমিতিগুলোর জোট বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ রবিবারও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, পে স্কেল ইস্যুতে অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন মনে করে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ। কতিপয় আমলা প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি-দাওয়ার বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন। শিক্ষক নেতারা বলছেন, কর্মসূচী চলাকালে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য ডাকা হলেও কর্মসূচী বন্ধ করা হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত গেজেট প্রকাশ করে দাবি পূরণ করা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত কর্মসূচী চলবে। ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য প্রথম নরম ও অহিংস কর্মসূচী পালন করেছি। কিন্তু সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাই বলছিÑ আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে, আর পিছনে ফেরার সময় নেই। অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই মর্যাদার অবনমন এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষকরা। এরপর সরকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এ দাবি পর্যালোচনায় কমিটি করে। কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকও করেন। গত ৬ ডিসেম্বর বৈঠকে অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের তিনটি দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তার ১০ দিন পর বেতন কাঠামোর গেজেটে তার মধ্যে প্রথম দুটির প্রতিফলন ঘটেনি বলে শিক্ষকদের অভিযোগ। শিক্ষকদের তিনটি দাবির মধ্যে ছিলÑ অষ্টম বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সপ্তম জাতীয় বেতন কাঠামোর অনুরুপ সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল থাকবে এবং এক্ষেত্রে সপ্তম বেতন স্কেলে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা কমানো হবে না; জেষ্ঠ্য সচিবদের জন্য সৃষ্টি করা সুপার গ্রেডে সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের একটি অংশকে শতকরা হারে উন্নীত করার বিধান এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন সপ্তম গ্রেডে সম্ভব না হলে অষ্টম গ্রেড থেকে শুরু করা। প্রজ্ঞাপনে প্রথম দুটি দাবির প্রতিফলন না ঘটায় সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করে অষ্টম বেতন কাঠামো সংশোধনের পর আবার গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে চিঠিও দিয়েছিলেন শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এদিকে শিক্ষকদের এ লাগাতার কর্মবিরতিতে সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। চারটির মধ্যে তিনটি কোর্সের পরীক্ষা ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। বাকি পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আগামীকাল মঙ্গলবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই শেষ করেছে তাদের প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম। ক্লাস শুরুর অপেক্ষায় দিন গুণছেন নতুন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। ঠিক এমন অবস্থায় শিক্ষকদের কর্মবিরতির ঘোষণায় শিক্ষাজীবনে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। পরিস্থিতির জন্য শিক্ষকরা দায়ী নন মন্তব্য করে ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, গত আট মাস ধরে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর মাধ্যমে আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া ও আপত্তির জায়গাটা স্পষ্ট করেছি। শিক্ষার্থীদের যাতে কোন ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থেকেই আমাদের নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচী পালন করেছি। কিন্তু এখন আমাদের কর্মসূচীর ফলে শিক্ষার্থীরা যদি বিপাকে পড়েন তার দায় আমাদের নয়, যারা মন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতির তোয়াক্কা না করে পরিপত্র জারি করেছেন তাদের।
×