ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খসড়া নিয়ে আইন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক;###;এ্যাক্ট থেকে ৫৪, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ ধারা বাতিল করে নতুন ধারা আসছে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে, সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছর ॥ সাইবার ক্রাইম দমন

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে, সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছর ॥ সাইবার ক্রাইম দমন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সাইবার অপরাধ দমনে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের শাস্তির বিধান রেখে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ করতে যাচ্ছে সরকার। ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি বিদ্যমান ধারা আইসিটি আইন থেকে বাদ দিয়ে সেগুলো আরও স্পষ্ট করে নতুন আইনে যুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আইনটির অধীনে ‘সাইবার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম’ গঠন করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তৈরি করা আইনটির খসড়া নিয়ে রবিবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে তাঁরা সাংবাদিকদের একথা বলেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, নতুন আইনে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে। এছাড়া অপরাধের ধরন অনুযায়ী সর্বনিম্ন শাস্তিও নির্ধারণ করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, যে যে ব্যাপারে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় উদ্বেগ ছিল, এখানে সেগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে। ৫৭ ধারাকে স্পষ্টীকরণ করা হয়েছে। যখন এই আইন পাস করা হবে, তখন হয়ত আইসিটি এ্যাক্ট থেকে ৫৪, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ ধারা রিপিল (বাতিল) করে এই আইনের আওতায় নেয়া হবে। যেন দ্বৈততা সৃষ্টি না হয় সেজন্য আইসিটি আইন থেকে ওগুলো রিপিল করে এই আইনের আওতায় নিয়ে নেয়া হবে। নতুন আইনে বিতর্কের যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেই বিষয়ে সরকার সচেতন বলে জানান আনিসুল হক। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার জগতে অপরাধের ঘটনাও ঘটতে থাকে। এর আগে প্রণীত তথ্য প্রযুক্তি আইনে অপরাধ দমনের ধারা থাকলেও তা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। ওই আইনের ৫৭ ধারাকে মুক্ত চিন্তার অন্তরায় হিসেবে দেখে তা বাতিলের দাবিও উঠেছে। আইনমন্ত্রী বলেন, নতুন আইন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই ৫৭ ধারার ব্যাপারে যে সমালোচনা ও বক্তব্য ছিল আমার মনে হয় সেসব শঙ্কা, দুশ্চিন্তা দূর হবে। আইনের খসড়া তৈরির দায়িত্বে থাকা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সাংবাদিকদের বলেন, তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় অপরাধের যে ধরন-সংজ্ঞা ছিল, নতুন আইনে তা আরও স্পষ্ট করা হয়েছে। আইসিটি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ধারা সম্পর্কে নতুন আইনে আরও ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। আইসিটি আইনের সঙ্গে নতুন আইনের যেন কোন অসামঞ্জস্য না থাকে, সেজন্য খসড়াটি চূড়ান্ত করার আগে আরও আলোচনা করা হবে বলে জানান আইনমন্ত্রী। নতুন আইনের আওতায় অপরাধগুলো জামিনযোগ্য হবে কি না- এ প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, এখন এটা প্রস্তাবিত আছে, আলাপ-আলোচনার মধ্যে আছে। সাংবাদিকদের ওপর ‘অবিচার’ হবে- এমন কোন আইন পাস না করার প্রতিশ্রুতি দেন আনিসুল হক। তিনি বলেন, অবৈধ কিছু না করলে সাংবাদিকদের শুধু শুধু শাস্তি দেয়ার নীতি শেখ হাসিনার সরকার গ্রহণ করবে না। নতুন আইনের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কিছু কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান আইনমন্ত্রী। নতুন আইন করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, সমসাময়িক বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আইনটি করতে যাচ্ছেন তারা। এখন অফলাইন আর অনলাইনের অপরাধের মধ্যে বিরাট একটা ফারাক আছে। অনলাইনে কোন অপরাধ সংঘটিত হলে, সেটা নিয়ে অপপ্রচার হলে সেটার ইমপ্যাক্ট বেশি, অফলাইনে ইমপ্যাক্ট কম। ব্যক্তি, পরিবার বা রাষ্ট্রীয় জীবনে যে নিরাপত্তা ঝুঁকি, সেটা সবচেয়ে বেশি সাইবার থ্রেট, তা সব রাষ্ট্রই অনুভব করছে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে একটা রাষ্ট্র ধ্বংস করার জন্য এ্যাটম বোমা ফেলার দরকার নেই। সাইবার এ্যাটাক করে পুরো রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করা সম্ভব। সেটা অর্থনৈতিকভাবে, প্রশাসনিকভাবে, সবভাবেই। কারো সুনাম ও মর্যাদা ক্ষুণœ করতে মিথ্যা সংবাদ, তথ্য অপপ্রচারেও প্রভাব ফেলে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক লেনদেনে ইলেক্ট্রনিক ট্রানজেকশন খুব দ্রুত বাড়ছে, এখন ৩০ শতাংশই অনলাইনে লেনদেন হচ্ছে, ই-কমার্স দ্রুত অগ্রসরমান। সবকিছু মিলিয়ে সেই অপরাধগুলোকে তদন্ত করা, তদন্ত শেষে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা এবং অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা- এই তিনটি বিষয়ের উত্তর খুঁজতে গিয়েই ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট প্রণয়ন করতে হচ্ছে। নতুন আইনের আওতায় ‘সাইবার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম’ হবে জানিয়ে পলক বলেন, বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সেটার সমন্বয় হবে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আন্তঃযোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধের যে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ, ডিজিটাল ডিভাইসগুলোকে পরীক্ষা করে সঠিক তথ্য যাচাই-বছাই, অনুসন্ধান করার জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব এই আইনের আওতায় গঠন করতে পারব।
×