ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

কবে আমরা সুরক্ষা বলয় তৈরি করব?

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

কবে আমরা সুরক্ষা বলয় তৈরি করব?

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সুনাম এখন বহুমুখী। অস্ট্রেলিয়ায় এক সময় অপরিচিত অচেনা এবং কথা উঠলেই ‘নেক্সট টু ইন্ডিয়া’ বলা এই দেশটি ধীরে ধীরে তার অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বা চেইন শপে ঢুকলেই বাংলাদেশের পণ্য চোখে পড়বে। গার্মেন্টস সেক্টরে চাইনিজ, ইন্দোনেশিয়ান, ভারতীয় ও অন্যদের হটিয়ে এভাবে জায়গা করে নেয়াটা সহজ ব্যাপার নয়। কিন্তু তাই হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় বাণিজ্য সম্ভাবনা ও নিজেদের অবস্থান পোক্ত করার পাশাপাশি ক্রিকেটেও বাংলাদেশ এখন অপরিচিত বা উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। কিছুদিন আগে নিরাপত্তার প্রশ্নে একদিনের খেলা বাতিল করায় আমরাও স্তম্ভিত হয়েছিলাম। তার অব্যবহিত পরই অস্ট্রেলিয়ান সকার দল গেল বিশ্বকাপের নির্বাচনী খেলায় অংশ নিতে। তখন স্বাভাবিক কারণেই এক যাত্রায় পৃথক ফলের বিষয়টা সামনে এসে দাঁড়াল। ক্রিকেটারদের নিরাপত্তাজনিত অসুবিধা থাকলে ফুটবলারদের বেলায় কেন তা থাকবে না? এবার আবারও আইসিসি আয়োজিত অনুর্ধ উনিশের খেলায় বাংলাদেশ সফর স্থগিত অথবা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে অসি ক্রিকেট। এ দেশের একজন বিশ্বস্ত ও গণতান্ত্রিক নাগরিক হিসেবে এই নিষেধের বিপক্ষে ঢালাওভাবে বলাটা যৌক্তিক মনে করি না, কোন না কোন কারণ নিশ্চয়ই প্রভাব ফেলছে। এ কারণের পেছনে দায়ী যে জঙ্গীবাদ ও উগ্র রাজনীতি তাকে নির্মূল না করা পর্যন্ত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ইমেজের পারদ ওঠানামা করতে থাকবে। আজ যেমন অস্ট্রেলিয়া বলছে থার্টিফার্স্টের রাতে হামলার আশঙ্কা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যও কিন্তু সতর্ক করে দিয়েছিল। সরকারের সতর্ক পদক্ষেপ, প্রশাসনের কঠোরতা আর দৈব আশীর্বাদে খারাপ কিছু ঘটেনি, তবে ঘটতে যে পারত সে তো সতর্কবাণীতেই স্পষ্ট ছিল। খোলা জায়গায় মিলন সমাবেশ নিষিদ্ধ বা উৎসব করার বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা তাতেই বোঝা যায় শত্রু ও দুশমনরা তৎপর। বাংলাদেশে এই ধারার আশ্রয়দাতা রাজনীতির নাম জাতীয়তাবাদী রাজনীতি। উগ্র জাতীয়তাবাদের জেল্লা আর জোব্বা গায়ে পরিধান করে তারা বছরের পর বছর ফায়দা লুটেছে। একটা সময় এমনও মনে হচ্ছিল, এর হাত থেকে বুঝি আর নিস্তার নেই। সে জায়গাটায় এমন ধস আর রাজনীতিতে এমন ব্যর্থতার চাপে তারা দিশাহারা হয়ে সন্ত্রাস ও ভয় দেখানোর রাস্তা বেছে নিয়েছে। ষোলো কোটি মানুষের দেশে দু-একটা অঘটন ঘটা অস্বাভাবিক নয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোয় আকছার এসব ঘটে থাকে। পাকিস্তানের অবস্থা তো লিভিং হেল বা জ্বলন্ত দোজখ। ভারতেও এসব ঘটনা কম কিছু ঘটে না। পার্থক্যÑ এই আমাদের ঘরের শত্রু বিভীষণ-মীরজাফররা যতœ করে এগুলোকে বড় করে তোলে, মিডিয়ার হাতে তুলে দেয়। এদের অবৈধ অর্থ আর লবিংয়ের দৌরাত্ম্যে অনেক কিছু বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। কে জানে, এরাই তিলকে তাল বানিয়ে দেশ ও সমাজের হাতে তুলে দিচ্ছে কি-না। জেনেছিলাম চোস্ত ইংরেজী বলতে জানা বিলেতে বড় হওয়া এক প্রবাসী বাংলাদেশী নারী ব্যারিস্টার নাকি নানা দেশে গিয়ে লবিং করে বুঝিয়ে দিচ্ছিল, এই সরকার ও বিচার ব্যবস্থা কতটা অনিরপেক্ষ, কতটা কথিত জালিম। প্রশ্ন হচ্ছে, শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশে যে ক্লিনজিং চলছে, ইতিহাসকে যেভাবে মুক্ত-বিমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করে তোলা হচ্ছে তার ফল কি শুধু আমরাই ভোগ করব? এর এক বিরাট অংশ যা সভ্য দেশ ও জাতির এ্যাকাউন্টে। যারা আমাদের থার্টিফার্স্ট নাইটকে আতঙ্কের বলে চিহ্নিত করেন, যারা খেলোয়াড় পাঠানোকে ঝুঁকি নেয়া মনে করেন, তাদের কানে বা প্রাণে আশা-জাগানিয়া কাজ করার মানুষ কিন্তু দেখা যায় না। তাদের কেউ জানায় না আমরা বিচার করে শাস্তি না দিলে, জঙ্গীদের দমন না করলে এই জনপদ অশান্তি ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য হয়ে উঠতে পারে। তখন কামান-বন্দুক-ট্যাঙ্ক নিয়ে ছোটাছুটি করে আমাদের মারতে যেতে তোমরা। তারচেয়ে এই কি উত্তম নয়? বাংলাদেশ হয়ে উঠছে কলঙ্কমুুক্ত ও নিরাপদ। আমাদের দূতাবাসগুলো কী করে জানি না। একেক রাজদূতের একেক ধরনের ভাব। কেউ নিজের গুণগানে ব্যস্ত, কেউ থাকেন তৈলমর্দনে আর কারও কারও মাটিতে পা পড়ে না। বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে নিয়োজিত যোগ্যদের লবিংয়ের কাজে লাগানো যেতে পারে। সরকার চাইলে মনিটরিং সেলের মাধ্যমে এদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারে। দেশে দেশে এই নেটওয়ার্ক থাকলে বিদেশীদের ভেতর যে অস্পষ্ট ও অস্বচ্ছ ধারণা, বাংলাদেশ বিষয়ে সন্দেহ বা উদ্বেগ তা অনেকাংশে দূর হয়ে যাবে। কেন তা হয় না? কারণ, বাংলাদেশী দূত বা আমাদের প্রতিনিধিরা এখনও মান্ধাতার আমলের। তারা নিজেদের অনেক কিছু মনে করেন বটে, আসল কাজে হাত দেন না। অথচ আসল কাজটি তাদের সেভাবে ব্রিফ করা হয় না। যাই হোক, আমরা চাই বাংলাদেশের আসল পরিচিতি তুলে ধরা হোক। দেশ, জাতি ও উন্নয়নের স্বার্থে যে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল করা প্রয়োজন তার আসল রূপ এবং মদদদানকারীদের চিহ্নিত করতে পারলেও বিদেশে বা বিদেশীদের কাছে তুলে ধরা যায়নি। তাই হয়ত বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। এর অবসান চাই, জরুরী ভিত্তিতে বিস্তার না হলে কুয়াশা যাবে না।
×