ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সান্তাহারে ফের দিনভর তাণ্ডব

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

সান্তাহারে ফের দিনভর তাণ্ডব

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস/নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ ও সান্তাহার ॥ বগুড়ার সান্তাহারে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও ব্যাটারিচালিত থ্রিহুইলার (ইজিবাইক) মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত আরেক শ্রমিক শনিবার ঢামেক হাসপাতালে মারা গেছে। তার নাম সোহাগ হোসেন (২৮)। সে সিএনজি চালিত অটোরিক্সার শ্রমিক। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল দুই। এর আগে শুক্রবারের সংঘর্ষে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মারা যান। আহতের মধ্যে অলোক কুমার ও শামীম নওগাঁ হাসপাতালে এবং বাসেদুল রাজশাহীতে চিকিৎসাধীন আছে। শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সান্তাহারে চলেছে তা-ব। ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শহর জুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলো জাতীয় পার্টি সান্তাহার পৌর শাখার সভাপতি আব্দুল লতিফ, সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, মন্টু, ইজিবাইক শ্রমিক সজল হোসেন ও সজল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পর সান্তাহার পুলিশ ফাঁড়ির সাব ইন্সপেক্টর সানোয়ার হোসেন ও সহকারী সাব ইন্সপেক্টর আব্দুল খালেককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শনিবার সকালে নিহত যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসমলামের গ্রামের বাড়ি সান্দিরা গ্রামের হাজারো মানুষ চারদিকে থেকে সান্তাহারে প্রবেশ করতে থাকে। এই অবস্থায় এলাকার সকল দোকান পাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কে বাসা বাড়ির লোক ঘর থেকে বের হয় না। বিক্ষুব্ধ লোকজন সড়কের দুই ধারের বন্ধ দোকান পাটে লাঠিসোঁটা দিয়ে হামলা করে। দোকানের বাইরের বিদ্যুত বাতি বৈদ্যুতিক মিটার ভেঙ্গে ফেলে। রোষানল থেকে রক্ষা পায়নি সান্তাহার রেলওয়ে জংশনের জাহেদুলের পুরনো টি স্টল। ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। স্টেশনের কাছেই পৌর যুবলীগের সভাপতি ইজিবাইক মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা ছুটুর গ্রামীণ ফুডসের দোকান, মডার্ন হোমিও হল, নওগাঁ রোডে আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলামের দোকান পুড়িয়ে দেয়া হয়। বিক্ষুব্ধরা দৈনিক বাজার, কাঁচা বাজার, হাটখোলা বাজারের দোকান পাট ভাংচুর করে। শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় কোন যানবাহন চলেনি। এইদিন সান্তাহার জংশন স্টেশনে ট্রেনের যাত্রীরা নেমে যার পর নেই বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে। কোন যানবাহন না পাওয়ায় তারা স্টেশনের প্লাটফর্মে অনেকটা সময় অপেক্ষা করে। ভাংচুরের পর লোকজন শহরে মিছিল করতে থাকে। এ সময় তাদের কিছু অংশ সান্দিরা গ্রামে নিহত শফিকুলের জানাজায় অংশ নেয়। পুরা শহর থমথমে অবস্থার মধ্যে বিকালে রেলগেটের কাছে উপজেলা যুবলীগের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করার পর অবস্থার অবনতি হতে পারে এই শঙ্কায় সমাবেশ বাতিল করা হয়। বিকালের পর গোটা শহরে নিস্তব্ধতা নেমে আসে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শহরের পরিস্থিতি শান্ত ছিল। ঘটনার নেপথ্যে শুক্রবারের সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও টেম্পো এবং ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলার মালিক শ্রমিকদের আধিপত্য বিস্তারের সঙ্গে উভয় সমিতির একীভূত করা নিয়ে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেন দরবার চলছিল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এর আগেও উভয় পক্ষের ধাওয়া হয়েছে। দুইটি সংগঠনের নেতৃত্বের মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং বিচ্ছিন্নভাবে বিএনপিও আছে। ঘটনার আগের দিন উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া হয়েছে। বাগবিত-া হয়েছে। উভয় সংগঠনই মূলত আধিপত্য বিস্তারকে প্রাধান্য দেয়ায় একীভূত হয়নি। আবার কোন সমঝোতাও হয়নি। যার ফলে বিস্ফোরন্মুখ দুইটি সংগঠনই হার্ড লাইনে গিয়ে সংগর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে নিহত হয় দুইজন। আহত কয়েকজন। নিহত যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম গেল পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম রাজার রড় ভাই। এই বিষয়টি নিয়েও চাপা আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে সংঘর্ষের মূল কারণ যে দুইটি সংগঠনের আধিপত্য এবং একীভূত করা নিয়ে তা পরিষ্কার।
×