কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঢাকা সফরে এসেছে তিন সদস্যের একটি মার্কিন প্রতিনিধি দল। এখানে জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উপস্থিতি রয়েছে কি-না সেটা পর্যবেক্ষণ করাই এই প্রতিনিধি দলের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনসহ বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে এই প্রতিনিধি দল। কূটনৈতিক সূত্র এসব তথ্য জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন ব্যুরোর প্রতিনিধি দলটি রবিবার ঢাকায় পৌঁছেছে। তবে এই সফর বিষয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনকিছু জানানো হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জঙ্গীবাদ দমন ব্যুরোর মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তারা ঢাকায় এসেছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে উগ্র জঙ্গী গোষ্ঠী আইএস তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আইএসের উপস্থিতির বিষয়ে সতর্ক পর্যবেক্ষণ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। তারা এ বিষয়ে সহায়তাও করতে চায়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে, এদেশে আইএসের অস্তিত্ব নেই। তাদের কোন কার্যক্রমও নেই। তবে বাংলাদেশে আইএসের উপস্থিতির বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করতে চায় মার্কিন সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন ব্যুরো। উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মার্কিন ব্যুরো কর্মকর্তারা। এছাড়া বিদেশী হত্যার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গৃহীত পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করবেন তারা। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর বিশেষ করে শিয়া মসজিদ ও খ্রীস্টান যাজকের ওপর হামলায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করবে মার্কিন প্রতিনিধি দল।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ইতালীয় সিজার তাভেলা ও জাপানী হোশি কুনিওর হত্যার পর আইএস উপস্থিতির বিষয়টি আলোচনায় আসে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গী ও সন্ত্রাস পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ থেকেও প্রচার করা হয় এসব হত্যাকা- ঘটিয়েছে আইএস। তখন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব হত্যাকা-ের পেছনে আইএস সত্যিই জড়িত কি-না সেটা পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত রয়েছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বার বারই বিদেশী কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে বাংলাদেশে আইএসের কোন অস্তিত্ব নেই।
ঢাকা সফরকালে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন ব্যুরোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হবে। জঙ্গীবাদ দমনে প্রযুক্তিবিষয়ক সহায়তা দিতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কেননা বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠী এখন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জঙ্গীবাদ বিস্তার করছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে জঙ্গীবাদ যেন বিস্তার ঘটাতে না পারে সে বিষয়ে সহায়তা দিতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সন্ত্রাসী ও জঙ্গীরা এখন আকাশপথেও তৎপরতা শুরু করেছে। আকাশপথের নিরাপত্তার বিষয়ে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে মার্কিন প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরগুলোর সুরক্ষা নিয়েও আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মার্কিন প্রতিনিধি দল রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনুবিভাগের পরিচালক নীরুপম দেবনাথের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগের দিন ২৩ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে এক বৈঠক করেন। সে সময় তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে মার্শা বার্নিকাট জানিয়েছিলেন, নতুন বছরের শুরুতেই বেশ কয়েকটি মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করবে।
ইতোমধ্যেই গত ৫-৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমমান ইত্যাদি পর্যবেক্ষণে মার্কিন সিনেটের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করেছে। সেই সফর শেষ হতে না হতেই এবার দ্বিতীয় মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে। আজ সোমবার এই প্রতিনিধি দল ঢাকা ত্যাগ করবে।
