ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর কঠোর নির্দেশ ;###;এ সময়ের মধ্যে কেউ কারখানা সরাতে ব্যর্থ হলে ওই কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে, বাতিল হবে সাভারের শিল্পপ্লট

সময় ৭২ ঘণ্টা ॥ হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানোর আল্টিমেটাম

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

সময় ৭২ ঘণ্টা ॥ হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানোর আল্টিমেটাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজধানীর হাজারীবাগের সব ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর না হলে প্লট বরাদ্দ বাতিল করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। ওই সময়ের মধ্যে চামড়া শিল্প নগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি ট্যানারি মালিকরা। তাই এবার আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যেসব ট্যানারি হাজারীবাগ ছাড়বে না, সেগুলো বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী। ব্যবস্থা গ্রহণে ট্যানারি মালিকদের কাছে উকিল নোটিস পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। রবিবার মন্ত্রণালয়ে সভাকক্ষে ‘শিল্পখাতের উন্নয়নে চলতি অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম মূল্যায়ন সভায়’ শিল্পমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। জানা গেছে, সাভারের হেমায়েতপুরে ২০০ একর জায়গাজুড়ে পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলা হচ্ছে। ২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট একনেকে চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০০৫ সালে। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বাড়ে। এই শিল্পনগরে ২০৫টি প্লটে ১৫৫টি কারখানা স্থাপন করার কথা রয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)। বিসিক ও ট্যানারি মালিকদের দুই সংগঠনের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, ট্যানারি মালিকদের ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে হাজারীবাগের সব ট্যানারি সাভারে স্থানান্তরের কথা ছিল। পরে আরও দুই দফা সময় বাড়িয়ে ট্যানারি স্থানান্তরের নতুন সময় গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্প নগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকল্প সূত্র জানায়, নির্মাণাধীন সিইটিপির সিভিল কাজের প্রায় ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চামড়া শিল্প নগরী প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, হাজারীবাগের ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেডলাইন দেয়া হলেও, কাজের যে অগ্রগতি তাতে আগামী বছরের মার্চের মধ্যেও চামড়া শিল্পনগরী চালু করা সম্ভব নয়। চামড়া শিল্পনগরীতে কারখানা ভবনের বাস্তবায়ন কাজের চিত্র তুলে ধরে এ প্রকল্পে কর্মরত বুয়েটের ডেপুটি চীফ ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আবু বাকের সিদ্দিক জানান, চামড়া শিল্পনগরীতে ১৫৫টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে ৪র্থ তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করেছে ১টি, ২য় তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করেছে ৫টি, ১ম তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করেছে ৩৪টি, পাইলিং শেষ করে গ্রেটভিম ও কলাম ঢালাই করেছে ২৮টি, পাইলিং শেষ করেছে ১৪টি, পাইলিং কাজ চলমান ৭টি, পাইল কাস্টিং শেষে পাইল ড্রাইভ করেছে ৭টি, পাইল কাস্টিং করেছে ৩টি, বেস ঢালাই শেষ করে গ্রেটভিম ও কলাম ঢালাই করেছে ২৪টি, বেস ঢালাইয়ের জন্য মাটি খনন করেছে ও নির্মাণ মেটেরিয়াল এনেছে ৬টি, বাউন্ডারি ওয়াল ও গার্ড শেড করেছে ৫টি, শুধুমাত্র বাউন্ডারি ওয়াল করেছে ১টি ট্যানারি। এছাড়া মামলাজনিত কারণে বরাদ্দপত্র জারি হয়নি ১টি ট্যানারির। আবু বাকের সিদ্দিকও মনে করেন, যে কাজ এখন বাকি আছে তাতে আরও তিন-চার মাসের আগে স্থানান্তর পুরোপুরি সম্পন্ন হবে না। ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ॥ রাজধানীর পরিবেশ রক্ষায় হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলো সরিয়ে নিতে সাভারে চামড়া শিল্প নগরী গড়ে তোলা হলেও ব্যবসায়ীরা তাদের আগের স্থান ছাড়তে অনাগ্রহী। আগামী তিন দিনের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে যেসব ট্যানারি স্থানান্তর হবে না, সেগুলোর নামে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে বরাদ্দ করা প্লট বাতিলের নির্দেশও দিয়েছেন মন্ত্রী। বিসিককে (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন) রবিবারই ট্যানারি মালিকদের কাছে উকিল নোটিস পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে কারখানা স্থানান্তরে ট্যানারি মালিকদের সময় বেঁধে দিলেও তাতে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। সাভারে বাস্তবায়নাধীন চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পের অগ্রগতি মূল্যায়ন করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে চামড়া শিল্পনগরীতে সিইটিপির (কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার) বর্জ্য পরিশোধন কাজ শুরু করতে হবে। যেসব ট্যানারি মালিক নির্মাণ কাজে বিলম্ব করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ট্যানারি স্থানান্তরে সরকারের দেয়া ক্ষতিপূরণের অর্থ নিয়েও যারা কাজ বন্ধ রেখেছে তাদের হাজারীবাগের কারখানার মালামাল ক্রোক করার হুমকিও দিয়েছেন মন্ত্রী। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে প্রতি ১০ দিন পর পর সংস্থা প্রধানদের নিয়ে মূল্যায়ন সভা ও অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য শিল্পসচিবকে নির্দেশনা দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী। শিল্পসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ শিল্প মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার প্রধান ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। ট্যানারি স্থানান্তরে ক্ষতিপূরণ ॥ গেল বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ৪টি ট্যানারিকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৮৭ লাখ ১৩ হাজার ৯৯৯ টাকা প্রদান করা হয়। গতবছরের ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১৭টি ট্যানারিকে সর্বমোট ৪৯ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। ১১৭টি ট্যানারির মধ্যে ৯৯টিকে ২০ শতাংশ এবং ১৮টিকে ৬০ শতাংশ অর্থ দেয়া হয়েছে।
×