ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক দুর্ঘটনায় গত বছরে ৮৬৪২ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

সড়ক দুর্ঘটনায় গত বছরে ৮৬৪২ জনের প্রাণহানি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদায়ী বছরে সারাদেশে ৬ হাজার ৫৮১ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে ৮ হাজার ৬৪২ জনের। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ২১ হাজার ৮৫৫ জন। সব মিলিয়ে ৩০ হাজার ৮৯৭ জন যাত্রী, চালক ও পরিবহন শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে নবেম্বরে। ডিসেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি নিহতের সংখ্যা ৬৯৮ জন। এছাড়াও ২০১৫ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২২১ চালক, শ্রমিক ও যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ৪৮৬জন। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির ‘বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবদেন-২০১৫’ এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী। প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ১৪টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে দেয়া হয়েছে ১০ দফা সুপারিশ। দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল। এর পরপরই রয়েছে, বাস, নসিমন/করিমন, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। আক্রান্তের দিক থেকে পথচারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আহতদের মধ্যে হাত পা হারিয়েছে বা অন্য কোন অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ১ হাজার ৩০৫ জন। এসব দুর্ঘটনার সিংহভাগই পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দারিদ্র্যের কাতারে। ২০১৫ সালে ১ হাজার ১৮৫টি বাস, ১ হাজার ৫৬টি ট্রাক-কার্ভার্ড ভ্যান, ৮৭২টি হিউম্যান হলার, ৮৫২টি প্রাইভেট কার- মাইক্রোবাস, ১ হাজার ৬৭৮টি অটোরিক্সা, ১ হাজার ৭৭১টি মোটরসাইকেল, ১ হাজার ৭১টি ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা ও ১ হাজার ৩৩টি নসিমন-করিমন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। ‘এসব দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী, ৩০৫ জন শিক্ষক, ১৩৩ জন সাংবাদিক, ১০৯ জন ডাক্তার, ১২৪ জন আইনজীবী, ১০৬ জন প্রকৌশলী, ৫৩৫ জন পরিবহন শ্রমিক ও ৪১৯ জন চালক, ২৮০ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ৮০১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ২ হাজার ২৪১ জন পথচারী, ২৬১ জন সহকারী কর্মকর্তা কর্মচারী, ১ হাজার ৬৭৭ জন নারী, ১ হাজার ১২২ জন শিশু সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ৫৬ ভাগ, শহর এলাকায় ২৩ ভাগ, গ্রাম বা ফিডার রোডে ২১ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে শহর এলাকা ও গ্রামে টাহ বাজার এলাকায় ফুটপাত দখলের কারণে এবং বাস বে না থাকায় পথচারী মৃত্যুর হার ৬০ ভাগে পৌঁছেছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহতের প্রায় ৫২ ভাগেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এছাড়াও মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫৭ ভাগ, খাদে পড়ে ১৩ ভাগ, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ১৩ ভাগ, অন্যান্য কারণে আরও ১৭ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সারাদেশে চলাচলরত তিন লাখ ফিটনেসবিহীন যানবাহন, ১০ লাখ অবৈধ নসিমন-করিমন-ভটভটি-ইজিবাইক সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে পর্যবেক্ষণে ওঠে এসেছে। দুর্ঘটনার কারণ ॥ সড়ক দুর্ঘটনার ১৪টি কারণের মধ্যে রয়েছে, ফুটপাথ দখল, ওভার টেকিং-ওভার স্পিড ও ওভারলোড, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, রাস্তার নির্মাণ ত্রুটি, গাড়ির ত্রুটি, যাত্রীদের অসতর্কতা, ট্রাফিক আইন না মানা, সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জেব্রা ক্রসিং না থাকা-চালকরা জেব্রা ক্রসিং না মানা, চলন্ত অবস্থায় চালকের মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মহাসড়কে স্বল্পগতির যান চলাচল, মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো ও মহাসড়ক ক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন। সুপারিশ ॥ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যাত্রী কল্যাণ সমিতির ১০ দফা সুরিশসমূহের মধ্যে রয়েছে, ট্রাফিক আইন ও মোটরযান আইন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রচারের ব্যবস্থা, গণমাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ক প্রচার চালানো, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাটবাজার উচ্ছেদ ও ফুটপাথ দখলমুক্ত করা। এছাড়াও রাস্তায় ট্রাফিক চিহ্ন স্থাপন ও জেব্রা ক্রসিং অঙ্কন করা, চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, চালকদের বিশ্রাম ও কর্মবিরতির সুযোগ নিশ্চিত করা, মোটরযান আইন যুগোপযোগী করা এবাং গাড়ির ফিটনেস প্রদান পদ্ধতি ডিজিটালাইজড করা, সরকারের পক্ষ থেকে স্বজনহারা পরিবারগুলোর দায়ভার নেয়া, জাতীয় মহাসড়কে স্বল্প ও দ্রুত গতির যানবাহন চলাচলের জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ট্রামা সেন্টারগুলো চালু করা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, লায়ন গনি মিয়া বাবুল, কবির চৌধুরী তন্ময়, কাজী মাসুদ আকন্দ, মহিউদ্দিন আহমেদ, আমানউল্লাহ মাহমুদ প্রমুখ।
×