ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অরক্ষিত টেকনাফ-চট্টগ্রাম জলপথ

মিয়ানমার থেকে অবাধে আসছে ইয়াবার চালান

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

মিয়ানমার থেকে অবাধে  আসছে ইয়াবার  চালান

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সড়ক ও আকাশ পথে কড়াকড়ি আরোপ করায় সহজ পদ্ধতিতে ইয়াবা নেয়ার জন্য সুচতুর ইয়াবা কারবারিরা নিরাপদ মনে করছে জলপথকে। মিয়ানমার থেকে সরাসরি জলপথে ফিশিং ট্রলারযোগে ইয়াবার বড় বড় চালান নিয়ে যাচ্ছে তারা চট্টগ্রামে। অবস্থা চোরাচালানিদের অনুকুলে নেই বলে গ্রীন সিগন্যাল পেলেই সমুদ্র পথে বরিশাল, নারায়গঞ্জ ও খুলনায় গিয়ে খালাস করা হচ্ছে ওসব চালান। এদিকে প্রতিদিন কোন না কোন স্থানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ছোট বড় চালান ধরাও পড়ছে। গত ৬ জানুয়ারি সাগরপথে র‌্যাব সদস্যদের হাতে ধরা পড়েছে ১০ লাখ ইয়াবাসহ ৫ জন চোরাকারবারি। ওসব ইয়াবার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের তৎপরতায় কক্সবাজার সমুদ্রপথে মানবপাচার বন্ধ হয়েছে প্রায় ৭ মাস ধরে। ওইসব মানবপাচারকারী চক্রের গডফাদাররা বর্তমানে নিয়ে যাচ্ছে সাগরপথে ইয়াবার চালান। এভাবে মিয়ানমার জলপথ হয়ে দেশের সমুদ্র পথ ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত বড় বড় চালান প্রবেশ করানো হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালানভর্তি ট্রলার বাংলাদেশের দিকে রওনা দেয়ার সময় পারদর্শী মাঝি-মাল্লা ছাড়াও শসস্ত্র অবস্থায় সেদেশের সীমান্তে নিয়োজিত একটি বাহিনীর সদস্যরা অপর ট্রলারে করে রওনা দেয়। ইয়াবার বিশাল চালানের ওপর যাতে সহজে আক্রমণ করতে না পারে, এজন্য বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করিয়ে দেয়ার পর স্বদেশে ফিরে যায় দেশটির ওসব কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। এছাড়াও ইয়াবা সিন্ডিকেটের রয়েছে নিজস্ব একাধিক সদস্য। মোটা অঙ্কের বেতনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অবস্থান জেনে গোপন সংবাদ, সতর্ক সংবাদ জানানোই হচ্ছে এদের মূল দায়িত্ব। ওদের হাতে রয়েছে শক্তিশালী ওয়াকিটকি, মোবাইল সেট, অত্যাধুনিক ল্যাপটপ, যানবাহন ও জলযান ইত্যাদি। সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন সংস্থা, স্থানীয় বাসিন্দা ও একাধিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, প্রসিদ্ধ চোরাচালানিরা মিয়ানমারের মংডু ও সিটওয়ে (আকিয়াব) হতে ইয়াবার বড় বড় চালান ফিশিং ট্রলার ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামে। গত বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে পৃথক বন্দুকযুদ্ধে একাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হলে থমকে যায় ইয়াবার কারবার। আত্মগোপনে চলে যায় নামকরা ইয়াবা বিক্রেতারা। পরবর্তীতে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে এসে ফের চাঙ্গা করে তোলে এ অবৈধ ব্যবসা। চালান নিয়ে ইয়াবাভর্তি গভীর সাগরে থাকা অবস্থায় যোগাযোগ রক্ষা করে পাহারায় নিয়োজিত সদস্যদের সঙ্গে। ট্রলার চট্টগ্রাম বন্দরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাহারা জোরদার খবর পেলে গভীর সাগরে নোঙ্গর করে বসে থাকে চোরাচালানিরা। অনধিক ৮ ঘণ্টার চেয়ে বেশিক্ষণ অপেক্ষা শেষে গ্রীন সিগন্যাল পেলে বাঁশখালী, গহিরা, আনোয়ারা ইত্যাদি এলাকায় খালাস করা হয়ে থাকে। মিয়ানমার, উখিয়া ও টেকনাফের প্রসিদ্ধ ইয়াবা কারবারিরা স্থান ত্যাগ করে চট্টগ্রাম- ঢাকায় বসবাস করছে বর্তমানে। ওখানে বসেই সিন্ডিকেট সদস্যদের মাধ্যমে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এদের ইয়াবার টাকা লেনদেন হয় বিশেষ করে মুঠোফোনের এ্যাকাউন্টে।
×