ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোন বাংলাদেশী আটক হওয়ার খবর নেই

যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কারে অভিযান- স্রেফ গুজব

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কারে অভিযান- স্রেফ গুজব

মাহফুজুর রহমান, নিউইয়র্ক থেকে ॥ আমেরিকার অবৈধ অভিবাসীদের অবিলম্বে বহিষ্কারের লক্ষ্যে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে হোমল্যান্ড কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীরাও এই অভিযানের মধ্যে পড়তে পারেন। নিউইয়র্কের কোন কোন বাংলা সংবাদ মাধ্যম এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বাংলাভাষী কর্মীরা এ নিয়ে যে ভীতিকর পরিস্থিতির বর্ণনা দিচ্ছেন যদিও তার কোন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং ৬ জানুয়ারি বুধবার ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ -‘জঁসড়ৎং ড়ভ ওসসরমৎধঃরড়হ জধরফং ঝঃড়শব ঋবধৎ রহ ঘবি ণড়ৎশ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে বলেছে নিউইয়র্কজুড়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের হানা, রাস্তাঘাটে আইডি চেক এবং হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস চেক করার ঘটনা নিছক গুজবই, এর কোন ভিত্তি নেই। আর এই গুজবের ডালপালা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় বিশেষ করে সেন্ট্রাল আমেরিকার কয়েকটি দেশ (আল সালভেদর, হন্ডুরাস ও গুয়াতেমালা) থেকে আসা বৈধ কাগজপত্রহীনরা শুধু নিউইয়র্ক নয়, সারা আমেরিকায় আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন। নিউইয়র্ক টাইমস তাদের দীর্ঘ প্রতিবেদনে নিউইয়র্কে ‘চরম গুজব’ ছড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে বলেছে তারা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে এবং শুধু সেন্ট্রাল আমেরিকার কিছু দেশের নাগরিক যারা ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারির পর তাদের সন্তান নিয়ে এদেশে এসেছে তাদের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হচ্ছে। ফলে গত ২ ও ৩ জানুয়ারি শনি ও রবিবার জর্জিয়া, টেক্সাস, নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেটের বিভিন্ন শহরে অভিযান চালিয়ে এমন ১২১ অবৈধ ইমিগ্র্যান্টকে ডিপোর্টের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ। ২০১৪ সালে সেন্ট্রাল আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে শিশু সন্তানসহ যারা বেআইনীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর আশ্রয় চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন মূলত তাদের গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে এ অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি জেব জনসন। ৪ জানুয়ারি সোমবার জে জনসন মিডিয়াকে বলেন, ইমিগ্রেশন কোর্ট যাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ করেছে, সে সব অবৈধ ইমিগ্র্যান্টকে যত দ্রুত সম্ভব গ্রেফতার ও বহিষ্কারের এ অভিযান সর্বত্র পরিচালিত হচ্ছে। এদিকে নিউইয়র্কভিত্তিক দক্ষিণ এশীয়দের স্বার্থ নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ড্রামের এক কর্মকর্তা ফৌজিয়া খান সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, নিউইয়র্কের বিভিন্ন বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকায় এ রকম গ্রেফতার অভিযান ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। আমেরিকার অন্যান্য শহর থেকেও তারা (ড্রাম) বহিষ্কার অভিযানের খবর পেয়েছেন। তবে অনুসন্ধানে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত কোন বাংলাদেশীকে নিউইয়র্ক থেকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে আমরা নিউইয়র্কের ল’ফার্ম রাম চীরাথের লিগ্যাল এসিস্ট্যান্ট নাসরিন আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোন ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই। কারণ এ বিষয়ে কোন আইন পাস হয়নি যে হুট করে বাংলাদেশীদের ধরপাকড় করা হবে। বিষয়টা অনেকটা গুজবই বলা যায়। নিউইয়র্কে সেন্ট্রাল আমেরিকার অধিবাসীদের ধরার বিষয়টিও সঠিক নয় বলে জানান নাসরিন আহমেদ। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতর বলছে, শুধু ২০১৪ সালেই এক লাখ অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্র্রে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে বিপুলসংখ্যক শিশু-কিশোর রয়েছে। তাদের সবাইকে পর্যায়ক্রমে বহিষ্কার করা হবে। অন্যদিকে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছরের জুলাই থেকে আবারও টেক্সাসের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে শিশু পাচারের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যাদের সঙ্গে অভিভাবক থাকে না। আল সালভেদর, হন্ডুরাস ও গুয়াতেমালার লোকজন তাদের শিশুদের সীমান্তের ভেতরে ঢুকিয়েই কেটে পড়ছেন। এমন অমানবিক কর্মকা-ে উদ্বিগ্ন সীমান্তরক্ষীরাও। গত ২৪ নবেম্বর পর্যন্ত এমন শিশুদের ৯০৫ অভিভাবকের আবেদন নাকচ করেছেন ইমিগ্রেশন জজ। দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে শিশু সন্তানসহ এসব অভিভাবক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় ধরা পড়েন। তাদের রাখা হয় ডিটেনশন সেন্টারে। সে সময় তারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। তাদের আবেদন বিবেচনাধীন অবস্থায় তাদের প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু আদালত সে আবেদন চূড়ান্ত নাকচের সময় তারা অনুপস্থিত ছিলেন। এ সংখ্যা হচ্ছে ৭২৬। তারা গা ঢাকা দিয়েছেন। এজন্যই তাদের খোঁজা হচ্ছে। ১৫৬ অভিভাবক আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং তাদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি দেয়া হয়েছে। গা ঢাকা দেয়া ৭২৬ জনের মধ্যে ১২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বাকিদের গ্রেফতার করতেই মূলত সাঁড়াশি গ্রেফতার অভিযান পরিচালিত হচ্ছে এবং এই অভিযানকে অতিরঞ্জিত করে সারা আমেরিকায় গ্রেফতার আতঙ্কসহ বিভিন্ন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে বৈধ কাগজপত্রহীনদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করা হচ্ছে বলে নিউইয়র্কের কোন কোন সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন নিউইয়র্কের নানা শ্রেণী-পেশার বাংলাদেশী অভিবাসীরা।
×