ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হেমন্তময় সঙ্গীত সন্ধ্যা আইজিসিসিতে

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

হেমন্তময় সঙ্গীত সন্ধ্যা আইজিসিসিতে

গৌতম পাণ্ডে ॥ ‘আমার বাবার সুবাদে হেমন্ত মুখার্জীর জীবনের শেষ ৯ টি বছরের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছিল। তাঁর স্ত্রী বেলা মুখার্জীকে আমি মা বলে ডাকতাম। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে হয় ‘তোমায় খোঁজা শেষ হবে না মোর, যবে আমার জনম হবে ভোর’। এই নিয়ে আইজিসিসিতে আমি পঞ্চমবার এলাম। ছোট্ট এ পরিসরে ঘরোয়া পরিবেশে শ্রোতাদের গান শোনাতে আমার খুব ভাল লাগে। আমি বেশিরভাগ হেমন্ত মুখার্জীর গান করে থাকি। আজ আপনাদের তাঁরই গান গেয়ে শোনাবো এবং প্রয়াত এই গুণী শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাবো’ গুলশানের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রয়াত শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান পরিবেশনের পূর্বে কথাগুলো বলেন ভারতের প্রখ্যাত শিল্পী সৌমেন অধিকারী। শুরুটা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের গান দিয়ে। তাঁর দরাজ গলায় ‘তুমি রবে নিরবে হৃদয়ে মম’ গানের মধ্যদিয়ে যেন বন্দনা করে নিলেন তাঁর আরাধ্য সুরস্রষ্টাকে। মিলনায়তনভর্তি শ্রোতা নি:শব্দে, নিবিষ্ট চিত্তে শুনলেন তার বন্দনা। অনুষ্ঠানে দুই বাংলার বেশ কিছু গুণী সঙ্গীতজ্ঞও উপস্থিত ছিলেন। এরপর গাইতে শুরু করলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যয়ের গান। কোন কোন গানের সঙ্গে জীবনের যে স্মৃতি জাড়িয়ে আছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে, তারও কিছু বর্ণনাও দিলেন শিল্পী। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথা ও হেমন্তের সুরে গাইলেন ‘আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি’। অসাধারণ সুর নৈপূন্যে পরিবেশন করেন ‘এই রাত তোমার আমার, ওই চাঁদ তোমার আমার শুধু দুজনের’। মাত্র ৬টি লাইনের এ গান সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয় না ছুঁয়ে পারার উপায় নেই। এর পরেরটি ছিল গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের লেখা ও হেমন্তের সুরে দুই বাংলারই জনপ্রিয় গান ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে’। সলিল চৌধুরীর কথা ও সুরে গাইলেন ‘ধিতাং ধিতাং বলে এই মাদলে তান তোলে’। পুলক বন্দোপাধ্যায়ের কথা ও হেমন্তের সুরে ‘কতদিন পরে এলে একটু বস তোমায় অনেক কথা বলার ছিল যদি শোন’ গানটি পরিবেশনার পর পুরো মিলনায়তনজুড়ে বাহ! বাহ! এক শব্দ ধ্বণিত হচ্ছিল। সাথে সাথে শিল্পী গাইলেন মুকুল দত্তের লেখা ও হেমন্তের সুরে ‘নিঝুম সন্ধ্যায় পান্থ পাখিরা বুঝিবা পথ ভুলে যায়’। শিল্পী সৌমেন অধিকারী বলেন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান শুরু বাংলাতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। হিন্দিতেও তার অনেক গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমি বাংলার পাশাপাশি তার কিছু হিন্দি গানও পরিবেশন করব। তিনি গাইলেন ‘না তুম হামি জান’। তার পরের পরিবেশিত গান হলো- ওগো কাজল নয়না হরিনী, আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা, আপনা দিল তো হামারা, এতদিন পরে এলে একটু বস, ওগো মেঘ তুমি উড়ে যাও কোন ঠিকানায়, যদি জানতে চাও তুমি এ ব্যাথা, মাগো ভাবনা কেন। সদস্য প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী সুবির সেনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তার গাওয়া ‘সারাদিন তোমায় ভেবে হলো না আমার কোন কাজ’ গানটি পরিবেশন করেন। এরপর তিনি একে একে হেমন্তের আরও কিছু জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন। এগুলো হচ্ছে-এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকেনাতো মন, কাশি দেখি মথুরা দেখি, যাবার আগে কিছু বলে গেলে না (বাংলাদেশে এসে শেষবারের মতো গানটি গেয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়) এবং শেষ পরিবেশনা ছিল ‘আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে ক্লান্ত পাখির কুজন কাকলি ঘিরে আগামী পৃথিবী কান পেতে তুমি শোন’। শিল্পীর সঙ্গে তবলা সঙ্গত করেন লন্ডন প্রবাসী সেন্ডিমানি।
×