ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে দক্ষিণ উপকূলের কোটি মানুষের

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে দক্ষিণ উপকূলের কোটি মানুষের

মেজবাহউদ্দিন মাননু, নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া ॥ দেশের তৃতীয় পায়রা সমুদ্রবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম খুব শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে। এ মাসের যে কোন দিন জাহাজ থেকে পণ্য খালাশের মধ্য দিয়ে বন্দরের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে। এ নিয়ে কলাপাড়ার গোটা উপকূলজুড়ে বিরাজ করছে ভিন্ন মাত্রার আমেজ। খবর নির্ভরযোগ্য সূত্রের। সূত্র মতে, জানুয়ারি মাসের মধ্যে যে কোনদিন এ বন্দরটি চালু করতে প্রস্তুতি চলছে। বহির্নোঙরে জাহাজ থেকে পণ্য খালাশের মধ্য দিয়ে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং নৌমন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পণ্য খালাশের জন্য কাস্টম কর্তৃপক্ষের জন্য একতলা একটি ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন আসবাবপত্র স্থাপন করা হচ্ছে। বহুতল অফিস ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। দ্রুতালয়ে চলছে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ। পণ্যবাহী জাহাজের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের ওয়ারলেসের যোগাযোগের জন্য টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। বহু আগেই নিরাপত্তা ভবন করা হয়েছে। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ২০১৪ সালের অক্টোবরে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। চলছে প্রকল্প এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ। বহু আগেই স্থাপন করা হয়ে টার্মিনাল ও জেটি। মালামাল তোলার ক্রেন। সৌর বিদ্যুত ব্যবস্থার পাশাপাশি পল্লী বিদ্যুত সরবরাহ চালু করা হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে কুয়াকাটাগামী মহাসড়কের রজপাড়া থেকে বন্দরের সঙ্গে সাড়ে পাঁচ কিমি ফোর লেন সড়কের। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থাকার জন্য অফিসসহ আবাসিক স্থাপনার কাজও চলছে দ্রুতালয়ের সঙ্গে। পায়রাবন্দরের কাস্টমস সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলসহ সক্ষমতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে নৌপথের নাব্যতা নির্দেশিকার জন্য সাগর মোহনা থেকে চারিপাড়া হয়ে রামনাবাদ মোহনা পর্যন্ত নদীপথে সীগন্যালিং বয়া ও কিনারে সীগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়েছে। আনসারদের জন্য পাঁচ তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। মোট কথা এক মহাকর্মযজ্ঞ চলছে পায়রা বন্দর প্রকল্প এলাকায়। প্রকল্প এলাকায় ১৬ একর জায়গা নিয়ে সীমিত পরিসরে অনেক আগেই ভৌত অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। ২০১৩ সালের ৫ নবেম্বর জাতীয় সংসদে পায়রাবন্দর আইন পাস হওয়ায় গঠন করা হয় পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ। নবেম্বর মাসের ১৯ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রাবন্দর প্রকল্পের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এরপরে পূর্ণাঙ্গভাবে বন্দরের কার্যক্রম চালু করতে তিন বছর মেয়াদী উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে ওয়্যার হউস নির্মাণ, রামনাবাদ চ্যানেল থেকে কালীগঞ্জ নৌপথের বিভিন্ন স্পটে ড্রেজিং, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, হাইস্পিড, পাইলট ও টাগবোট সংগ্রহ, বয়া লেয়িং ভ্যাসেল, সার্ভে ভ্যাসেল, সার্ভিস পন্টুন স্থাপনসহ সেতু নির্মাণ। এর অধিকাংশ চলছে আবার অনেকটা সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া সাত হাজার একর জমি অধিগ্রহণের প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বহির্নোঙরে জাহাজ থেকে পণ্য খালাশের মধ্য দিয়ে পায়রাবন্দরের কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। চট্টগ্রামের কুতুবদিয়ার আদলে দক্ষিণাঞ্চলের সিমেন্ট, ক্লিঙ্কার, গম, সারসহ বিভিন্ন মালামাল খালাশের সুবিধা তৈরি হবে বন্দরটি চালু হলে। সেই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর বহুল আকাক্সিক্ষত পায়রাবন্দর চালুর মধ্য দিয়ে তাদের অর্থনৈতিকভাবে ভাগ্যোন্নয়নের অগ্রযাত্রা হবে। ২০১৮ সালের মধ্যে বন্দরটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আর এর ফলে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে পণ্য জটের চাপ বহুলাংশে লাঘব হবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। শুধু তাই নয় চট্টগ্রাম ও মংলায় নাব্যতা সঙ্কটের কারণে জোয়ার-ভাটার ওপর অনেক সময় নির্ভরশীল থাকতে হয় পণ্য খালাশে। কিন্তু পায়রাবন্দরে পণ্য খালাশে নাব্যতা সঙ্কট নেই। জোয়ার-ভাটা ২৪ ঘণ্টা পণ্য খালাশের সুযোগ রয়েছে। আর চারিপাড়ায় গভীরতা এতো বেশি যে সরাসরি মাদার ভ্যাসেল থেকে জেটিতে পণ্য খালাশের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া চিটাগংয়ের চেয়ে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ দূরত্ব অনেক কম। পরিবহন খাতে ব্যয় কম হবে এ বন্দর ব্যবহার করে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে পায়রা বন্দর হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। পায়রাবন্দর এলাকায় নিরাপত্তার কোন শঙ্কা নেই। কারণ এখানে দেশের সর্ববৃহৎ শের-ই-বাংলা নৌঘাটি নির্মিত হচ্ছে। নৌপথ থাকছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায়। আর এখন এ অঞ্চলের মানুষ শুধু অপেক্ষার প্রহর গুণছেন কবে আনুষ্ঠানিকভাবে পায়রাবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ক্লিয়ারিং এ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্সি তাদের ব্যবসার সম্প্রসারণ ঘটাতে জায়গা-জমি কিনেছেন। গড়ে উঠেছে একাধিক শ্রমিক সংগঠন। এমনকি পায়রাবন্দরে চাকরি দেয়ার কথা বলে একটি প্রতারক চক্র কয়েক যুবকের লাখ লাখ টাকাও হাতিয়ে নেয়ার মতো প্রতারণা ঘটেছে। মোট কথা পায়রাবন্দরকে ঘিরে বিরাজ করছে সাগরপাড়ের কলাপাড়া অঞ্চলের মানুষের মাঝে এক ধরনের উচ্চাকাক্সক্ষা।
×