ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উভয় দিকে ৮৩ কিমি রেলপথ নির্মাণ করা হবে

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে

এম শাহজাহান ॥ চীনের অর্থায়নে জি টু জি ভিত্তিতে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য শীঘ্রই দেশটির সঙ্গে কন্ট্রাক্ট নেগোসিয়েশন সম্পন্ন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পদ্মা সেতুর উভয় দিকে প্রায় ৮৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে চীন সরকারের কাছে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ বছর অর্থায়ন নিশ্চিত হলে আগামী ২০২২ সালের মধ্যে মূল সেতুর নিচ দিয়ে উভয় দিকে বেলপথ নির্মিত হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি চীনের অর্থায়নেই বাস্তবায়ন করা হবে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এই প্রকল্পে অর্থায়নটি কিভাবে করা হবে এবং কতদিনে এই টাকা পরিশোধ হবে সেসব বিষয়ে কন্ট্রাক্ট নেগোসিয়েশন এখনও করা যায়নি। রেলপথমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হকের সভাপতিত্বে ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত কয়েকটি সভা করা হয়েছে। তবে খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে চূড়ান্ত নেগোসিয়েশন হবে বলে সূত্রগুলো দাবি করেছে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাছাই ও সাইট নির্ধারণ করা হয়েছে। রেলপথমন্ত্রী ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা) প্রকল্পের কাজ শুরুর স্থান রাজধানীর গে-ারিয়া রেলস্টেশন পরিদর্শনও করেছেন। আজ রবিবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রাক্ট নেগোসিয়েশন সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক রয়েছে। রেলপথমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ওই সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব, সচিব সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন মহাপরিচালক মোঃ আবু তাহের, প্রকল্প পরিচালক পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, প্রকল্প পরিচালক পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, ঢাকার কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনেই ব্যয় হবে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার জাপানী অর্থায়নকারী সংস্থা জাইকা ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কাছে সহায়তা চেয়েছিল। কিন্তু সংস্থা দুটির কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে চীনের অর্থায়নে জি টু জি ভিত্তিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক জানিয়েছেন, দুই ধাপে প্রকল্প নিয়ে পদ্মা নদীর এপার ও ওপারের মধ্যে রেল সংযোগ দেয়ার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য আমরা চীন সরকারের সহায়তা চেয়েছি। চীনের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। আশা করছি, চীনের অর্থায়নে জি টু জি ভিত্তিতে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। জানা গেছে, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগসহ ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য রেলওয়েতে ১১ সদস্যের মূল কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি কারিগরি উপকমিটিও রয়েছে। কারিগরি উপকমিটি মূল কমিটির কাছে ইতোমধ্যে তাদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে প্রথমে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ দশমিক ৩২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা হয়েছিল। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। পরে বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে আলোচনার পর অর্থায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ায় এখন রেলপথ নির্মাণ করা হবে ১৬৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত নির্মিতব্য রেলপথের ২১ কিলোমিটার অংশ হবে উড়াল রেলপথ। এই অংশের মধ্যে আবার তিন কিলোমিটার হবে ডাবল লাইন ডুয়েল গেজ। প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চীন সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। শীঘ্রই এ প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প ছক (ডিপিপি) তৈরি করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় চারটি বড় ও ৫৬টি ছোট রেলসেতু, পাঁচটি লেভেলক্রসিং, ৪০টি স্থানে আন্ডারপাসসহ জাতীয় মহাসড়কে তিনটি উড়াল সড়ক নির্মাণের দরকার হবে। রাজধানীর কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ৪৪ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। প্রস্তাবিত দোতলা পদ্মা সেতুর নিচের তলায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার, সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ হবে ৩১ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার। আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে পদ্মা নদীর ওপর সড়ক কাঠামোসহ মূল অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। সড়ক কাঠামো দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে ২০১৮ সালের শুরু থেকে। চীনের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ২০২২ সালের মধ্যে রাজধানী থেকে মাওয়া পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা যাবে।
×