ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষি কাজে ছোঁয়া লেগেছে উন্নত প্রযুক্তির

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

কৃষি কাজে ছোঁয়া লেগেছে উন্নত প্রযুক্তির

এমদাদুল হক তুহিন ॥ দিন দিন কৃষিক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে শ্রমিকের সঙ্কট। মৌসুমের শুরু ও শেষে এই শ্রমিক সঙ্কট আরও তীব্রতর হয়। তবে ধান কাটার যন্ত্র রিপারের আবির্ভাবে এ সঙ্কট প্রশমিত হয়। রিপারে ধান কাটায় জ্বালানি খরচ খুবই অল্প। এছাড়া যন্ত্র ক্রয়ে রয়েছে সরকারের ৩০ শতাংশ উন্নয়ন সহায়তা। গত বছর যন্ত্রটির জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। দেশের প্রায় ১০০ কৃষক যন্ত্রটি ক্রয় করেছেন সরকারের এ উন্নয়ন সহায়তায়। ২০১৮ সালের মধ্যে সারাদেশে ৪ হাজার রিপার কৃষকের মধ্যে সরবরাহের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুসারে, খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের অধীনে কয়েকটি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে কৃষককে ৩০ শতাংশ উন্নয়ন সহায়তা দেয়া হচ্ছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, থেসার, ফুটপাম্প ও রিপারসহ কয়েকটি যন্ত্রে কৃষক পাচ্ছেন এ সহায়তা। ২০১৫ সালে এ প্রকল্পের অধীনে কৃষকের মাঝে ১০০টি রিপার সরবরাহ সম্ভব হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার রিপার কৃষকের মধ্যে সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। জানা গেছে, আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গত কয়েক বছর ধরেই মাঠে প্রবেশ করছে নতুন নতুন যন্ত্র। তবে গত বোরো মৌসুমে ধান কাটার যন্ত্র রিপারের চাহিদা ছিল বেশ। এর মাধ্যমে ধান কেটে কৃষকরাও পাচ্ছেন সুফলতা। রিপারে জ্বালানি খরচ খুবই কম। যন্ত্রটি দিয়ে ধান কাটতে ঘণ্টায় ১ লিটারেরও কম জ্বালানি তেলের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া হেলে পড়া ধানও কাটা যায়। শুধু হেলে পড়া ধান নয়, জমিতে কিছুটা পানি থাকলেও যন্ত্রটি কার্যকর। এছাড়া এই যন্ত্র দিয়ে কাটা যায় গম। যন্ত্র ব্যবহারের ফলে কাটা ধান বা গম ডান পাশে সরিবদ্ধভাবে পড়ে, যাতে সহজে আঁটি বাঁধা যায়। যন্ত্রটি স্থানান্তরেও রয়েছে সহজ সুবিধা। কৃষি যন্ত্রপাতি বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলী সুরজিৎ সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, ধান ও গম কাটার জন্য রিপার একটি নতুন প্রযুক্তি। অল্প সময়ে যন্ত্রটি দিয়ে ফসল কাটার জুড়ি নেই। প্রচলিত পদ্ধতির বিপরীতে যন্ত্রটি ব্যবহারে খরচও কম। গত মৌসুমে রিপারের প্রতি কৃষকের বেশ আগ্রহ ছিল। নিজের জমির ধান কাটা ছাড়াও স্বল্পভাড়ায় ক্ষুদ্র কৃষকদের জমির ধানও কেটে দিচ্ছে। কাটা ধান জমিতে সাজিয়ে রাখার পর কৃষক তা কাঁধে করে বাড়ির উঠানে নিয়ে যায়। গত মৌসুমে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের গন্ধবপুর গ্রামে রিপার যন্ত্রটি মাঠে প্রথমবারের মতো প্রবেশ করে। যন্ত্রটি নতুন হওয়ায় ওই এলাকার কৃষক ছিল উচ্ছ্বসিত। জানা গেছে, বোরো মৌসুমে ওই এলাকায় প্রথমবারের মতো মেশিন দিয়ে ধান কাটার দৃশ্য দেখতে মাঠে জড়ো হয়েছিলেন বহু কৃষক। তাদের একজন দেবনাথ। তিনি জানান, এক বিঘা জমির রোপা-আমন ধান কাটতে চারজন শ্রমিকের প্রয়োজন। শ্রমিকপ্রতি মজুরি তিন শ’ টাকা। ফলে এক বিঘা জমি কাটতে খরচ হয় বারো শ’ টাকা। অথচ মেশিন দিয়ে মাত্র আধা ঘণ্টায় এক বিঘা জমির ধান কাটা যাচ্ছে। এজন্য কৃষকের ব্যয় হচ্ছে মাত্র তিন শ’ টাকা। ফলে যন্ত্রটির প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি। বর্তমানে ধান ও গম চাষাবাদে যে সমস্যাগুলো রয়েছে তার মধ্যে ধান ও গম কাটা অন্যতম। জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষির প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে একটি শ্রেণী। এছাড়া স্থানান্তর রয়েছে অন্য পেশায়। ফলে কয়েক বছর ধরেই কৃষি শ্রমিকের সঙ্কট রয়েছে। আর ধান কাটার মৌসুমে তা তীব্রতর হয়ে উঠে। ফসল পাকার পরও শ্রমিকের জন্য কৃষককে করতে হয় অপেক্ষা। এমনকি অনেক সময় সেই অপেক্ষার প্রহর বিরক্তির কারণও হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে যান্ত্রিকীকরণকে আরও এগিয়ে নিতে খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি-২য় পর্যায় প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ধান কাটার এই যন্ত্রে ৩০ শতাংশ উন্নয়ন সহায়তা দেয়া হয়। মাঠপর্যায়ে ২১৭টি উপজেলায় আয়োজন করা হয় রিপার প্রদর্শনীর। গেল রবি মৌসুমে সারাদেশে ৮শ’ ৬৮টি প্রদর্শনী সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রসঙ্গে খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি-২য় পর্যায়ের প্রকল্প পরিচালক শেখ মোঃ নাজিম উদ্দিন বলেন, অল্প সময়ে রিপার বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সহজে ব্যবহার ছাড়াও মাঠে সঠিকভাবে কার্যকরী হওয়ায় গেল মৌসুমে রিপারের চাহিদা ছিল ঈর্ষণীয়। এছাড়া ধান কাটার ক্ষেত্রে মাঠের কৃষক শ্রমিক সঙ্কটে ভুগেন। ফলে অল্প সময়ে এর এত জনপ্রিয়তা। ২০১৮ সালের মধ্যে সারাদেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে ৪ হাজার রিপার সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
×