ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জনদুর্ভোগ কমাতে হানিফ ফ্লাইওভারের আশপাশ সংস্কারের প্রকল্প নেয়া হয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

জনদুর্ভোগ কমাতে হানিফ ফ্লাইওভারের  আশপাশ সংস্কারের প্রকল্প নেয়া হয়েছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ দুর্ভোগ কমছে ঢাকা দক্ষিণের মানুষের। মেয়র মেহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে যাত্রাবাড়ীতে অসহনীয় যানজট ও ভাঙ্গাচোরা রাস্তার দিন শেষ হচ্ছে। এজন্য ওই স্থান থেকে জয়কালী মন্দির পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা এবং ফুটপাথের উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ১৮ কোটি ৯৭ লাখ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে চার কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য এসএম গোলাম ফারুক পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে জানান, প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বরাদ্দহীনভাবে সংযুক্ত অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় (সবুজ পাতায়) অন্তর্ভুক্ত নেই। তবে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের বিষয়ে গত বছরের ১৮ অক্টোবর পরিকল্পনামন্ত্রী সম্মতি দিয়েছিলেন। এটি বাস্তবায়িত হলে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়নের মাধ্যমে ট্রাফিক জ্যাম নিরসন হবে। ফুটপাথ উন্নয়নের মাধ্যমে পথচারীদের চলাচল সহজ করা হবে এবং নর্দমা ব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব চলাচল নিশ্চিত করা হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে পাঁচ নম্বর জোন একটি ব্যস্ততম এলাকা। তার মধ্যে যাত্রাবাড়ী ক্রসিং অবস্থিত। এলাকাটি ঢাকা মহানগরীর পূর্বাঞ্চলের গেটওয়ে এবং ঢাকা হতে দক্ষিণাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একমাত্র প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশের এসব অঞ্চলের গাড়িগুলো এই রুটে চলাচল করে। তাই এই ক্রসিংটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যানবাহন চলাচলের মাধ্যমে যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ওই সেকশনের আশপাশের রাস্তাগুলোর জরাজীর্ণতা রোধ করে যানবাহন চলাচলের জন্য উপযুক্ত রাখা প্রয়োজন। আন্তঃজেলা বাস, মিনিবাস, হেভি লোডেড লরি ও ট্রাক এবং অন্যান্য যানবাহন সায়েদাবাদ, কমলাপুর, গুলিস্তান ও চানখাঁরপুলে যাতায়াতের জন্য যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন ব্যবহার করে। এছাড়া মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় ফ্লাইওভারের নিচের সড়কগুলো বিভিন্ন সংস্থার ইউটিলিটি লাইন স্থানান্তরের জন্য বিভিন্ন স্থানে খনন করা হয়। ওই খনন কাজে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। ফ্লাইওভার নির্মাণের পরবর্তী সময়ে তিনটি বর্ষাকাল পেরিয়ে গেছে। ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় এর নিচের রাস্তাগুলোতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রেখে যথাযথভাবে মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া ফ্লাইওভারের নিচে অপ্রয়োজনীয় ব্যারিয়ার নির্মাণ করার কারণে ফ্লাইওভারের নিচের পানি যথাযথভাবে নিষ্কাশন না হওয়ায় রাস্তায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ফলে রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ২৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে যাত্রাবাড়ী হতে জয়কালী মন্দির পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা এবং ফুটপাথের উন্নয়ন কাজ নামের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে। গত বছরের পাঁচ নবেম্বর প্রকল্পটির ওপর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড্রেনেজ খাতে বরাদ্দ ৬৬ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে এক কোটি টাকা করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করে মোট ব্যয় ২৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা ধরে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর এ প্রস্তাবটি অনুমোদন দেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই দশমিক ১৫ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন, দুই দশমিক ৫০ কিলোমিটার ড্রেন উন্নয়ন এবং চার কিলোমিটার ফুটপাথ উন্নয়নসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি সুপারিশ দেয়া হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে, রাস্তা, ড্রেন ও ফুটপাথ উন্নয়ন করার সময় জলাবদ্ধতার বিষয়টি বিবেচনা করে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা এমনভাবে করতে হবে যেন প্রকল্প এলাকায় কোন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়। এক্ষেত্রে ড্রেনেজ খাতে ব্যয় ৬৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক কোটি টাকা করা যেতে পারে। সুপারিশে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে রাস্তা, ড্রেন, ফুটপাথ উন্নয়নের চিত্র সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিতভাবে ম্যাপসহ প্রকল্প এলাকার ছবি পুনর্গঠিত ডিপিপিতে যুক্ত করতে হবে। সূত্র জানায়, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে এ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হবে। এ জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
×